নির্ভয়া কাণ্ডে এক বার বেফাঁস মন্তব্য করে ভাল রকম হাত পুড়িয়েছিলেন তিনি। অশালীন ও উস্কানিমূলক মন্তব্যের পর তাপস পালের সমালোচনায় ইতি টানার কথা বলে ফের দলেই রোষের মুখে পড়লেন রাষ্ট্রপতি-পুত্র কংগ্রেস সাংসদ অভিজিৎ মুখোপাধ্যায়। আক্ষেপ ও অসন্তোষ জানিয়ে স্বয়ং প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী আজ জানিয়ে দিলেন, “অভিজিৎ-এর এ কথা বলা ঠিক হয়নি। এটা কখনওই দলের অবস্থান নয়।”
বিরোধীদের সম্পর্কে তাপস পালের কুরুচিকর মন্তব্য নিয়ে এখনও রাজনীতি ও জনরোষের আঁচ গনগনে। নিজের মন্তব্যের জন্য তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে চিঠি দিয়ে ক্ষমাও চেয়ে নেন তাপস। এর পরেই সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে অভিজিৎ বলেন, “তাপস তাঁর দলকে চিঠি দিয়ে ক্ষমা চেয়ে নিয়েছেন, বিতর্ক তাই এখানেই থামা উচিত।” তাঁর কথায়, অনেক সময় মুখ ফসকে অনেক কথা বেরিয়ে যায়। আমাদের অনেকেরই তা হয়।
অভিজিতের মন্তব্যই নতুন বিতর্কে ইন্ধন দিয়েছে। দিল্লিতে নির্ভয়ার গণধর্ষণের পর প্রতিবাদী বিক্ষোভকারীদের সম্পর্কে বেফাঁস মন্তব্য করেছিলেন রাষ্ট্রপতি পুত্র। দলের নির্দেশে পরে তাঁকে ক্ষমা চাইতে হয়েছিল। দাদার মন্তব্যের জন্য প্রকাশ্যে দুঃখপ্রকাশ করেছিলেন রাষ্ট্রপতি কন্যা শর্মিষ্ঠা মুখোপাধ্যায়ও। কিন্তু রাজ্যে কংগ্রেস যখন বিরোধী রাজনীতি করছে, তখন অভিজিৎ হঠাৎ কেন তৃণমূল সাংসদ তাপস সম্পর্কে সহানুভূতি দেখাতে গেলেন, তা নিয়ে অনেকেই সন্দিহান। প্রশ্ন উঠেছে, তা হলে কি তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়তে চাইছেন অভিজিৎ? দল কি তাঁকে এই দায়িত্ব দিয়েছে, নাকি সেটা নিজের প্রয়োজনে?
এ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে অভিজিৎ আজ বলেন, “যা বলেছি তা রেকর্ডে রয়েছে। অহেতুক জলঘোলা করা হচ্ছে কেন, বুঝতে পারছি না। তা ছাড়া এ ব্যাপারে দল আমার কাছে কোনও ব্যাখ্যা চায়নি।” অভিজিতের কথায়, দল চাইলে নিশ্চয়ই ব্যাখ্যা দেবেন, কিন্তু সংবাদমাধ্যমের কাছে ব্যাখ্যা দিতে তিনি প্রস্তুত নন।
তবে অভিজিতের মন্তব্য নিয়ে নিজের বিরক্তি গোপন করেননি প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী। তাঁর কথায়, “এই মন্তব্য দুর্ভাগ্যজনক। তাপস পাল যে ধরনের অশালীন ও উস্কানিমূলক মন্তব্য করেছেন, সে জন্য মানুষ তাঁকে ক্ষমা করেননি। তৃণমূলের এই সাংসদ সম্পর্কে মা-বোনেদের ঘৃণা ঝরে পড়ছে। কংগ্রেস কেন বলতে যাবে এই বিতর্ক বন্ধ হওয়া উচিত?” অধীরের কথায়, হাটে-বাজারে, ট্রামে-বাসে তাপসের বিরুদ্ধে মানুষ ক্ষোভ উগরে দিচ্ছেন। শাস্তিমূলক ব্যবস্থা না নিয়ে তৃণমূলনেত্রী যে ভাবে সস্নেহে তাঁকে মাফ করলেন, তাতেও মানুষ ক্ষুব্ধ। সেই স্রোতের বিরুদ্ধে হেঁটে কংগ্রেসের কী লাভ? প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি জানান, তাপসের এই মন্তব্যের প্রতিবাদে কংগ্রেস জেলায় জেলায় বিক্ষোভ কর্মসূচি নিয়েছে।
অভিজিতের কাছে কি কোনও ব্যাখ্যা বা কৈফিয়ত চাইবে দল? এ প্রশ্নের জবাবে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি জানান, “অবশ্যই ব্যাখা চাওয়া হবে। তা ছাড়া দলের সব সাংসদ-বিধায়ককেও এ কথা জানিয়ে দেওয়া হচ্ছে, কেউ যেন সংবাদমাধ্যমের কাছে আলটপকা কোনও মন্তব্য না করেন।”