দলের কল সেন্টার থেকে ওই ৩৫ জনকে ফোন করে প্রত্যেকের দায়িত্বের জেলা বলে দেওয়া হয়েছে। ফলে ৩৫ জনের সকলে সক্রিয় ভাবে পুরভোটের কাজে নামেনওনি।
ফাইল চিত্র।
অন্তর্দ্বন্দ্বে দীর্ণ বিজেপির অন্দরে ফের ক্ষোভের আঁচ। এ বার আসন্ন ১০৮টি পুরসভার ভোটকে কেন্দ্র করে।
১০৮টি পুরসভার ভোট পরিচালনার জন্য ৩৫টি সাংগঠনিক জেলার প্রতিটিতে এক জন করে নেতাকে দায়িত্ব দিয়েছে বিজেপি। দলের একাংশের অভিযোগ, যিনি যে জেলার রাজনীতি এবং সংগঠন বিষয়ে বিশেষ কিছু জানেন না, তাঁকে সেই জেলার সব ক’টি পুরসভার ভোট সামলাতে বলা হয়েছে। ফলে দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা এবং জেলা নেতৃত্ব— দু’দিকেই তৈরি হয়েছে বিরক্তি। দু’পক্ষই ভাবছেন, কী ভাবে কাজ করা যাবে? রাজ্য বিজেপির একাংশের আরও অভিযোগ, দলের কোনও পদাধিকারী কাউকে ডেকে পুরভোটের দায়িত্ব বুঝিয়েও দেননি। দলের কল সেন্টার থেকে ওই ৩৫ জনকে ফোন করে প্রত্যেকের দায়িত্বের জেলা বলে দেওয়া হয়েছে। ফলে ৩৫ জনের সকলে সক্রিয় ভাবে পুরভোটের কাজে নামেনওনি। এই পরিস্থিতিতে বিজেপির সর্বভারতীয় সহ সভাপতি দিলীপ ঘোষ শুক্রবার চাকদহে পুরভোটের প্রচারে গিয়ে বলেছেন, ‘‘নির্দল প্রার্থীরা নির্বাচিত হয়ে আমাদের দলে যোগ দিলে আমাদের কোনও আপত্তি নেই। আমরা সবাইকে নিয়ে চলতে চাই।’’ তাঁর এই মন্তব্যে চর্চা শুরু হয়েছে, তিনি কি তৃণমূল শিবিরের নির্দলদের কথা বোঝাতে চাইলেন? প্রসঙ্গত, বিধানসভা ভোটের আগে তৃণমূল থেকে দলে দলে লোক নেওয়ার পর বিজেপির অভিজ্ঞতা খুব ভাল হয়নি। ওই কৌশল ঠিক ছিল কি না, তা নিয়েও দলে বিতর্ক জারি আছে।
বিধানসভা ভোট থেকে সাম্প্রতিক পুরভোট পর্যন্ত ধারাবাহিক পরাজয় এবং সাংগঠনিক নানা বিক্ষোভ প্রকাশ্যে আসায় বিজেপি ইদানীং বেকায়দায় রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে ১০৮টি পুরভোটের ক্ষেত্রে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা না করে উল্টে যে নেতার যে এলাকা সম্পর্কে অভিজ্ঞতা নেই, তাঁকে সেখানে দায়িত্ব দেওয়া হল কেন?
১০৮টি পুরসভার দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের তালিকায় দেখা যাচ্ছে, যে দেবজিৎ সরকার কলকাতা দেখতেন, তাঁকে পাঠানো হয়েছে বনগাঁয়। শঙ্কুদেব পাণ্ডাও কলকাতার দায়িত্বে ছিলেন। তাঁকে দেওয়া হয়েছে ডায়মন্ড হারবারে। প্রতাপ বন্দ্যোপাধ্যায় উত্তরবঙ্গ দেখতেন। তাঁকে দেওয়া হয়েছে বর্ধমানে। নরহরি মাহাতোকে পুরুলিয়া থেকে তুলে আনা হয়েছে আরামবাগে। নদিয়ার মুকুটমণিকে পাঠানো হয়েছে উত্তর মুর্শিদাবাদে। উত্তর কলকাতার নেতা দীনেশ পাণ্ডেকে দেওয়া হয়েছে শ্রীরামপুরের দায়িত্ব।
১০৮টি পুরসভার ভোটে ২৫৫টি আসনে বিজেপি প্রার্থী দিতে পারেনি। পুরভোটের দায়িত্ব বণ্টন নিয়ে সংগঠনের অন্দরের ক্ষোভেই কি এই পরিণতি? রাজ্য বিজেপির মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘দলে কোথাও কোনও ক্ষোভ নেই। আমরা কিছু প্রার্থী দিতে পারিনি সন্ত্রাসের কারণে। প্রার্থীরা বহু জায়গায় তৃণমূল এবং পুলিশের যৌথ সন্ত্রাসে মনোনয়ন তুলে নিতে বাধ্য হয়েছেন।’’ শমীকের আরও কটাক্ষ, ‘‘সন্ত্রাসের চেহারা দেখেও নির্বাচন কমিশন বলে চলেছে, সব নিয়ম মেনেই হচ্ছে। কারণ তারা তৃণমূলের শাখা সংগঠন। তৃণমূলের সুরে কথা না বললে তাদের দলীয় শৃঙ্খলাভঙ্গ হত।’’