—ফাইল চিত্র।
কোনও কর্মসূচি ‘না থাকা’য় অধিবেশনের মাঝপথে নজিরবিহীন ভাবে দু’দিনের জন্য মুলতবি রাখা হল বিধানসভা। আর তা নিয়েও বিরোধ বাধল রাজ্যপালের সঙ্গে।
অধিবেশন মুলতুবি রাখার সিদ্ধান্তের পিছনে রাজভবনের ভূমিকাকে মঙ্গলবার দায়ী করেছেন স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর বক্তব্য, ‘‘রাজ্যপালের ছাড়পত্র-সহ বিল বিধানসভায় না পৌঁছনোয় চলতি অধিবেশনে আলোচনার জন্য তা পেশ করা গেল না। তাই অধিবেশন বন্ধ রাখতে হল।’’ কিন্তু এই যুক্তি খণ্ডন করে কিছুক্ষণের মধ্যেই রাজভবন বিবৃতি দিয়ে জানিয়ে দিয়েছে, রাজ্যপালের দিক থেকে কোনও বিলম্ব ঘটেনি। রাজ্য তফসিলি জাতি ও জনজাতি কমিশন সংক্রান্ত নতুন বিল রাজভবনে পৌঁছয় ২৯ নভেম্বর। রাজভবনের তরফে এ দিনই অনগ্রসর শ্রেণিকল্যাণ দফতরের সচিবকে চিঠি দিয়ে বলা হয়েছে, কোনও আধিকারিকের কাছ থেকে রাজ্যপাল বিলের ব্যাখ্যা শুনতে চান। আগে পাশ হওয়া বিল ধরে ধরেও রাজ্যপাল দেখিয়েছেন, সংশ্লিষ্ট দফতরগুলির কাছে তিনি যা জানতে চান, সময়মতো তাঁকে তা জানানো হচ্ছে না। গণপ্রহার প্রতিরোধ বিল নিয়ে বিতর্কের প্রেক্ষিতে বিধানসভার কার্যবিবরণী দেখতে চাওয়া হলেও তা রাজভবনে পাঠানো হয়নি। সরকার পক্ষের অনীহার জন্যই বিল আটকে থাকছে বলে রাজভবনের দাবি।
সাংবাদিকদের এই সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তরেও রাজ্যপালের মন্তব্য, ‘‘পরিষদীয় বিষয়ে অনাবশ্যক কোনও বিলম্ব করেনি রাজভবন। সরকার গরুর গাড়ির মতো চললে আমি তো নিরুপায়!’’ রাজভবনের জবাবি বিবৃতির পরে অবশ্য সরকার পক্ষের তরফে কেউ মন্তব্য করতে চাননি। স্পিকার বলেন, ‘‘আমার যা বলার বিধানসভায় বলেছি। রাজ্যপাল আমাকে কিছু জানালে তখন বলব।’’
আরও পড়ুন: সেনেট আজ বসছে না, ব্যাখ্যা নয় ধনখড়কে
‘সংবিধান দিবস’ পালন উপলক্ষে দু’দিনের বিশেষ অধিবেশনের পরে ২৯ নভেম্বর থেকে সাধারণ অধিবেশন শুরু হলেও নোবেলজয়ী অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়কে অভিনন্দন জানিয়ে একটি প্রস্তাব ছাড়া কোনবিল আসতে পারে, সরকার পক্ষ তা জানাতে পারেনি। পরবর্তী আলোচ্য কিছু না থাকায় শেষ পর্যন্ত এ দিন স্পিকার জানিয়ে দেন, আজ, বুধ ও কাল, বৃহস্পতিবার অধিবেশন মুলতুবি থাকবে।
বিল-বিতর্ক
স্পিকারের বক্তব্য
রাজ্যপালের ছাড়পত্র না আসায় বিধানসভায় আলোচনার জন্য বিল পেশ করা গেল না। দু’দিন অধিবেশন বন্ধ রাখতে হচ্ছে।
রাজভবনের বক্তব্য
রাজ্যপালের তরফে কোনও বিলম্ব নেই। ‘দ্য ওয়েস্ট বেঙ্গল স্টেট কমিশন ফর দ্য শিডিউলড কাস্টস অ্যান্ড শিডিউলড ট্রাইব্স বিল, ২০১৯’ রাজভবনে পৌঁছয় ২৯ নভেম্বর। তার পরে ৩০ নভেম্বর ও ১ ডিসেম্বর ছুটি ছিল। রাজ্যপাল মঙ্গলবারই সরকারকে জানিয়েছেন, সংশ্লিষ্ট দফতরের কোনও আধিকারিক তফসিলি জাতি ও জনজাতিদের বিরুদ্ধে নৃশংসতা প্রতিরোধ আইনের সঙ্গে এই বিলটি সম্পর্কে ব্যাখ্যা দিলে ভাল হয়। অনগ্রসর শ্রেণিকল্যাণ দফতরের সচিবকে লিখিত ভাবেও বিষয়টি জানানো হয়েছে।
রাজভবনের বক্তব্যের পরে সরকার পক্ষের কেউ আর
মুখ খোলেননি।
তার পর থেকেই নজিরবিহীন এই ঘটনা নিয়ে রাজনৈতিক শিবিরে শোরগোল পড়েছে। বিরোধী বাম ও কংগ্রেস প্রশ্ন তুলেছে, রাজভবন থেকে বিল পেশের ছাড়পত্র যদি বিধানসভার কাছে না এসে থাকে, তা হলে আগেভাগে অধিবেশন ডেকে দেওয়া হল কেন? বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নানের বক্তব্য, ‘‘বিধানসভা চালানোর নামে ছেলেখেলা করা হচ্ছে! আগের অধিবেশন অনির্দিষ্ট কাল মুলতুবি করা হয়েছিল। এ বার বিল এসে না পৌঁছলেও আগের অধিবেশনের বকেয়া প্রশ্ন, মুলতুবি প্রস্তাব বা বেসরকারি প্রস্তাব নিয়ে অধিবেশন চালানোই যেত।’’ বাম পরিষদীয় নেতা সুজন চক্রবর্তীরও মন্তব্য, ‘‘বিয়েবাড়িতে অতিথিদের নেমন্তন্ন করে সরকার কনে খুঁজতে গিয়েছিল! কাজ ছাড়া অধিবেশন ডাকা অর্থহীন, দু’দিন মুলতুবি রাখাও যুক্তিহীন।’’
বিজেপি নেতা রাহুল সিংহও বলেছেন, ‘‘কোন বিল আসবে, কোনটা আসবে না, সে সব না জেনেই সরকার অধিবেশন বসিয়ে দিয়েছে। চূড়ান্ত অপদার্থ সরকার!’’ পরিষদীয়মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় অবশ্য বলেন, ‘‘রাজভবনে বিল আটকে থাকলে আমাদের কী করণীয় আছে?’’