নবান্ন। —ফাইল চিত্র।
রাজ্য পুলিশের ডিজিপি (ডিরেক্টর জেনারেল অব পুলিশ) নিয়োগের প্রশ্নে উত্তরপ্রদেশের পথেই কি হাঁটতে চলেছে নবান্ন— জল্পনা প্রশাসনের অন্দরে।
বর্ষশেষ প্রায় দোরগোড়ায়। সব ঠিকঠাক থাকলে আগামী কয়েক দিনের মধ্যেই দু’বছরের কার্যকাল শেষে বর্তমান ডিজিপি মনোজ মালবীয়র অবসর নেওয়ার কথা। এখনও পর্যন্ত যা খবর, তাতে শীঘ্রই তাঁকে বিদায় সংবর্ধনা (ফেয়ারওয়েল) দিতে পারে পুলিশ বাহিনী।
প্রশাসনের অন্দরে এখনও পর্যন্ত যা খবর তাতে, প্রথা মেনে রাজ্য পুলিশের নতুন ডিজিপি হিসেবে পদপ্রার্থীদের নাম যায়নি ‘ইউনিয়ন পাবলিক সার্ভিস কমিশন’ (ইউপিএসসি)-এ। তাই প্রবীণ পুলিশকর্তাদের একাংশের অনুমান, এই অবস্থায় ভারপ্রাপ্ত বা অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে নতুন কোনও আইপিএস অফিসারকে ডিজিপি হিসেবে নিয়োগ করা হতে পারে। তাতেই উত্তরপ্রদেশ ‘মডেল’-এর সঙ্গে মিল খুঁজে পাচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা।
প্রবীণ এবং প্রাক্তন আমলাদের অনেকেই জানাচ্ছেন, ডিজিপি নিয়োগের ক্ষেত্রে দু’টি পদ্ধতি রয়েছে। এক — নিয়োগের মাসকয়েক আগে অতিরিক্ত ডিরেক্টর জেনারেল (এডিজি) এবং ডিজি পদমর্যাদার অফিসারদের নাম, তাঁদের ‘অ্যানুয়াল কনফিডেন্সিয়াল রিপোর্ট (এসিআর)’, সংশ্লিষ্টরা কর্মজীবনে কী কী দায়িত্ব পালন করেছেন—ইত্যাদি যাবতীয় তথ্য পাঠাতে হয় ইউপিএসসি-তে। এমনকি, রাজ্যের যাঁরা ডেপুটেশনে কেন্দ্রের চাকরিতে রয়েছেন, তাঁদের নামও পাঠানো রীতি। ইউপিএসসি সেগুলি খতিয়ে দেখে যোগ্যতম তিনজনের নাম রাজ্য পুলিশের ডিজিপি পদের জন্য প্রস্তাব করে। সেই তিনজনের মধ্যে থেকে একজনকে ওই পদের জন্য বেছে নেয় রাজ্য। অবসরের নিকটবর্তী হলেও, এখনকার নিয়ম অনুযায়ী দু’বছরের জন্য ডিজিপি হিসেবে দায়িত্ব পালনের সুযোগ পান সংশ্লিষ্ট অফিসার।
দুই — সিনিয়র যে কোনও আইপিএস অফিসারকে রাজ্য পুলিশের ডিজিপি পদের অতিরিক্ত দায়িত্ব দেওয়া বা সেই পদে ভারপ্রাপ্ত হিসেবে নিয়োগ করা যায়। এ ক্ষেত্রে আগের নিয়মে পুলিশকর্তাদের নামের তালিকা ইউপিএসসি-তে পাঠাতে হয় না। প্রবীণ আমলাদের অনেকেই জানাচ্ছেন, উত্তরপ্রদেশের বর্তমান ডিজিপি এই ভাবেই দায়িত্ব সামলাচ্ছেন। যে হেতু আনুষ্ঠানিক ভাবে ডিজিপি পদের জন্য ইউপিএসসি-তে অফিসারদের নাম এখনও পাঠানো হয়নি বলে শোনা যাচ্ছে, তাই উত্তরপ্রদেশের মতো ওই পদে অস্থায়ী নিয়োগের একটা সম্ভাবনা দেখছেন প্রশাসনের অনেকে। যদিও এ নিয়ে সরকারি ভাবে কিছু বলা হয়নি।
আধিকারিকদের অনেকেই মনে করিয়ে দিচ্ছেন, রাজ্য পুলিশের বর্তমান ডিজিপি মনোজ মালবীয় শুরুতে দ্বিতীয় পদ্ধতিতেই নিযুক্ত হয়েছিলেন। পরে অবশ্য প্রথম পথে তাঁর স্থায়ী নিয়োগ হয়।
প্রশাসনিক পর্যবেক্ষকদের অনেকের মতে, বছর ঘুরলেই লোকসভা ভোট। তার আগে এমন ইঙ্গিত তাৎপর্যপূর্ণ। নবান্নের অন্দরে যে জল্পনা-চর্চা ঘোরাফেরা করছে, তা শেষপর্যন্ত ঠিক হলে নতুন ডিজিপি দায়িত্ব নিলেও পরামর্শদাতা হিসেবে দেখা যেতে পারে মালবীয়কে। পুলিশ মহলে নতুন ডিজিপি হিসেবে দু’টি নাম ঘোরাফেরা করছে, প্রথম জন রাজেশ কুমার। জল্পনা রয়েছে কলকাতা পুলিশের প্রাক্তন কমিশনার রাজীব কুমারকে নিয়েও। তবে জাতীয় নির্বাচন কমিশনার ইতিমধ্যেই স্পষ্ট করেছে, অতীতের কোনও ভোটে, নির্বাচনের সঙ্গে যুক্ত কোনও অফিসারকে দায়িত্ব থেকে অপসারণ বা তাঁর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক পদক্ষেপ করা হয়ে থাকলে, আসন্ন ভোটের কোনও দায়িত্বে তাঁকে রাখা যাবে না। সেই দিক থেকে প্রথম নামটি নিয়ে জল্পনা বেশি রয়েছে। স্বরাষ্ট্রসচিব পদেও চমকের সম্ভাবনা দেখছেন প্রশাসনের অনেকে।