বাঁধের গায়ে ঘোগের বাসা, হন্যে কর্তারা

‘ঘোগ’ বলতে বোঝায়—খেত থেকে জল বের করার গর্ত বা নালি। কিন্তু বাঁধের গায়ে ‘ঘোগ’ বলতে সেচ দফতর ইঁদুরের তৈরি গর্তই বোঝে। এ ছাড়া রয়েছে বাঁশ-কাঠ-কংক্রিট দিয়ে মানুষের তৈরি গর্তও।

Advertisement

শান্তনু ঘোষ

খানাকুল শেষ আপডেট: ০৭ অগস্ট ২০১৭ ০২:৫৯
Share:

মেরামতি: চলছে গর্ত সারাইয়ের কাজ। —নিজস্ব চিত্র।

বন্যা ডাকছে ইঁদুরও!

Advertisement

বিভিন্ন জেলা থেকে জল নামতেই প্লাবনের কারণ খুঁজতে গিয়ে চমকে উঠছেন সেচ দফতরের কর্তারা। বাঁধের গায়ে ‘ঘোগের’ ক্ষত! একটা- দু’টো নয়, অন্তত ২০০টা!

‘ঘোগ’ বলতে বোঝায়—খেত থেকে জল বের করার গর্ত বা নালি। কিন্তু বাঁধের গায়ে ‘ঘোগ’ বলতে সেচ দফতর ইঁদুরের তৈরি গর্তই বোঝে। এ ছাড়া রয়েছে বাঁশ-কাঠ-কংক্রিট দিয়ে মানুষের তৈরি গর্তও। প্লাবিত এলাকার পরিদর্শনে গিয়ে সেচ-কর্তারা বিভিন্ন নদীবাঁধের গায়ে এমনই অন্তত ২০০টি ঘোগের অস্তিত্ব পেয়েছেন। দফতরের এক কর্তা বলেই ফেললেন, ‘‘এতটুকু গর্ত কত বড় বিপদ ডেকে আনে বুঝুন! প্রতি বছরই এটা হয়। কিন্তু নির্মূল করার কোনও উপায় নেই।’’

Advertisement

সেচ দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই গর্তে নদীজল ঢুকে বাঁধের ভিতরের মাটি ধুয়ে নিয়ে অপর প্রান্তে ফাটল ধরায়। ফলে, নদীবাঁধ আলগা হয়ে যায়। কিন্তু শুখা মরসুমে ঘোগের অস্তিত্ব ধরা পড়ে না। কেন?

এক সেচ-কর্তা জানান, সারা বছরই ঝোপে ঢাকা পড়ে থাকে ঘোগ। নদীর জলস্তর ফুলে উঠে বাঁধের গায়ে ছুঁলেই বোঝা যায় ঘোগের অবস্থান। তখন বালির বস্তা ফেলে বা রিং-বাঁধ দিয়ে তা আটকানোর চেষ্টা হয় ঠিকই। কিন্তু প্রবল জলস্রোতে তা খুব কাজে আসে না। বাঁধের ঢালে জনবসতি গড়ে ওঠার জন্যও গর্ত হয়। ওই কর্তার আক্ষেপ, ‘‘পাকাপাকি ভাবে মেরামতি করতে গেলে তো কোথাও কোথাও মানুষের ‘বাসা’ই ভাঙতে হবে!’’

আরও পড়ুন:‘কড়া’ সচিবের হোমটাস্কে ত্রাস

এ বারেই দামোদরের ধারে বর্ধমানের জামালপুরে প্রায় ৩০টি, হুগলির ধনেখালিতে ২৫টি, তারকেশ্বরে ৩৫টি, পুরশুড়ায় হরিহর শ্মশানতলা, শ্রীরামপুরে প্রায় ১৫টি, হাওড়ার উদয়নারায়ণপুর-আমতা মিলিয়ে প্রায় ৩০টি এবং পূর্ব মেদিনীপুরের পাঁশকুড়ায় নিউ কাঁসাইয়ের ধারে ২৫টি, পশ্চিম মেদিনীপুরের ঘাটালের শিলাবতীতে ২০টি এবং ওল্ড কাঁসাইয়ে ১০টি ঘোগ ধরা পড়েছে। তবে, ঘোগই বন্যার একমাত্র কারণ নয়। এ ছাড়াও, বাঁধ থেকে মাটি কেটে নেওয়া, সেখানে অবৈধ নির্মাণ, ডিভিসি-র বাড়তি জল ছাড়া এবং কিছু প্রাকৃতিক কারণের জন্য ফি-বছর নিম্ন গাঙ্গেয় অববাহিকার হাওড়া, হুগলি এবং দুই মেদিনীপুর প্লাবিত হয় বলে দাবি করেছে সেচ দফতর।

ভৌগোলিক ভাবে ওই চার জেলার আকার বাটির মতো। ফলে, ঝাড়খণ্ড বা বাঁকুড়া-পুরুলিয়ার জল নানা নদনদী দিয়ে নেমে এসে এই চার জেলাকে ভাসায়। দামোদর ছাড়া চার জেলার সব নদীই রূপনায়ারণ হয়ে গঙ্গায় মেশে। কিন্তু ভারী বৃষ্টি বা ভরা কোটালে গঙ্গা ভরে থাকলে কোনও মতেই চার জেলার নদনদীর জল বেরোতে পারে না।

এই প্রতিবন্ধকতা কাটানোর উপায় নেই সেচ দফতরের হাতে। ফলে, তারা জোর দিচ্ছে বাঁধ মেরামতি, নদী সংস্কার, নতুন খাল কাটা বা লকগেট নির্মাণে। বিশ্ব ব্যাঙ্কের সহযোগিতায় প্রায় ২৭০০ কোটি টাকা খরচে নিম্ন দামোদর সেচ প্রকল্প হাতে নিয়েছে তারা। সেচমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, বাঁধ সংস্কারের জন্য দখলদারি সরাতে সব জেলা প্রশাসনকে বলা হয়েছে। বেশি ক্ষতিপূরণ দিয়ে হলেও বাড়ি সরাতে হবে। মন্ত্রী বলেন, ‘‘প্রকল্পের কাজ শেষ হলে সমস্যা অনেকটা মিটবে বলেই আশা।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement