—ফাইল চিত্র।
রাজ্যের রাজনৈতিক পরিস্থিতির বদল হয়েছে দ্রুত। এতটাই দ্রুত যে, পরিষদীয় রাজনীতির সেই পরিবর্তনের সঙ্গে এখনও সে-ভাবে সড়গড় হয়ে উঠতে পারেনি বঙ্গ বিজেপি। বিধানসভার চলতি বাজেট অধিবেশনে সেটা ক্রমশ প্রকট হচ্ছে। সে-ক্ষেত্রে দলের অন্দরের চর্চায় ‘অনভিজ্ঞতা’ই উঠছে কাঠগড়ায়। তবে ধীরে ধীরে তা কাটিয়ে ওঠা যাবে বলে দাবি বাংলার বিজেপি নেতৃত্বের।
২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে রাজ্য বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষের সঙ্গে জিতেছিলেন মনোজ টিগ্গা ও স্বাধীন সরকার। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, রাজ্যে বিজেপি শক্তির বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গেই সভাপতি হওয়ার সুবাদে পরিচিত মুখ ছিলেন দিলীপবাবু। ফলে বিধানসভার অন্দরের কাজকর্মে তাঁকে সে-ভাবে যোগ দিতে দেখা না-গেলেও অন্য রাজনৈতিক দলের কাছে ‘গুরুত্ব’ পেতেন তিনি। যা চলতি অধিবেশনে দেখা যাচ্ছে না। এমনকি কখনও কখনও বক্তৃতায় বিজেপি-কে নিশানা করতে গিয়ে ‘দিলীপ’-এর নামোচ্চারণ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পাল্টা সাড়া দিয়ে দলের বিরুদ্ধে অভিযোগ খারিজ করতে দেখা গিয়েছে তৎকালীন বিধায়ক দিলীপবাবুকে। কিন্তু বুধবার বিধানসভায় মুখ্যমন্ত্রী বিজেপি-কে নিশানা করলেও সে-ভাবে তা খারিজ করতে দেখা যায়নি বিধানসভায় বিজেপির বর্তমান পরিষদীয় দলনেতা মনোজবাবুকে। বেশ কিছু পরে এক বাম বিধায়কের পরামর্শে মনোজবাবু মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য খণ্ডন করার চেষ্টা করলেও তাঁর আওয়াজ বিধানসভা কক্ষে উপস্থিত বিধায়কদের বিশেষ নজর কাড়তে পারেননি। তা স্বীকার করছেন বিজেপির রাজ্য নেতৃত্বও।
চলতি বাজেট অধিবেশনে শক্তি বৃদ্ধি হয়েছে বিজেপির। বর্তমানে ছ’জন বিধায়ক তাদের। তা নিয়ে বুধবার বিধানসভায় মুলতুবি প্রস্তাব এনেছিলেন মনোজবাবুরা। কিন্তু বিধানসভার স্পিকার তা খারিজ করে দিলেও কার্যত সেটা বুঝতে না-পেরে নিজেদের আসনেই বসে পড়েন তাঁরা। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, এই ধরনের পরিস্থিতিতে মুলতুবি প্রস্তাব খারিজ হলেও তা নিয়ে হইচই করতে দেখা যায় সংশ্লিষ্ট দলের বিধায়কদের। কাটমানি সংক্রান্ত ছোট পোস্টার আনলেও ‘বোঝাপড়া’র অভাবে তা নিয়ে হইচই করতে পারেননি বিজেপি বিধায়কেরা। তা মেনে নিয়ে মনোজবাবু বলেন, ‘‘ঠিক বোঝা যায়নি। আস্তে আস্তে ঠিক হবে।’’
কংগ্রেসের বাগদার বিধায়ক দুলাল বরকে তৃণমূলের কার্যালয়ে দেখা গিয়েছিল। পরে বিজেপির সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠতা বাড়ে। বিধানসভার অন্দরে কোনও সমস্যা হলে দুলালবাবুর সঙ্গেই কথা বলছেন মনোজবাবুরা। সেই দুলালবাবুও বলছেন, ‘‘নতুন তো! সমস্যা হচ্ছে। পরের অধিবেশনেই সমস্যা থাকবে না।’’ অনভিজ্ঞতাই যে সমস্যা তৈরি করছে, তা মানছেন দিলীপবাবুও। তাঁর কথায়, ‘‘মনোজদের সঙ্গে বসতে হবে। পরিষদীয় কাজকর্ম নিয়ে আলোচনা করতে হবে। কখনই এই কাজকর্ম ওরা করেনি। ধীরে ধীরে সব শিখে যাবে।’’
দলের বিধায়কের সংখ্যা বেড়েছে। তৃণমূলের কয়েক জন বিধায়ক বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন। তাই ঘরের আয়তন বাড়াতে বিধানসভার সচিবলায়ের কাছে আবেদন করেছেন মনোজবাবু। ঘরের আয়তন বাড়ানোর পাশাপাশি ১০টি চেয়ার, একটি কম্পিউটার এবং এক জন সহকারী দিতেও অনুরোধ করেছেন তিনি।