‘উত্তম স্মরণ সন্ধ্যা’
বাঙালির মননে, চিন্তনে আজও বিরাজমান মহানায়ক উত্তম কুমার। সময়ের স্রোতে পেরিয়ে গিয়েছে ৪৪টা বছর, তবুও মনের মণিকোঠায় উজ্জ্বল নক্ষত্রের ন্যায় তার অবস্থান, এক কথায় ‘মৃত্যুহীন প্রাণ’।
প্রতি বছরের মতো এ বছরেও মহানায়কের ৪৪তম প্রয়াণ দিবসে তাঁকে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করতে গত ২৪ জুলাই, কলকাতার উত্তম মঞ্চে বিকেল ৫টায় সুন্দর এক সাংস্কৃতিক সন্ধ্যের আয়োজন করেছিল ‘উত্তম মেমোরিয়াল কালচারাল কমিটি’। ‘উত্তম স্মরণ সন্ধ্যা’ অনুষ্ঠানটির টাইটেল স্পনসর ছিল ‘র্যাফ্ট কসমিক ইভি’।
অনুষ্ঠানের শুভ সূচনা
বিগত বছরগুলির মতোই প্রতি বছরের মতোই অনুষ্ঠানে উঠে এসেছিল মহানায়কের স্মৃতির সঙ্গে জড়িয়ে থাকা নানান গল্প। কথায়-গল্পে-গানে মঞ্চস্থ হল তাঁর অমর সব সৃষ্টি। মহানায়কের ছায়াছবির গান আজও কোহিনূরের মতো বাংলা গানকে এখনও সমৃদ্ধ করে রেখেছে। তাঁর দেখানো পথে হেঁটেই প্রতি বছর এই সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
পাশাপাশি চলতে থাকে বিভিন্ন সমাজসেবামূলক কর্মকাণ্ডও। বাংলা ছায়াছবির সঙ্গে যুক্ত থাকা বয়স্ক বা অসুস্থ এবং অবসরপ্রাপ্ত শিল্পীদের আর্থিক ও স্বাস্থ্য পরিষেবা প্রদান করা হয়। এই বছর সম্মানিত করা হয় ‘রমেশ অধিকারী’ এবং ‘সুকুমার বোস’কে। যাঁরা দীর্ঘদিন ধরে মহানায়কের ছবিতে অ্যাসিস্ট্যান্টের ভূমিকায় কাজ করেছেন।
রমেশ অধিকারী
এই বছরেও ছিল প্রেক্ষাগৃহে উপচে পড়া ভিড় সঙ্গে বহু গুণী মানুষের সমাগম। মহানায়কের সৃষ্টি নিয়েই সেজে উঠেছিল এই সাংস্কৃতিক সন্ধ্যার মঞ্চ।
অনুষ্ঠানটির সভাপতি দেবাশিষ কুমার জানিয়েছেন, “এই মঞ্চটি উত্তম কুমার দেখে যেতে পারেননি। কিন্তু উত্তম কুমারকে স্মরণ রেখেই তরুণ কুমার ও সত্য বন্দ্যোপাধ্যায় এই মঞ্চটি তৈরি করেছিলেন। পরবর্তীকালে কলকাতা পুরসভা এটিকে অধিগ্রহণ করেছে। প্রতি বছরেই অত্যন্ত যত্ন ও নিষ্ঠার সঙ্গে এই দিনটি উত্তম মঞ্চে পালিত হয়। একটা মানুষ ৪৪ বছর নেই, কিন্তু এই প্রেক্ষাগৃহে এত মানুষের উপচে পড়া ভিড় দেখে তা মনে হচ্ছে না। বাংলা চলচ্চিত্রে বহু নায়ক এসেছেন, আগামী দিনেও আরও অনেকে আসবেন কিন্তু মহানায়ক একজনই থাকবেন, তিনি উত্তম কুমার।”
সভাপতি দেবাশিষ কুমার
গানে গানে মহানায়ককে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করেছেন সৈকত মিত্র, রূপঙ্কর বাগচী, লোপামুদ্রা মিত্র, মনোময় ভট্টাচার্য, পৌষালী বন্দোপাধ্যায়, মাধুরী দে, গৌরব সরকার, শ্রীরাধা বন্দোপাধ্যায়, অরিত্র দাশগুপ্ত, সপ্তক, জয়তী চক্রবর্তী, গুরজিৎ সিং, বাবুল সুপ্রিয় এবং সিসপিয়া বন্দোপাধ্যায়। এ ছাড়াও অতিথি আসনে উপস্থিত ছিলেন দেবলীনা কুমার, নীল ভট্টাচার্য্য ও তৃণা সাহা সহ অনেকেই।
অনুষ্ঠানের প্রধান পৃষ্ঠপোষক কার্তিক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, “মুকুটটা তো পরেই আছে, রাজাই শুধু নেই। বাংলা ভাষা, বাঙালি যতদিন থাকবে উত্তম কুমার মানুষের মনে ততদিন থেকে যাবে।”
এই বছর উত্তম কুমারের স্মরণে জীবনকৃতি পুরস্কার অর্থাৎ ‘লাইফটাইম অ্যাচিভমেন্ট অ্যাওয়ার্ড’ দেওয়া হল বর্ষীয়ান অভিনেত্রী লিলি চক্রবর্তীকে।
বর্ষীয়ান অভিনেত্রী লিলি চক্রবর্তী
তিনি জানিয়েছেন, “৩৫ বছর হয়ে গেল কাজ করছি কিন্তু আজও উত্তম কুমারের মতো কাউকে পায়নি। ওনার আশীর্বাদের হাত আজও আমাদের মাথার ওপর আছে। আজকের দিনটা আমাদের কাছে অত্যন্ত বেদনাদায়ক। এখনও ওনাকে স্মরণ করেই সব কাজ করি।”
সুকুমার বোস
অন্য দিকে, আগামী ৩ সেপ্টেম্বর উত্তমকুমারের ৯৮তম জন্মদিবস উপলক্ষে উত্তম মঞ্চে আয়োজিত হতে চলেছে আরও একটি অনুষ্ঠান। যেখানে প্রতি বছরের মতো এ বারেও মহানায়ক উত্তমকুমারের কিছু গান ও তাঁর সংলাপে ডালি সাজানো হবে। অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে উঠে আসবে বাংলা ছায়াছবিতে মহানায়কের সৃষ্টি করা কিছু বিশেষ কীর্তি।
অনুষ্ঠানের ডিজিটাল মিডিয়া পার্টনার ছিল আনন্দবাজার অনলাইন।