Indian Railways

Indian Railways: সিগন্যাল ভেঙে এগোচ্ছে ট্রেন! আটকে দেবে ‘কবচ’, নতুন প্রযুক্তি নিয়ে আশাবাদী রেল

রেল সূত্রের খবর, এত দিন চালকদের কড়া শাস্তি দিয়েই সিগন্যাল উপেক্ষার ভুল ঠেকানোর চেষ্টা হত। আবার প্রায়শই খারাপ আবহাওয়া এবং ক্লান্তির কারণে অনেক চালকের ওই ভুল হত। তাতে যাত্রীদের জীবন বিপন্ন হওয়ার আশঙ্কা থাকত।

Advertisement

ফিরোজ ইসলাম 

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ০৭:১৮
Share:

লাল। হলুদ। সবুজ। সিগন্যাল সদাপ্রস্তুত। তবু কোনও কোনও চালক তাকে উপেক্ষা করে। আবার কখনও কখনও সিগন্যাল পড়তে ভুল হয় চালকের। ইচ্ছাকৃত উপেক্ষা হোক বা স্নায়বিক ভুলভ্রান্তি, তাতে অনেক সময়েই এক লাইনে দু’টি ট্রেন চলে আসে কাছাকাছি। তার মাসুল গুনতে হয় যাত্রীদের। রেল সূত্রের খবর, সারা বছরে ট্রেনচালকদের সিগন্যাল উপেক্ষা করার যত ঘটনা (সিগন্যাল পাসড অ্যাট ডেঞ্জার বা স্প্যাড) ঘটে, তার অন্তত ১০ শতাংশ ক্ষেত্রে ব্যাপারটা দুর্ঘটনায় পর্যবসিত হয়। দু’টি ট্রেনের মধ্যে মুখোমুখি বা পিছনের দিক থেকে সংঘর্ষ হয়। লাইনচ্যুত হওয়ার মতো দুর্ঘটনাও ঘটে।

Advertisement

এত দিন সিগন্যালিং ব্যবস্থায় আগাম সতর্কতার বার্তা দেওয়ার ব্যবস্থা থাকলেও কোথাও ভুল হলে বিপদ ঠেকানোর উপায় ছিল না। এ বার ভারতীয় রেলে সেই সুরক্ষার উপায়ই বাতলে দিচ্ছে ‘কবচ’, নতুন এক নিরাপত্তা প্রযুক্তি। বেপরোয়া মনোভাব থেকেই হোক বা ভুলের পরিণাম, চালক সিগন্যাল উপেক্ষা করছেন— এমন আভাস পাওয়া মাত্র ট্রেন থামিয়ে দেবে এই নতুন প্রযুক্তি।

শুধু দুর্ঘটনা ঠেকানোই নয়, অ্যাবসলিউট ব্লক এবং অটোমেটিক ব্লক সিগন্যালের পর্ব পেরিয়ে মুভিং ব্লক সিগন্যালের যুগে পা দিতে চলছে ভারতীয় রেল। অতিব্যস্ত রুটগুলিতে নতুন প্রযুক্তির ব্যবহার শুরু হলে লাইনে ট্রেন ধারণের ক্ষমতা অনেক বাড়বে বলে জানাচ্ছেন পূর্ব রেলের জেনারেল ম্যানেজার অরুণ অরোরা। তিনি জানান, পূর্ব রেলের আওতায় হাওড়া-দিল্লি রুটের ২৬০ কিলোমিটার রেলপথ ওই প্রযুক্তির আওতায় আনার জন্য প্রয়োজনীয় দরপত্র ইতিমধ্যেই আহ্বান করা হয়েছে।

Advertisement

হাওড়া ও শিয়ালদহ শাখার শহরতলির ট্রেনকেও ওই নবপ্রযুক্তির আওতায় আনা হচ্ছে। খুব তাড়াতাড়ি তার দরপত্র আহ্বান করা হবে। শহরতলির ট্রেনের প্রায় ৩২৫ কিলোমিটার পথ ওই প্রযুক্তির আওতায় আসবে। তিন বছরের মধ্যে ওই কাজ সম্পূর্ণ হলে কার্যত মেট্রোর মতোই অল্প কয়েক মিনিট ব্যবধানে শহরতলির ট্রেন চালানো সম্ভব হবে বলে জানাচ্ছেন রেলকর্তারা। সংশ্লিষ্ট আধিকারিকদের ধারণা, শহরতলির ট্রেনের যাত্রী পরিবহণের ক্ষমতাও তখন অনেকটা বেড়ে যাবে।

বছর পাঁচেক আগে, পূর্ব রেলের জিএম অরোরা রেলের নয়াদিল্লি ডিভিশনের ম্যানেজার থাকার সময় ওই প্রযুক্তি নিয়ে পরীক্ষানিরীক্ষা শুরু হয়। নিজামুদ্দিন ও আগরা রুটে ঘণ্টায় ১৬০ কিলোমিটার গতিতে গতিমান এক্সপ্রেস ছোটানোর সময় ইউরোপীয় ট্রেন নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার আদলে এ দেশেও ট্রেন ‘প্রোটেকশন ওয়ার্নিং সিস্টেম’ নিয়ে কাজ শুরু হয়। পরে ওই প্রযুক্তির কিছুটা অদলবদল করে গড়ে তোলা হয় ‘কবচ’ সুরক্ষা। মূলত জিপিএস এবং আরএফআইডি প্রযুক্তির মেলবন্ধন নির্ভুল ভাবে দু’টি ট্রেনের মাঝখানের দূরত্ব নির্ণয় করতে পারে। রেললাইনে বসানো আরএফআইডি রিডার এবং ইঞ্জিনে বসানো ট্যাগের সাহায্যে ট্রেনের নির্ভুল অবস্থানের বার্তা পৌঁছয় স্টেশন কন্ট্রোলে। একই সঙ্গে চলার পথে সব সিগন্যালের রং এবং দূরত্ব চালক কেবিনে বসে দেখতে পান। আগে ফগ সেফ যন্ত্রে সিগন্যালের দূরত্ব জানা গেলেও রং জানা যেত না। কুয়াশায় নিরাপদে ট্রেন চালানোর ক্ষেত্রে ওই প্রযুক্তি তাই বিশেষ আদৃত হয়নি।

কবচ ব্যবস্থায় চালক সিগন্যাল উপেক্ষা করলে বা অসতর্কতাবশত বেশি গতিতে ট্রেন ছোটালে তা আপনা থেকেই থেমে যাবে। এড়ানো যাবে সিগন্যাল উপেক্ষার বিপত্তি।

রেল সূত্রের খবর, এত দিন চালকদের কড়া শাস্তি দিয়েই সিগন্যাল উপেক্ষার ভুল ঠেকানোর চেষ্টা হত। আবার প্রায়শই খারাপ আবহাওয়া এবং ক্লান্তির কারণে অনেক চালকের ওই ভুল হত। তাতে যাত্রীদের জীবন বিপন্ন হওয়ার আশঙ্কা থাকত। রেলের পরিসংখ্যান জানাচ্ছে, যে-সব চালক একটানা চার থেকে ছ’ঘণ্টা ট্রেন চালান, তাঁদের ক্ষেত্রে ওই ভুল হওয়ার প্রবণতা বাড়ে। নতুন প্রযুক্তি এই বিপত্তি এড়াতে সাহায্য করবে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement