আইএমএ-র মতে, করোনাভাইরাসের নতুন প্রজাতির কারণেই বৃদ্ধি পাচ্ছে সংক্রমণ। — ফাইল ছবি।
গত কয়েক দিন ধরে দেশে বৃদ্ধি পাচ্ছে কোভিড সংক্রমণ। রবিবার কোভিডে নতুন করে আক্রান্ত হয়েছিলেন ৫ হাজার ৩৫৭ জন। সোমবার সেই সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ৫ হাজার ৮৮০। গত এক দিনে দেশে কোভিডে মারা গিয়েছেন ১৪ জন। কেন ক্রমে দেশে কোভিড সংক্রমণ বৃদ্ধি পাচ্ছে, তারই কিছু সম্ভাব্য কারণ জানিয়েছে ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন (আইএমএ)। কোভিড বিধি এড়িয়ে চলাকে দায়ী করেছে এই সংগঠন। পাশাপাশি ভিড় জায়গায় মাস্ক পরার উপর জোর দিয়েছে।
কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক বলছে, সোমবার দেশে মোট দৈনিক সংক্রমিতের সংখ্যা ৩৫ হাজার ১৯৯। সংক্রমণের হার ৬.৯১ শতাংশ। তবে সুস্থতার হার ৯৮.৭৪ শতাংশ। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে ২০৫ জনকে কোভিড টিকা দেওয়া হয়েছে। এখন পর্যন্ত মোট ২২০ কোটি ৬৬ লক্ষ ২৩ হাজার ৫২৭ টিকা দেওয়া হয়েছে। তার পরেও বৃদ্ধি পাচ্ছে কোভিড। আইএমএ-র মতে তার বেশি কিছু সম্ভাব্য কারণ রয়েছে। কোভিড বিধিতে ঢিলেমি অন্যতম। আইএমএ জানিয়েছে, নাগরিকেরা কোভিড বিধি ঠিক মতো মেনে চলছেন না। কোভিড পরীক্ষার হারও কমে গিয়েছে। অনেকেই কোভিডের লক্ষণ থাকলেও আর পরীক্ষা করাতে চাইছেন না। এর ফলে করোনাভাইরাস দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে।
আইএমএ-র মতে, করোনাভাইরাসের নতুন প্রজাতির কারণেই বৃদ্ধি পাচ্ছে সংক্রমণ। তারা জানিয়েছে, করোনাভাইরাস ক্রমেই বিয়োজিত হচ্ছে। এর ফলে নতুন প্রজাতির জন্ম হচ্ছে। মনে করা হচ্ছে করোনাভাইরাসের নতুন প্রজাতি এক্সবিবি.১.১৬ আগের প্রজাতিগুলির থেকে অনেক বেশি সংক্রামক। ভাইরাস বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, নতুন এই প্রজাতির কারণে দেশে ফের মাথাচাড়া দিয়েছে কোভিড। অন্তঃসত্ত্বা মহিলা, ৬০ বছরের বেশি যাঁদের বয়স, যাঁদের দীর্ঘদিন ধরে অন্য অসুখ রয়েছে, তাঁদের ঝুঁকি বেশি। এই নাগরিকদের রক্ষা করা দরকার। সে কারণে বেশ কিছু উপায় বাতলে দিয়েছে আইএমএ।
আইএমএ জানিয়েছে, কিছু সাবধানতা অবলম্বন করলে কোভিড সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে থাকবে।
জ্বর, কাশি, গলা ব্যথা, মাথা যন্ত্রণা, শরীরে ব্যথা, স্বাদ, গন্ধ চলে গেলে, শ্বাসকষ্ট হলে কোভিড পরীক্ষা করাতে হবে।
হাত ভাঁজ করে মুখে চেপে কাশতে হবে। নয়তো কাশির সময় মুখে টিস্যু চেপে ধরতে হবে। সেই টিস্যু মুখ বন্ধ কোনও আবর্জনা পাত্রে ফেলতে হবে।
বার বার হাত ধুতে হবে। অ্যালকোহল রয়েছে, এমন স্যানিটাইজ়ার দিয়ে ২০ সেকেন্ড ধরে হাত ধুতে হবে। সাবান দিয়ে ৪০ সেকেন্ড ধরে হাত ধুতে হবে।
ভিড় জায়গায় মাস্ক পরতে হবে।
ভিড় জায়গা এড়িয়ে চলতে হবে। যেখানে বায়ু চলাচলের ভাল ব্যবস্থা নেই, সে সব জায়গাও এড়িয়ে চলতে হবে। কোভিড সংক্রমণ রোখার ক্ষেত্রে বায়ু চলাচলের বড় ভূমিকা রয়েছে। সেই কারণে স্প্লিট এসি বা ফ্যান রয়েছে এমন বদ্ধ ঘরে অনেকে থাকলে, না যাওয়াই ভাল। কারণ, সে সব জায়গায় দূষিত বায়ু পরিশোধন হয় মাত্র। ঘর থেকে বেরোতে পারে না।
অন্তত এক মিটার দূরত্ব বিধি মেনে চলা উচিত। জড়িয়ে ধরা, চুম্বন, করমর্দন এড়িয়ে চলা ভাল।
প্রকাশ্য স্থানে থুতু না ফেলাই ভাল।
চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে বুস্টার ডোজ নেওয়া দরকার।
কোভিড সংক্রমণ প্রতিরোধে অ্যান্টিবায়োটিকের কোনও ভূমিকা নেই।
স্যালাইন জল বা অ্যান্টিসেপটিক নিয়ে নাক ধুলে সংক্রমণ হবে না, এমন কোনও প্রমাণ নেই।
আইএমএ-র তরফে বলা হয়েছে, সর্বোপরি আতঙ্কিত হবেন না। এর আগেও অতিমারি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে। মানুষ সাহায্য করলে ভবিষ্যতেও হবে।