সড়ক ও সেতুর স্বাস্থ্য রক্ষায় সারা রাজ্যে কুড়ি বা তার বেশি চাকার ট্রাক চলাচল নিষিদ্ধ করেছে পরিবহণ দফতর। তবে বিশেষ ক্ষেত্রে অনুমতি নিয়ে বড় ট্রেলার চালানো যাবে।
অর্থাৎ নিষেধাদেশ থাকছে আবার ক্ষেত্রবিশেষে ফাঁকও থাকছে তাতে। এবং সেই ফাঁকের সুযোগে রাজ্যে পণ্য পরিবহণের ক্ষেত্রে ‘আগাম অনুমতি’র বিষয়টি কার্যত সরকারি ‘সরকারি হস্তক্ষেপ’ হয়েই দাঁড়াবে বলে মনে করছেন পরিবহণ ব্যবসায়ীদের একাংশ। তাঁদের আশঙ্কা, এর ফলে অনুমতি সংগ্রহের জন্য ‘লাইন’ পড়বে, পণ্য পরিবহণে দাপিয়ে বেড়াবে লাইসেন্স-রাজ!
গত শুক্রবার জারি করা সরকারি নির্দেশে বলা হয়েছে, ১৯৮৮ সালের পরিবহণ আইনের ১১৫ ধারা অনুসারে সরকার সারা রাজ্যে ২০ বা তার বেশি চাকার পণ্যবাহী যানের চলাচল বন্ধ করা হল। যে-ভাবে এই নির্দেশ জারি করা হয়েছে, তা নিয়েও সংশয় প্রকাশ করেছেন পরিবহণ আধিকারিকদের একাংশ। তাঁদের মতে, ১৯৮৮ সালের পরিবহণ আইনের ১১৫ ধারায় সরকার বিশেষ ধরনের যানবাহন চলাচলে বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে। কিন্তু সেই নিষেধাজ্ঞা শুধু নির্দিষ্ট কোনও রাস্তা বা এলাকার ক্ষেত্রেই প্রয়োজ্য। সারা রাজ্যের ক্ষেত্রে ওই বিধিনিষেধ কী ভাবে বলবৎ হতে পারে, তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করছেন তাঁরা।
পরিবহণ অফিসারদের একাংশের মতে, সারা দেশেই জাতীয় সড়কগুলিতে পণ্য পরিবহণ অবাধ করতে গত কয়েক বছরে শুল্ক এবং মাসুল সংক্রান্ত নানা বিধিনিষেধ তুলে দেওয়া হয়েছে। যাতে কোনও রকম চেকপোস্ট ছাড়াই অবাধে পণ্য পরিবহণ করা যায়। রাজ্যে সরকারের জারি করা নির্দেশের ফলে ভারী শিল্পের যন্ত্রাংশ বহন এবং কাঁচামাল সরবরাহের ক্ষেত্রে নতুন করে জটিলতা বাড়তে পারে। ইস্পাত, বিদ্যুৎ, নির্মাণ-সহ বিভিন্ন শিল্পের ক্ষেত্রে পণ্য পরিবহণের জন্য কথায় কথায় সরকারি অনুমতি জোগাড় করার জন্য ছুটতে হবে। এতে অপেক্ষার পালা যেমন দীর্ঘ হবে, তেমনই প্রশস্ত হবে দুর্নীতির পরিসর।
অল ইন্ডিয়া মোটর ট্রান্সপোর্ট কংগ্রেসের পূর্বাঞ্চলের মুখপাত্র সোহন সিংহ বলেন, “সরকারি নির্দেশের ফলে রাজ্যের জাতীয় সড়কগুলিতে পণ্য পরিবহণ ব্যাহত হতে পারে। যে-কোনও ধরনের অনুমতির জন্য অপেক্ষা বাড়লে আপনা-আপনিই প্রস্তুত হবে দুর্নীতির ক্ষেত্র।” তাঁর মতে সরকারের উচিত গাড়ির চাকার সংখ্যা না-দেখে ওভারলোডিং অর্থাৎ অতিরিক্ত ভার বহন বন্ধ করার উপরে জোর দেওয়া। গাড়ির চাকা বাড়লেই সব সময় ‘লোড’ বাড়ে না।
জাতীয় সড়কগুলিতে আন্তঃরাজ্য পণ্য পরিবহণের ক্ষেত্রে সরকারি বিধিনিষেধ কী ভাবে এবং কতটা মানা সম্ভব হবে, তা নিয়েও আশঙ্কা আছে। তবে নবান্নের আগ্রহে ওই নির্দেশ জারি হওয়ায় এই নিয়ে মুখে কুলুপ এঁটেছেন পরিবহণ দফতরের কর্তারা।