Durga Puja 2021

Sreebhumi: প্রসঙ্গ বুর্জ খলিফা দর্শন: ‘ঈর্ষার রাজনীতি’ দেখছেন অনেকে

অনেকের বক্তব্য, সাধারণত কলকাতার যে পুজোগুলি ধারাবাহিক ভাবে ভিড় টেনে আসছে, শ্রীভূমির এ বারের পুজো তাদের সকলকে ‘টেক্কা’ দিয়েছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৭ অক্টোবর ২০২১ ০৬:৪৬
Share:

ফাইল চিত্র

উৎসাহী পুজো দর্শনার্থীরা এখন মোটামুটি তিন ভাগে বিভক্ত। এক, যাঁরা শ্রীভূমির ‘বুর্জ খলিফা’ মণ্ডপ দেখেছেন। দুই, যাঁরা দেখেননি। এবং তিন, যাঁরা দেখতে চেয়েও শেষবেলায় প্রশাসনিক ‘নির্দেশে’র কারণে দেখতে পাননি। এঁদের ঘিরেই জমে উঠেছে পুজোর ‘রাজনীতি’ও।

Advertisement

রাজ্যের দমকল মন্ত্রী সুজিত বসুর শ্রীভূমি স্পোর্টিং ক্লাবের পুজো ভিড় এবং আলোচনার নিরিখে এ বার সুপারহিট। বিতর্ক এই পুজোকে আরও বেশি সামনে নিয়ে এসেছে। সুজিতের পুজোয় ভিড় বরাবরই হয়। তবে এ বার লাগামছাড়া। কোভিড পরিস্থিতিতে এই ধরনের ঠাসাঠাসি জনস্রোত কতদূর সঙ্গত, প্রশ্ন উঠতে শুরু করে সেখান থেকে। তারপর খোদ দমকল মন্ত্রীর পুজোর প্যান্ডেল কেন দমকলের নির্দেশকেও ‘লঙ্ঘন’ করবে, বিতর্ক শুরু হয় তা নিয়েও।

এ সবের সূত্রেই অনেকের বক্তব্য, সাধারণত কলকাতার যে পুজোগুলি ধারাবাহিক ভাবে ভিড় টেনে আসছে, শ্রীভূমির এ বারের পুজো তাদের সকলকে ‘টেক্কা’ দিয়েছে। সেটাই হয়েছে সুজিতের ‘বিড়ম্বনা’র মূল কারণ। এর পিছনে ‘ঈর্ষা’ও দেখতে পাচ্ছেন অনেকে।

Advertisement

ভিড়ের বিচারে কলকাতার যে পুজোগুলি আলোচনার কেন্দ্রে থাকে তার মধ্যে আছে দুই মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস এবং ফিরহাদ হাকিমের পুজো— নিউআলিপুরের সুরুচি সঙ্ঘ এবং চেতলা অগ্রণী। এ ছাড়াও আছে প্রবীণ মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের একডালিয়া এভারগ্রিন এবং বিধায়ক তথা প্রাক্তন মেয়র পারিষদ দেবাশিস কুমারের ত্রিধারা ও দেশপ্রিয় পার্ক। কিন্তু সুজিতের শ্রীভূমি এ বছর ভিড়ের তালিকায় শীর্ষে পৌঁছে গিয়েছে।

মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে কোভিড পরিস্থিতিতে সুজিতকে ভিড় ‘নিয়ন্ত্রণ’ করতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল। বিমান চলাচলে নিরাপত্তার জন্য ১৪০ ফুট ( দলকলের অনুমোদন থাকে ৪০ ফুট পর্যন্ত) মণ্ডপের শীর্ষে লাগানো জোড়ালো আলোর খেলা বন্ধ করতেও বলা হয়েছিল সুজিতকে। কাজ হয়নি। শেষপর্যন্ত অষ্টমীর রাতে সন্ধিপুজোর ঠিক আগে নবান্নের হস্তক্ষেপে শ্রীভূমিতে দর্শনার্থীদের ঢোকা বন্ধ করে দেওয়া হয়।

এই পরিপ্রেক্ষিতে অনেকের অনুমান, শ্রীভুমির পুজোকে ‘দমিয়ে’ দেওয়ার একটি চেষ্টা সরকারি নির্দেশের পিছনে কাজ করেছে। তাতে ইন্ধন জোগাতে কাজ করেছে ‘প্রতিদ্বন্দ্বী’ কয়েকটি পুজোও। যেগুলি সবই কোনও না কোনও ‘প্রভাবশালী’ নেতা-মন্ত্রীর দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। তবে এইরকম ধারণাকে নস্যাৎ করে সুব্রত মুখোপাধ্যায়, ফিরহাদ হাকিম, অরূপ বিশ্বাস, দেবাশিস কুমারেরা সকলেই একবাক্যে বলেছেন, কোনও পুজো বন্ধ করে দেওয়ার কুচক্রীপনা তাঁরা করেন না। বরং সুস্থ প্রতিযোগিতায় একে অপরকে টেক্কা দিতে চান। সেটাই পুজোর আনন্দ। এঁদের আরও অভিমত, যদি ‘প্রভাব’ খাটিয়ে পুজো বন্ধ করার ক্ষমতাই থাকত তবে তা পঞ্চমী- ষষ্ঠীতেই করে ফেলা যেত। অষ্টমীর রাত পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হত না।

সূত্রের খবর, কোভিড পরিস্থিতিতে আয়োজনে বেশি ‘বাড়াবাড়ি’ না করার পরামর্শ সুজিতকে প্রথম দেওয়া হয়েছিল মাস পাঁচেক আগে। সেখানে ‘বুর্জ খলিফা’র আদলে মণ্ডপ তৈরির কথা জেনে ফিরহাদ তাঁর সতীর্থ সুজিতকে বলেছিলেন, এমন কিছু করা উচিত হবে না যাতে ভিড় নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। এখন সেই পুজো নিয়েই প্রশাসনিক তৎপরতা এবং বিতর্কের মধ্যেই ফিরহাদের বক্তব্য, ‘‘দর্শনার্থীদের জন্যই পুজো করা। তাই দর্শন বন্ধ হয়ে যাক এটা একজন পুজো উদ্যোক্তা হিসেবে আমি কখনই চাই না। কিন্তু এটাও ঠিক কোভিড পরিস্থিতি বিবেচনা করে সময়ে সতর্ক হলে বিষয়টি হয়ত এতদূর গড়াত না।’’

সুরুচির সঙ্ঘের সাধারণ সম্পাদক স্বরূপ বিশ্বাস বলেন, ‘‘দর্শনার্থীদের জন্য মণ্ডপ বন্ধ হয়ে যাওয়া অনভিপ্রেত। কিন্তু এমন পরিস্থিতি যাতে তৈরি না হয়, সেটাও মাথায় রাখা উদ্যোক্তাদের দায়িত্ব। কোনও ক্লাব বা নেতার কথায় পুলিশ প্রশাসন সিদ্ধান্ত নেবে এটা বলা সহজ। বোঝা কঠিন।’’ প্রসঙ্গত, সুরুচি- কর্তার দাবি, বছর দুই আগে তাঁদের প্যান্ডেলের উচ্চতা দমকলের নির্দেশের চেয়ে দেড়- দু’ফুট বেশি হয়েছিল। মণ্ডপের কাজ চলাকালীন পুলিশের নির্দেশে সেই উচ্চতা কমিয়ে দেওয়া হয়।

সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘সুজিতের পুজোয় কী হয়েছে, তা আমি দেখিনি। তবে উৎসাহী মানুষ মণ্ডপে পুজো দেখতে পারছেন না, এটা খুব খারাপ। বিধিনিষেধ উড়িয়ে দিয়ে যদি কেউ পুজো করতে চান সেটা আইন এবং আদালতের চোখে আপত্তিকর বলে মনে হতে পারে। যাঁরা দায়িত্বশীল তাঁরা নিজেরা নজির গড়বেন। সেটাই প্রত্যাশিত। আমার ধারণা, শ্রীভূমির ক্ষেত্রে তার ব্যতিক্রম ঘটেছে।’’ দেবাশিস কুমারও মণ্ডপ বন্ধ করে দেওয়ার ঘটনায় মর্মাহত। তাঁর মন্তব্য, ‘‘আমি তো ঘরপোড়া গরু। দেশপ্রিয় পার্কে কয়েক বছর আগে একই ভাবে ভিড়ের কারণে মণ্ডপ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। তা ছাড়া, প্যান্ডেলের উচ্চতা সহ আরও বিভিন্ন বিধিনিষেধ মেনে পুজো করতে হয়। আমরা ঠেকে শিখেছি। আমাদের দেখে অন্যরা শিখলে শ্রীভূমিরও হয়তো আজ এ অবস্থা হত না।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement