পর্যটন যজ্ঞে দার্জিলিং এখন প্রায় দুয়োরানি

গন্ডগোলের খবর আপাতত নেই। তবু কখন কী ঘটবে, বলা যায় না। তাই দেশ-বিদেশের পর্যটকদের কাছে দার্জিলিং পাহাড়কে তুলে ধরতে এখনও ভরসা পাচ্ছে না পশ্চিমবঙ্গ পর্যটন দফতর। এবং ‘ডেস্টিনেশন ইস্ট’ শীর্ষক আন্তর্জাতিক পর্যটন সম্মেলনের পদে পদে দেখা যাচ্ছে তার প্রতিফলন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২০ জানুয়ারি ২০১৮ ০৪:০০
Share:

বাংলার পর্যটন-মানচিত্রে গন্তব্যের অমরাবতী সে। কিন্তু পাহাড়ের রানি সেই দার্জিলিং পশ্চিমবঙ্গের পর্যটনে এখনও খচখচে কাঁটাও।

Advertisement

পরিস্থিতি শান্ত। গন্ডগোলের খবর আপাতত নেই। তবু কখন কী ঘটবে, বলা যায় না। তাই দেশ-বিদেশের পর্যটকদের কাছে দার্জিলিং পাহাড়কে তুলে ধরতে এখনও ভরসা পাচ্ছে না পশ্চিমবঙ্গ পর্যটন দফতর। এবং ‘ডেস্টিনেশন ইস্ট’ শীর্ষক আন্তর্জাতিক পর্যটন সম্মেলনের পদে পদে দেখা যাচ্ছে তার প্রতিফলন।

বণিকসভা কনফেডারেশন অব ইন্ডিয়ান ইন্ডাস্ট্রিজ (সিআইআই) ও রাজ্য সরকারের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত ওই সম্মেলনের দ্বিতীয় তথা শেষ দিন ছিল শুক্রবার। এ দিন সকালে রাজারহাট নিউ টাউনের বিশ্ব বাংলা কনভেশন সেন্টারে রাজ্যের পর্যটনমন্ত্রী গৌতম দেবের বক্তৃতাতেও দার্জিলিঙের নাম উচ্চারিত হয়েছে নেহাতই অকিঞ্চিৎকর ভাবে। বরং মন্ত্রী তিস্তা ব্যারাজ লাগোয়া গজলডোবা, হুগলির বলাগড়ের সবুজ দ্বীপ, সুন্দরবনের ঝড়খালি এলাকায় প্রস্তাবিত নতুন পর্যটন কেন্দ্রগুলির উপরে গুরুত্ব আরোপ করে বেসরকারি উদ্যোগীদের আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘‘পর্যটনের জন্য আপনারা এখানে লগ্নি করুন। সরকার পরিকাঠামো তৈরি করে দেবে।’’

Advertisement

উদ্যোক্তাদের হিসেব অনুযায়ী এ বছর এই সম্মেলনে ৩০টি দেশের ১০০ জন ভ্রমণ ব্যবস্থাপক অংশ নিয়েছেন। তাঁরা এসেছেন আমেরিকা, ব্রিটেন, অস্ট্রেলিয়া, রাশিয়া, তাইল্যান্ড, বাংলাদেশ এবং পশ্চিম এশিয়ার বিভিন্ন দেশ থেকে। সম্মেলনে ওই বিদেশিরা পশ্চিমবঙ্গ পর্যটন দফতরের যে-স্টল দেখলেন, তাতে সুন্দরবন, পুরুলিয়া, শান্তিনিকেতন, দিঘা, দক্ষিণেশ্বর ও ডুয়ার্স থাকলেও দার্জিলিং অনুপস্থিত। পর্যটন দফতর সূত্রের খবর, দার্জিলিং নিয়ে বিদেশি অতিথিরা খুব বেশি খোঁজখবরও নিচ্ছেন না।

পর্যটনমন্ত্রী গৌতমবাবুও বলছেন, ‘‘পর্যটনে দার্জিলিংকে আবার আগের জায়গায় নিয়ে আসতে খানিকটা সময় লাগবে। এত তাড়াতাড়ি হারানো আস্থা ফেরানো যাবে না।’’

বিদেশিদের এই রাজ্যে ঘোরানোর আয়োজন করেন, রাজ্যের এমন এক ভ্রমণ ব্যবস্থাপক সংস্থার কর্ণধার দেবজিৎ দত্ত বলেন, ‘‘আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, জার্মানি, ফ্রান্সের যে-সব ভ্রমণ ব্যবস্থাপক সংস্থা দার্জিলিঙের জন্য পর্যটক পাঠায়, এই বছরের মাঝামাঝি পর্যন্ত তাদের প্রায় কেউই পর্যটক পাঠাচ্ছে না।’’ দেবজিৎবাবু জানান, বিশ্বের যে-কোনও প্রান্তে অস্থিরতা বা গন্ডগোল হলে বহু দেশ তাদের পর্যটকদের সতর্কবার্তা দেয়। ওই সংস্থার আধিকারিক তিথি বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘দার্জিলিং যেতে প্রায় কোনও দেশই নিজেদের পর্যটকদের উৎসাহ দিচ্ছে না। দার্জিলিংকে কেন্দ্র করে আমাদের ব্যবসা প্রায় ৮০ শতাংশ কমে গিয়েছে।’’

দার্জিলিঙের একটি হেরিটেজ হোটেলের জেনারেল ম্যানেজার শুভানা রাই বলেন, ‘‘আজ কিছু হচ্ছে না বটে। তবে কাল কী হবে, সেটা কেউ জানে না। কেউ গ্যারান্টি দিতে পারবে না যে, সব কিছু ঠিকঠাক থাকবে।’’ শুভানা মনে করেন, পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে দার্জিলিঙের মাথা তুলে দাঁড়াতে এক বছর তো বটেই, তার বেশিও লাগতে পারে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement