Abdul Karim Chowdhury

দলের সঙ্গে দূরত্ব! বিধানসভার অধিবেশন এড়িয়ে যাচ্ছেন প্রবীণতম সদস্য আব্দুল করিম চৌধুরী

আব্দুল করিম চৌধুরীর ঘনিষ্ঠ বৃত্তের খবর, আগামী ২২ অগস্ট থেকে বিধানসভার বাদল অধিবেশনের দ্বিতীয়ার্ধেও তাঁর যোগদানের সম্ভাবনা ক্ষীণ। পঞ্চায়েত ভোটে দলের সঙ্গে বনিবনা না হওয়াতেই নাকি করিম এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৭ অগস্ট ২০২৩ ১১:৩৭
Share:

ইসলামপুরের তৃণমূল বিধায়ক আব্দুল করিম চৌধুরী। —ফাইল চিত্র।

তৃণমূল নেতৃত্বের সঙ্গে কি দূরত্ব বাড়াচ্ছেন আব্দুল করিম চৌধুরী? এমনই প্রশ্ন ঘুরছে শাসকদলের অন্দরে। পঞ্চায়েত ভোটের পর জুলাই মাসে বিধানসভার যে বাদল অধিবেশন বসেছিল, সেখানে যোগ দেননি ইসলামপুরের তৃণমূল বিধায়ক। অধিবেশনের প্রথমার্ধে তাঁর অনুপস্থিতি নজরে পড়েছিল তৃণমূল পরিষদীয় দলের। করিমের ঘনিষ্ঠ বৃত্তের খবর, আগামী ২২ অগস্ট থেকে বিধানসভার বাদল অধিবেশনের দ্বিতীয়ার্ধেও তাঁর যোগদানের সম্ভাবনা ক্ষীণ। পঞ্চায়েত ভোটে দলের সঙ্গে বনিবনা না হওয়াতেই নাকি করিম এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

Advertisement

করিম শিবিরের অভিযোগ, উত্তর দিনাজপুর জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব ‘একতরফা’ ভাবে পঞ্চায়েত ভোটে প্রার্থী চয়ন করেছিলেন। দলের তথা বিধানসভার প্রবীণতম সদস্য হওয়া সত্ত্বেও তাঁর মতামতকে ‘গুরুত্ব’ দেওয়া হয়নি। করিম শিবিরের বক্তব্য, তাঁর বিধানসভা এলাকাতেও তাঁর মতামত উপেক্ষা করেই প্রার্থী দিয়েছিলেন তৃণমূল জেলা নেতৃত্ব। যার ফলস্বরূপ ‘বাধ্য’ হয়ে তিনি নিজের অনুগামীদের ইসলামপুরে নির্দল প্রার্থী হিসেবে দাঁড় করিয়েছিলেন। যা নিয়ে তৃণমূল নেতৃত্বের ভর্ৎসনার মুখেও পড়তে হয়েছিল তাঁকে। কিন্তু পঞ্চায়েত নির্বাচনে বেশ কিছু নির্দল প্রার্থীকে জেতাতে পেরেছেন ইসলামপুরের প্রবীণ বিধায়ক।

বাবার বিধানসভার অধিবেশন এড়িয়ে যাওয়া প্রসঙ্গে করিমের পুত্র মেহতাব চৌধুরী বৃহস্পতিবার বলেন, ‘‘পঞ্চায়েত ভোটে যে ভাবে বাবার মতো নেতার মতামতকে গুরুত্ব না দিয়ে নিজেদের ইচ্ছামতো প্রার্থী দিয়েছিলেন জেলা তৃণমূলের শীর্ষনেতারা, তা তিনি মন থেকে মেনে নিতে পারেননি। তাই নিজের ক্ষোভের কথা বোঝাতেই তিনি বাদল অধিবেশনে যোগদান করেননি।’’ পাশাপাশি মেহতাব আরও বলেন, ‘‘আগামী ২২ অগস্ট থেকে বিধানসভার বাদল অধিবেশন আবার শুরু হচ্ছে। সেই অধিবেশনে বাবা যোগ দেবেন কি না তা-ও বলতে পারব না। কারণ, তাঁর মানসিক যন্ত্রণা কমেছে বলে আমার মনে হয় না।’’

Advertisement

উত্তরবঙ্গের রাজনীতি সম্পর্কে ওয়াকিবহালদের বক্তব্য, উত্তর দিনাজপুর জেলা তৃণমূল সভাপতি কানহাইয়ালাল আগরওয়াল এবং মন্ত্রী গোলাম রব্বানির সঙ্গেই মূলত বিরোধ করিমের। ইসলামপুরের বিধায়কের অভিযোগ ছিল, জেলা সভাপতি ও মন্ত্রীই তাঁর অনুগামীদের টিকিট দেননি। যদিও দুই নেতাই তাঁর অভিযোগকে গুরুত্ব দেননি। তাই নিজের অনুগামীদের ‘নির্দল’ হিসেবে খাড়া করে পঞ্চায়েত ভোটে ‘মুখরক্ষা’ করেন করিম। এখনও সেই ক্ষোভ ভুলতে পারছেন না তিনি। তাই বিধানসভার অধিবেশনে যোগ না দিয়ে নিজের ‘প্রতিবাদ’ নথিভুক্ত করছেন।

ঘটনাচক্রে, এই বাদল অধিবেশনেই বিধায়কদের মধ্যে শৃঙ্খলা আনতে পরিষদীয় মন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে এক কমিটি গঠন করেছে তৃণমূল। তৃণমূল পরিষদীয় দলও অধিবেশনে করিমের গরহাজির থাকার বিষয়টি নজরে রেখেছে। যদিও প্রকাশ্যে তারা ইসলামপুরের বিধায়ককে নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে নারাজ। তবে তৃণমূল পরিষদীয় দলের এক সদস্যের কথায়, ‘‘পঞ্চায়েত ভোটের সময় করিম দলের বিরুদ্ধে অবস্থান নিলেও বর্তমানে তিনি আর কোনও দলবিরোধী মন্তব্য করেননি। বিধায়ক হিসেবেও দলবিরোধী কোনও কাজ করেননি। তবে করিম যে আসছেন না, তা আমরা নজরে রেখেছি। এখনই ওঁর বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেওয়ার প্রয়োজন আছে বলে দল মনে করে না।’’ প্রসঙ্গত, তৃণমূলের অন্দরে করিমের তথাকথিত ‘বিদ্রোহ’ নতুন নয়। তাই তাঁর এ হেন মেজাজকে খুব বেশি গুরুত্ব দিতে নারাজ দলের একাংশ। উল্লেখ্য, পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় ১১ বার জিতে বিধায়ক হওয়ার কৃতিত্ব রয়েছে করিমের।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement