বিপুল রায়ের ছবির সামনে মেয়ে তামান্না। নিজস্ব চিত্র
ফাদার্স ডে-র মর্মার্থ জানে না পাঁচ বছরের তামান্না। সে শুধু জানে, বাবা ছুটিতে এলেই বাড়ি খুশিতে গমগম করে। বাবা এলেই তার অনেক আবদার মেটে। মা শিখিয়ে দেওয়ায় গত বছর তামান্না ২১ জুন, ফাদার্স ডে-তে বাবাকে প্রণাম করেছিল। বাবা কোলে নিয়ে খুব আদর করেছিলেন।
বছর ঘুরে আজ, রবিবার আবার সেই দিন। কিন্তু, নেই বাবা। শনিবার মা সে-কথা মনে করিয়ে দেওয়ায় চুপ করে থাকে তামান্না। একটু ভেবে জানাল, বাবা অনেক দূরে চলে গিয়েছে আকাশের তারা হয়ে। বারান্দায় বাবার ছবির সামনে ছুটে গিয়ে কিছু ক্ষণ চুপ করে দাঁড়াল। তার পরেই মায়ের আঁচলে মুখ লুকলো তামান্না। চোখের জল সামলাতে পারলেন না লাদাখে নিহত জওয়ান, আলিপুরদুয়ারের বিপুল রায়ের স্ত্রী রুম্পা।
আলিপুরদুয়ার থেকে অনেক দূরে, বীরভূমের মহম্মদবাজারে বেলগড়িয়া গ্রামে ছেলের স্মৃতি আঁকড়ে বাঁচতে চাইছেন আর এক নিহত জওয়ান রাজেশ ওরাংয়ের মা। তিন দিনের জনজোয়ার শেষ। গ্রাম এখন নিস্তব্ধ। সেই গ্রামেরই ছেলে রাজেশের বাড়িতে এ দিন দেখা গেল, বারান্দার সামনে রাখা হয়েছে তাঁর ছবি। সাজানো ফুল দিয়ে। বাড়ির ভিতরে শো-কেসের সামনে রাখা হয়েছে রাজেশের শেষ স্মৃতিচিহ্ন, পরনের পোশাক, বেল্ট, টুপি ও মেডেল। মা মমতাদেবী বললেন, ‘‘ছেলেটা হারিয়ে গেল সারা জীবনের মতো। প্রশাসনের পক্ষ থেকে যদি গ্রামে রাজেশের কোনও স্মৃতিচিহ্ন তৈরি করে, তা হলে সকলের কাছেই বেঁচে থাকবে আমার ছেলে।’’
আরও পড়ুন: স্মৃতি আঁকড়ে বাঁচতে চান রাজেশের মা
রাজ্যের দুই জওয়ানের নিহত হওয়ার খবর জানাজানির পরেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করেছিলেন, দুই পরিবারকে পাঁচ লক্ষ করে টাকা এবং পরিবারের এক জনকে সরকারি চাকরি দেওয়া হবে। সেই মতো কাজ এগিয়ে রাখল প্রশাসন। শনিবার শেষকৃত্য সম্পন্ন হওয়ার পরে বিন্দিপাড়া গ্রামে গিয়ে বিপুলের স্ত্রীর হাতে চাকরির ‘অফার লেটার’ তুলে দেন পর্যটনমন্ত্রী গৌতম দেব। পাঁচ লক্ষ টাকার চেক তুলে দেওয়া হয় এ দিন বিকেলে। একই ভাবে রাজেশ ওরাংকে সমাধিস্থ করার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই তাঁর বোন শকুন্তলাকে চাকরি দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করল বীরভূম জেলা প্রশাসন। এ দিন দুপুরে মহকুমাশাসকের (সিউড়ি সদর) কাছে চাকরির আবেদনপত্র-সহ প্রয়োজনীয় নথি জমা দেন শকুন্তলা। শুক্রবারই তাঁরা ৫ লক্ষ টাকার চেক পেয়েছেন।