Millitants

সাঙ্কেতিক নামের ধাঁধায় নাজেহাল হচ্ছেন তদন্তকারীরা

গোয়েন্দা সূত্রের দাবি, এ রাজ্যে ‘শাহাদাত’-এর শাখা প্রধান বা আমির ছিল হাবিবুল্লাহ। তার সঙ্গে টেলিগ্রাম এবং আরও একটি অ্যাপে যে সদস্যেরা যুক্ত হয়েছিল তাদের অধিকাংশই নিজেদের সাঙ্কেতিক নাম ব্যবহার করেছে।

Advertisement

শিবাজী দে সরকার, কুন্তক চট্টোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৭ জুলাই ২০২৪ ০৬:৫২
Share:

—প্রতীকী ছবি।

রাজ্যে আনসার আল ইসলাম (বাংলাদেশ)-এর ‘শাহাদাত’ মডিউলে রাজ্যে কারা আছে তা জানতে পারছেন গোয়েন্দারা। কিন্তু চিনতে পারছেন কি? সম্প্রতি তিন জঙ্গিকে গ্রেফতারের পরে নতুুন জঙ্গি সংগঠনের বিস্তারের কথা রাজ্য এসটিএফ জানতে পেরেছে। কিন্তু সেই শাখা কোথায় কোথায় ছড়িয়েছে সে সম্পর্কে এখনও তদন্তকারীরা অনেকটাই অন্ধকারে বলে সূত্রের দাবি। ওই সূত্রের বক্তব্য, গত মাস ছয়েক ধরে মূলত অনলাইনে ‘শাহাদাত’ মডিউলের বিস্তার ঘটেছে রাজ্যে। সেই কাজে টেলিগ্রাম-সহ এমন দু’টি অ্যাপ ব্যবহার করা হয়েছে যেখান থেকে তথ্য পাওয়া যায় না। তাতেই সমস্যা বেড়েছে তদন্তকারীদের।

Advertisement

গোয়েন্দা সূত্রের দাবি, এ রাজ্যে ‘শাহাদাত’-এর শাখা প্রধান বা আমির ছিল হাবিবুল্লাহ। তার সঙ্গে টেলিগ্রাম এবং আরও একটি অ্যাপে যে সদস্যেরা যুক্ত হয়েছিল তাদের অধিকাংশই নিজেদের সাঙ্কেতিক নাম ব্যবহার করেছে। তাই তাদের আসল পরিচয় খুঁজে বার করতে সমস্যায় পড়ছেন তদন্তকারীরা। সাইবার বিশেষজ্ঞ তথা আইনজীবী বিভাস চট্টোপাধ্যায় বলছেন, ‘‘টেলিগ্রাম অত্যন্ত সুরক্ষিত। তার ফলে এই অ্যাপের চ্যাট ডিকোড করে বার করা কার্যত অসম্ভব। টেলিগ্রাম থেকে ব্যবহারকারীদের আইপি অ্যাড্রেস পাওয়া গেলেও কী কী তথ্য লেনদেন হয়েছে তা বার করা মুশকিল। সে ক্ষেত্রে প্রমাণ জোগাড়ও কঠিন হবে।’’

গোয়েন্দাদের একাধিক সূত্রের মতে, এ ভাবে অনলাইন মাধ্যম ব্যবহার করে শাখা বিস্তার নতুন কোনও বিষয় নয়। মূলত বাংলাদেশে আনসারুল্লাহ বাংলা টিম (এবিটি) ২০১৩ সাল থেকে এই পদ্ধতি ব্যবহার করে যুব সমাজের মধ্যে সংগঠনের বিস্তার ঘটিয়েছিল। পরবর্তী কালে এবিটি থেকেই অনেকে আনসার আল ইসলাম গোষ্ঠীতে যোগ দেয়।

Advertisement

এ রাজ্যেও আনসার-এর সংগঠন খুঁজতে নেমে গোয়েন্দারা জানতে পেরেছেন, অনলাইনে বিভিন্ন জিহাদি ভাবধারার বিষয় ছড়িয়ে উৎসাহী লোকজনকে খুঁজে বার করা হত। তার পরে বিভিন্ন অ্যাপে গ্রুপে যোগ করে সেখানে রীতিমতো মগজধোলাই চালাত হাবিবুল্লাহ। ওই গ্রুপেই অনলাইন বৈঠক করে সংগঠনে কার কী দায়িত্ব সে সবও বোঝানো হত। তবে হাবিবুল্লাহ জেরায় দাবি করেছে যে, সাঙ্কেতিক নামে যুক্ত হওয়া সদস্যদের আসল নাম সে-ও জানে না। যদিও সেই দাবির সত্যতা খতিয়ে দেখছেন গোয়েন্দারা। তবে তাঁদের অনেকে এ-ও স্বীকার করছেন, টেলিগ্রামের মতো অ্যাপ থেকে যদি সব তথ্য পাওয়া যেত তা হলে এই সংগঠনের শিকড় খোঁজার কাজ অনেক সহজ হত।

এই ভার্চুয়াল মাধ্যমে সাঙ্কেতিক নামে যোগাযোগের ফলে আরও একটি বিষয় নিয়ে চিন্তিত গোয়েন্দাদের একাংশ। তাঁদের বক্তব্য, আনসার আল ইসলাম মহিলাদের মধ্যেও নিজেদের জঙ্গি মতাদর্শের বিস্তার ঘটায়। বাংলাদেশে তার প্রমাণ মিলেছিল। সেখানে জানা গিয়েছিল, মহিলা সঙ্গে থাকলে সহজেই স্বামী-স্ত্রী সেজে চোখে ধুলো দেওয়া যায়। আশপাশের লোকের চট করে সন্দেহ হয় না। তা ছাড়া, বহু ক্ষেত্রে মহিলারা সহজে পুলিশের ফাঁক গলে বেরিয়েও যেতে পারে কিংবা অনলাইনে প্রেমের ফাঁদ পেতে তথ্য জোগাড় করতে পারে।

প্রসঙ্গত, খাগড়াগড় কাণ্ডে এমনই জিহাদি দম্পতির কথা সামনে এসেছিল। এ রাজ্য থেকেই লস্কর-ই-তইবার সঙ্গে যুক্ত সন্দেহে এক ছাত্রীকে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement