ধর্মতলা বাস টার্মিনাস। — ফাইল চিত্র।
আদালতের নির্দেশে ধর্মতলা থেকে বাস টার্মিনাস সরানো নিয়ে সোমবার বাস সিন্ডিকেটগুলির সঙ্গে বৈঠক করেছে পরিবহণ দফতর। সেই বৈঠকের নির্যাস নিয়ে মোটেই সন্তুষ্ট নয় বেসরকারি বাসমালিকদের সংগঠনগুলি। ধর্মতলা থেকে বাস টার্মিনাস তুলে দিয়ে শহরের বিভিন্ন সরকারি বাস ডিপোগুলিতে বেসরকারি বাসগুলিকে সাময়িক ভাবে দাঁড় করানোর প্রস্তাব দিয়েছে পরিবহণ দফতর। কিন্তু সেই প্রস্তাবেও সায় দিতে পারছে না বেসরকারি পরিবহণ সংগঠনগুলি।
ধর্মতলার বাস টার্মিনাসের বদলে বাস দাঁড় করানোর জায়গা হিসেবে এন্টালির একটি বাস ডিপোকে ব্যবহার করার প্রস্তাব দিয়েছে পরিবহণ দফতর। পাশাপাশি, শহরে থাকা আরও বেশ কিছু বাস ডিপো এই কাজে ব্যবহার করতে দেওয়ার কথাও বলা হয়েছে। কিন্তু বাসমালিক সংগঠনগুলির বক্তব্য, ধর্মতলার বাস টার্মিনাসে একসঙ্গে প্রায় ১৫০টির বেশি বাস দাঁড়াতে পারে। আর এন্টালির যে বাস ডিপোটির কথা বলা হচ্ছে, সেখানে সর্ব্বোচ্চ ৫০টি বাস একসঙ্গে দাঁড়াতে পারে। তাই ধর্মতলার বাস টার্মিনাসের বিকল্প হিসাবে যে প্রস্তাব দেওয়া হচ্ছে, তা বাসমালিকদের পক্ষে মানা সম্ভব হবে না। এন্টালি ছাড়াও শহরের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা সরকারি বাস ডিপোগুলিতে কখনওই বাস রাখা সম্ভব নয়। কারণ শহরতলি তথা জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আগত বাসগুলি ধর্মতলা অভিমুখে আসে। সেগুলির পথ বদল করে সরকারি ডিপোতে নিয়ে গেলে রুট বিভ্রাটের পরিস্থিতি দেখা দিতে পারে। তার ফলে যাত্রীদের বাস ধরার ক্ষেত্রে সমস্যা হতে পারে।
পরিবহণ দফতরের তরফে বাসমালিকদের সংগঠনের কাছেও ধর্মতলা বাস টার্মিনাসে বিকল্প স্থান জানানোর কথা বলা হয়েছে। পাল্টা সাবার্বান বাস সার্ভিসেসের সাধারণ সম্পাদক টিটু সাহা বলেন, ‘‘পরিবহণ ব্যবস্থা দাঁড়িয়ে আছে যাত্রীদের ওপরেই। আর পরিবহণ দফতর যে ভাবে বাস টার্মিনাসের বিকল্প হিসাবে যত্রতত্র সরকারি ডিপোতে বাস দাঁড়ানোর কথা বলছে, তা কি বাস্তবসম্মত? তা আগে বিবেচনা করে দেখা হোক।’’ পরিবহণ দফতরের সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে অল বেঙ্গল বাস মিনিবাস সমন্বয় সমিতির রাহুল চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আদালতের সিদ্ধান্ত আমরা সকলেই মানতে বাধ্য। কিন্তু তা যেন বাস্তব পরিস্থিতি বিবেচনা করে করা হয়। কারণ, যে সমস্ত প্রস্তাব বৈঠকে আমাদের দেওয়া হয়েছে, তাতে পরিবহণ পরিষেবায় ব্যাপক প্রভাব পড়বে। আর সেই প্রভাবে বেসরকারি পরিবহণের পরিস্থিতি আরও করুণ হয়ে উঠবে।’’
বেঙ্গল বাস সিন্ডিকেটের নেতা সুরজিৎ সাহা বলেন, ‘‘আইনমাফিক সব ব্যবস্থা করা হোক। কিন্তু তাতে বাস্তব ভাবনার ছাপ রয়েছে, এমন সিদ্ধান্তও নেওয়া খুবই জরুরি। কারণ বেসরকারি পরিবহণ অসংগঠিত ক্ষেত্র হলেও, প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে এই পরিষেবার সঙ্গে কয়েক লক্ষ মানুষের রুজিরুটি যুক্ত। তাই বাস টার্মিনাস সরানোর নামে বেসরকারি বাসমালিকদের উপর যেন কোনও সিদ্ধান্ত চাপিয়ে না দেওয়া হয়।’’ প্রকাশ্যে এ প্রসঙ্গে মুখ খুলতে নারাজ পরিবহণ দফতরের কর্তারা। ধর্মতলা তথা এসপ্ল্যানেড চত্বরের একটি বড় অংশ জুড়ে ওই বাস স্ট্যান্ড থাকার কারণে শহরে যানজট এবং দূষণ অনেকাংশে বাড়ছে বলে অভিযোগ। তাই সেখান থেকে ওই বাস স্ট্যান্ড সরিয়ে বিকল্প ব্যবস্থা করার জন্য আদালতে আবেদন করেছেন পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্ত। বর্তমানে ওই মামলা বিচারপতি দেবাংশু বসাক এবং বিচারপতি শম্পা সরকারের এজলাসে বিচারাধীন। সম্প্রতি সেনাবাহিনী, মেট্রো রেল, পূর্ত দফতর, কলকাতা পুরসভা সহ সব পক্ষের সঙ্গে বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ৬ সপ্তাহ পর ফের এই মামলার শুনানি হবে। সেখানেই এই প্রস্তাব তুলে ধরতে পারে পরিবহণ দফতর।