রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে সাক্ষাতের পর আচমকা দিল্লি সফরে রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়। শনিবার সকালে বিমানে দিল্লি রওনা দেন তিনি। তবে তাঁর সফরসূচি অজানা। সাধারণত নিজের কর্মকাণ্ডের ইতিবৃত্ত টুইটারে তুলে ধরেন রাজ্যপাল। কিন্তু শনিবারের দিল্লি সফর নিয়ে একটি শব্দও খরচ করেননি তিনি। বরং, আক্ষরিক অর্থেই সাতসকালে করা দু’টি টুইটে তিনি লিখেছেন গীতার বাণী, ‘কর্মণ্যেবাধিকারস্তে, মা ফলেষু কদাচন’, অর্থাৎ ‘কাজ করে যাও, ফলের আশা করো না।’
বুধবার সকালে বিমানে ওঠার আগে টুইটারে ধনখড় লিখেছেন গীতার শ্লোক। তার সঙ্গেই যোগ করেছেন ওই শ্লোকের অনুবাদ, ‘নিজের কর্তব্য করে যাও, কিন্তু ফলের আশা করো না। যখন কাজ করছ, তখন অহঙ্কার ত্যাগ করো।’ কোন ‘কর্তব্য’ পালনে রাজ্যপাল এই মুহূর্তে দিল্লি সফরে তা নিয়ে জল্পনা শুরু হয়েছে। শনিবার আরও একটি টুইটে ‘গীতা’র ভূয়সী প্রশংসা করেছেন তিনি। লিখেছেন, ‘আমাদের সময়ে ভাগবত গীতা হল একটি কালোত্তীর্ণ পথপ্রদর্শক।’ ‘গীতা’ ধর্ম এবং জাতির ঊর্ধ্বে বলেও ব্যাখ্যা করেছেন ধনখড়। এর সঙ্গেই তাঁর উপলব্ধি, ‘এই চিন্তাভাবনা শান্তি এবং সম্প্রীতির জন্ম দেবে। কঠিন সময়ে নিষ্ক্রিয় থাকা কোনও অজুহাত থাকতে পারে না। এটা মানবতা এবং সভ্যতাকে কুরে কুরে খেয়ে ফেলে।’
ঘটনাচক্রে, রাজ্যে ভোট পরবর্তী ‘হিংসা’ নিয়ে ধারাবাহিক ভাবে অভিযোগ জানিয়ে আসছেন রাজ্যপাল। এই বিষয়টিকে সামনে রেখে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে সফরও করেন তিনি। তা নিয়ে নবান্নের সঙ্গে রাজভবনের সঙ্ঘাতের আবহও তৈরি হয়। এই পরিস্থিতির মধ্যেই গত বুধবার নবান্ন থেকে বেরিয়ে রাজভবনে যান মুখ্যমন্ত্রী মমতা। রাজ্যপালের সঙ্গে প্রায় দু’ঘণ্টা একান্তে বৈঠক হয় তাঁর। রাজ্যপালের সঙ্গে মমতার কী নিয়ে আলোচনা হয়েছে, সে বিষয়ে স্পষ্ট কিছু জানা যায়নি। তবে সেই সাক্ষাতের পরেই নতুন বিতর্ক তৈরি হয়েছে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের রিপোর্টে। রাজ্যপাল এবং মুখ্যমন্ত্রীর সাক্ষাতের পর দিন, অর্থাৎ বৃহস্পতিবার কলকাতা হাই কোর্টে পেশ করা ওই রিপোর্টে রাজ্যের পুলিশ, প্রশাসনের বিরুদ্ধে কড়া ভাষায় মন্তব্য করা হয়েছে। রয়েছে কয়েকটি পর্যবেক্ষণ। এ ছাড়া কয়েকটি সুপারিশও করা হয়েছে। ওই রিপোর্টে ‘ভোট পরবর্তী হিংসা’র উল্লেখ করে রাজ্যের এক মন্ত্রী-সহ শাসকদলের একাধিক বিধায়ক এবং নেতাকে ‘কুখ্যাত দুষ্কৃতী’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। প্রত্যাশিতভাবেই এ নিয়ে সরব হয়েছেন মুখ্যমন্ত্রীও। বিষয়টি ‘বৈষম্যমূলক রাজনীতির চক্রান্ত’ বলে ব্যাখ্যা করেছেন তিনি।
তৃতীয় বারের জন্য মুখ্যমন্ত্রী পদে শপথ নেওয়ার পর এ মাসেই প্রথম দিল্লি যাওয়ার কথা মমতার। মনে করা হচ্ছে জুলাইয়ের শেষ সপ্তাহে দিল্লি সফর করতে পারেন তিনি। তখন সময় পেলে তিনি রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন বলেও জানিয়েছেন মমতা। তার আগেই আচমকা ধনখড়ের দিল্লি সফর অত্যন্ত ‘তাৎপর্যপূর্ণ’ বলেই মনে করা হচ্ছে।