প্রতীকী ছবি।
লকডাউনে দূষণ কমেছে ঠিকই। কিন্তু দার্জিলিং ও লাগোয়া পূর্ব হিমালয়ে বেড়ে গিয়েছে এরোসলের (ধূলিকণা) পরিমাণ। সম্প্রতি একটি গবেষণায় এমনই দাবি করেছেন বোস ইনস্টিটিউটের পরিবেশবিজ্ঞানী অভিজিৎ চট্টোপাধ্যায়। গবেষণাপত্রটি অ্যাটমস্ফেরিক এনভায়রনমেন্ট নামে একটি আন্তর্জাতিক জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। ওই গবেষণায় বলা হয়েছে, গাড়িঘোড়া কম চলার কারণে নাইট্রোজেন অক্সাইড যৌগ বাতাসে কম মিশেছে। দূষণের নিরিখে তা ভাল। কিন্তু সেই যৌগ হ্রাস পাওয়ার কারণেই ধূলিকণা বেড়েছে। বাতাসে বাড়তি ধূলিকণা অতিরিক্ত পরিমাণে মেঘ তৈরি করবে এবং বৃষ্টি ঝরাবে।
ন্যাশনাল ক্লিন এয়ার প্রোগ্রামের পশ্চিমবঙ্গের নোডাল সায়েন্টিস্ট অভিজিৎবাবু বলছেন, “গাড়ি কমালেই এরোসলের মাত্রা কমবে এমন নয় বিশেষত যেখানে এরোসলের উৎস রয়েছে। বায়ুদূষণের ক্ষেত্রেও এই ধরনের উৎসগুলিকে গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন।” তিনি জানান, নাইট্রোজেন অক্সাইড যৌগ বাতাসে মিশলে তা ওজ়োন গ্যাসকে ভেঙে দেয়। লকডাউনে নাইট্রোজেন অক্সাইড যৌগ কম তৈরি হওয়ায় দার্জিলিং পাহাড়ে ওজ়োন গ্যাসের পরিমাণ বেশি ছিল। এটাই এরোসলের পরিমাণ বাড়াতে মূল ভূমিকা নিয়েছে। কারণ, পাহাড়ের একটি নির্দিষ্ট উচ্চতার পর পাইন বা ধুপি গাছের বনাঞ্চল রয়েছে। এই গাছগুলি থেকে নানান ধরনের ‘ভোলাটাইল অরগ্যানিক কম্পাউন্ড’ (ভিওসি) নির্গত হয়। সূর্যালোকের উপস্থিতিতে ওজ়োন গ্যাস গাছ থেকে নির্গত ভিওসি-কে জারণ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এরোসলে রূপান্তরিত করে।
তিনি জানান, এরোসলের পরিমাণ বাড়লে জলবাহী মেঘপুঞ্জ তৈরিতে সাহায্য করে। তার ফলে বৃষ্টি মিলতে পারে। প্রসঙ্গত, এ বার উত্তরবঙ্গের পাহাড়ে ও ডুয়ার্সে বর্ষার মরসুমে স্বাভাবিকের থেকে প্রায় ৩৫% বেশি বৃষ্টি হয়েছে। অতিরিক্ত বৃষ্টি কি দার্জিলিংকে বিপদে ফেলবে কি না, সেই প্রশ্নও উঠেছে। কারণ, পাহাড়ে মেঘভাঙা বৃষ্টির আশঙ্কা থাকে। পাহাড়ে অতিবৃষ্টি হলে নদী বেয়ে সেই জল তরাইয়ে বানভাসি পরিস্থিতি তৈরি করে।
অভিজিৎবাবুও বলছেন, বৃষ্টি হওয়া ভাল। কিন্তু এরোসল মারাত্মক বেড়ে গেলে বিপদ তৈরি করতে পারে। তা ছাড়া, বৃষ্টির উপকারিতা সংশ্লিষ্ট এলাকার ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্যের উপরে নির্ভরশীল। সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভ থেকেও ভিওসি নির্গত হয়ে একই ভাবে মেঘ তৈরি করতে পারে। সেখানে ভারী বৃষ্টি যত সুবিধা দেবে পাহাড়ে তা দেবে না।
আরও পড়ুন:গুদাম থেকেই বাজি বিক্রি