রাজ্যে ৪ জনের মৃত্যু কি এনআরসি আতঙ্কেই

উত্তর ২৪ পরগনার হিঙ্গলগঞ্জে অসুস্থ হয়ে মৃত্যু হল ৫২ বছরের আমেনা বেওয়ার। পরিজনেরা বলছেন, এনআরসির চিন্তায় পুরনো দলিল খুঁজতে বাঁকুড়ায় বাপের বাড়ি অবধি দৌড়েছিলেন আমেনা।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

কলকাতা শেষ আপডেট: ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০৩:১৭
Share:

প্রতীকী ছবি।

সবে বৃহস্পতিবার কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে জাতীয় নাগরিক পঞ্জি (এনআরসি) নিয়ে নিজের আপত্তির কথা জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তার পরে ২৪ ঘণ্টাও কাটল না, রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে প্রাণ গেল চার জনের। যে মৃত্যুর সঙ্গে এনআরসি-র নামও জড়িয়ে গেল।

Advertisement

উত্তর ২৪ পরগনার হিঙ্গলগঞ্জে অসুস্থ হয়ে মৃত্যু হল ৫২ বছরের আমেনা বেওয়ার। পরিজনেরা বলছেন, এনআরসির চিন্তায় পুরনো দলিল খুঁজতে বাঁকুড়ায় বাপের বাড়ি অবধি দৌড়েছিলেন আমেনা। কিন্তু প্রয়োজনীয় নথি খুঁজে পাননি। তার পরেই অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। এত দিন বিড়ি বেঁধে সংসার চলত। পড়শিরা বলছেন, আমেনা ভয় পাচ্ছিলেন, সেই সংসারই হয়তো আর থাকবে না।

ভিটে হারানোর এই আতঙ্ক যে কতটা মারাত্মক হতে পারে, সেটা ব্যাখ্যা করতে গিয়ে রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক বলেন, ‘‘রাজনীতির এই নোংরা খেলা বন্ধ না হলে এনআরসি আতঙ্কে আরও অনেকের মৃত্যু হবে।’’ নবান্নে দাঁড়িয়ে মুখ্যমন্ত্রী এ দিন সকলকে আশ্বস্ত করে জানান, ভয়ের কিছু নেই, এই রাজ্যে এনআরসি হবে না।

Advertisement

কিন্তু তাঁর আশ্বাসের আগেই রাজ্য জুড়ে দাবানলের মতো এনআরসি উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়েছে। মঙ্গলবার মুর্শিদাবাদের মিলন মণ্ডল (২৭) আত্মঘাতী হওয়ার পরে পরিবারের লোকেরা ভিটে হারানোর ভয়ের কথাই বলেছিলেন। শুক্রবার জলপাইগুড়ির ময়নাগুড়ির বাসিন্দা ৩৯ বছরের অন্নদা রায়ের আত্মহননের পরেও একই অভিযোগ তুলেছেন তাঁর আত্মীয়েরা। তাঁরা জানাচ্ছেন, চার বিঘে জমি বন্ধক দিয়ে চাষের জন্য ধার নিয়েছিলেন অন্নদা। এনআরসি নিয়ে আলোচনা শুরু হওয়ায় তাঁর মনে হয়, কাগজ তো বন্ধক দিয়েছেন, প্রমাণ দেখাবেন কী করে! পরিজনেরা বলছেন, এই কথাই বারবার ঘুরেফিরে বলতেন। শেষে এ দিন নিকটবর্তী স্টেশনে ওভারব্রিজ থেকে তাঁকে ঝুলতে দেখা যায়।

এমনই উদ্বেগে এ দিন বালুরঘাটে রেশন কার্ড ডিজিটাল করানোর লাইনে গিয়ে দাঁড়িয়েছিলেন ৫২ বছরের মন্টু সরকার। ঠা ঠা রোদে কয়েকশো লোকের পিছনে ছিলেন তিনি। দীর্ঘক্ষণ সেখানে দাঁড়িয়ে মাথা ঘুরে পড়ে যান। সঙ্গে সঙ্গে বালুরঘাট হাসপাতালে নিয়ে গেলে তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করা হয়। অনেকেই বলছেন, নোটবন্দির সময়ে এ ভাবেই লাইনে দাঁড়িয়ে প্রাণ গিয়েছে অনেকের। এ দিন যেন সেই স্মৃতিই ফিরে এল।

ইটাহারের সোলেমান সরকার ওপার বাংলা থেকে এসেছিলেন ১৯৬৫ সালে। এনআরসি শোনার পর থেকেই ভিটে হারানোর উদ্বেগে ছিলেন। এ দিন হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। ছেলেরা বলছেন, গত ক’দিন সমানে প্রমাণপত্র নিয়ে খোঁজ করছিলেন তিনি। উদ্বেগই কাল হল!

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement