CPIM

এখন ‘নব্য ফ্যাসিবাদে’র বিপদ, নয়া বার্তা কারাটদের

মাদুরাইয়ে দলের আসন্ন ২৪তম পার্টি কংগ্রেসের জন্য খসড়া রাজনৈতিক প্রতিবেদনে আরএসএস-বিজেপির কাজকর্মকে ‘নব্য ফ্যাসিবাদী’ বলে আখ্যা দিয়েছে সিপিএম।

Advertisement

সন্দীপন চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ০১ মার্চ ২০২৫ ০৪:৪৮
Share:

সিপিএমের এ বারের রাজ্য সম্মেলনে প্রকাশ কারাট। —নিজস্ব চিত্র।

বাংলায় শাসক তৃণমূল কংগ্রেসের পাশাপাশি বিজেপি-বিরোধিতার সুর তীব্র করার ডাক দিয়েছে সিপিএম। রাজ্যের সঙ্গে জাতীয় স্তরেও আরএসএস-বিজেপির মোকাবিলায় বাড়তি গুরুত্ব দিয়েই এ বার পার্টি কংগ্রেসে যাচ্ছে তারা। মাদুরাইয়ে দলের আসন্ন ২৪তম পার্টি কংগ্রেসের জন্য খসড়া রাজনৈতিক প্রতিবেদনে আরএসএস-বিজেপির কাজকর্মকে ‘নব্য ফ্যাসিবাদী’ বলে আখ্যা দিয়েছে সিপিএম। কেন তারা এই নয়া ফ্যাসিবাদের কথা বলছে, তার ব্যাখাও তৈরি হয়েছে দলে তরফে। ডানকুনিতে দলের সদ্যসমাপ্ত রাজ্য সম্মেলনে এই বিষয়ে অবস্থান স্পষ্ট করে দিয়েছেন সিপিএমের পলিটব্যুরোর কো-অর্ডিনেটর প্রকাশ কারাটও।

Advertisement

পার্টি কংগ্রেসের খসড়া রাজনৈতিক প্রতিবেদনে কেন ‘নব্য ফ্যাসিবাদে’র কথা বলা হচ্ছে, সেই সম্পর্কে তিন পাতার একটি ‘নোট’ দলের সব রাজ্য কমিটির কাছে পাঠিয়েছে সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটি। পার্টি কংগ্রেসের আগে রাজ্য সম্মেলনের অবসরে দলের অন্দরে এই বিষয়ে মনোভাব পরিষ্কার করে দেওয়ার লক্ষ্যেই এমন উদ্যোগ। সূত্রের খবর, কলকাতার নিউ টাউনে গত জানুয়ারিতে কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে যখন পার্টি কংগ্রেসের খসড়া রাজনৈতিক প্রতিবেদন চূড়ান্ত করার আলোচনা হয়েছিল, তখনই দলের কেউ কেউ প্রশ্ন তুলেছিলেন ‘নব্য ফ্যাসিবাদ’ নিয়ে। কারাট সেই বৈঠকে জানিয়েছিলেন, প্রতিবেদনে কেন তাঁরা এই কথা বলছেন, তা আলাদা করে ব্যাখ্যা করে দেওয়া হবে। সেই মতোই ‘নোট’ তৈরি হয়েছে। সেখানে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে, সিপিআইয়ের ‘ফ্যাসিবাদী’ বা সিপিআই (এম-এল) লিবারেশনের ‘ভারতীয় ফ্যাসিবাদে’র তত্ত্বের চেয়ে সিপিএমের বক্তব্য পৃথক।

কারাটদের এই উদ্যোগের কথা জেনে তৃণমূল কংগ্রেস তাদের সমাজমাধ্যম শাখার মাধ্যমে আক্রমণে নেমেছে, আরএসএস-বিজেপিকে ‘ফ্যাসিবাদী’ বলতে নারাজ সিপিএম! এতেই দু’পক্ষের ‘আঁতাঁত’ স্পষ্ট! যার জবাবে আবার সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক ও পলিটব্যুরো সদস্য মহম্মদ সেলিম বলছেন, ‘‘আমরা নারাজ কোথায়? বরং, এক ধাপ এগোলাম। আগে আধিপত্যবাদী, স্বৈরাচারী শাসনের কথা বলেছি। দেশে যা চলছে, তার প্রেক্ষিতে এখন নয়া ফ্যাসিবাদী চরিত্রের কথা বলছি। নিজেদের রাজনৈতিক বোধ, মতাদর্শের দৃষ্টিকোণ থেকে স্থানীয় বৈশিষ্ট্য ধরেই কমিউনিস্ট পার্টি বিচার-বিশ্লেষণ করে।’’

Advertisement

সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির ওই ‘নোটে’ বলা হয়েছে, এর আগে ২২তম পার্টি কংগ্রেসে ‘উদীয়মান ফ্যাসিবাদী বৈশিষ্ট্য’ এবং ২৩তম পার্টি কংগ্রেসে ‘মোদী সরকার আরএসএসের ফ্যাসিবাদী পরিকল্পনা রূপায়ণ করছে’ বলা হয়েছিল। এ বার ‘নব্য ফ্যাসিবাদী বৈশিষ্ট্যে’র কথা বলা হয়েছে। ‘নোট’ অনুযায়ী: ‘আমরা মোদী সরকারকে ফ্যাসিবাদী বা নব্য ফ্যাসিবাদী বলছি না। বা ভারতকেও নব্য ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্র বলছি না। আমরা দেখাতে চাইছি, আরএসএসের রাজনৈতিক শাখা বিজেপির ১০ বছরের শাসনের পরে রাজনৈতিক যাবতীয় ক্ষমতা তাদের হাতে কেন্দ্রীভূত হয়েছে এবং তাতে নব্য ফ্যাসিবাদী লক্ষণ ফুটে উঠছে’।

সূত্রের খবর, এই ‘নোটে’র সূত্র ধরেই কিছু উদাহরণ তুলে ধরে সিপিএমের রাজ্য সম্মেলনে বিষয়টির আরও ব্যাখ্যা দিয়েছেন কারাট। সেখানে তিনি বলেছেন, ‘এটা নতুন ধরনের ফ্যাসিবাদ, যেটা অতীতের ফ্যাসিবাদজাত হলেও যান্ত্রিক ভাবে এদের তুলনা চলে না। অতীতের ফ্যাসিবাদ ক্ষমতা দখলের পরে বুর্জোয়া গণতন্ত্রকে খতম করে দিয়েছিল। নয়া ফ্যাসিবাদীরা নির্বাচনে জিতে বলে আমরা সংসদ বা নির্বাচনও বজায় রাখব, কারণ তারা জানে যে, একুশ শতকে বৈধতা পেতে গেলে নির্বাচন জরুরি। আমরা তাই বলছি, শাসক গোষ্ঠীর পরিচালনার ধাঁচটা নয়া ফ্যাসিবাদী’। তাঁর আরও বক্তব্য, ‘তারা নির্বাচন কমিশন, আইন-আদালতের উপরে নিয়ন্ত্রণ চাইছে, বিরোধীদের ভয় দেখাচ্ছে। বৃহত্তর ঐক্য গড়ে যদি এই প্রবনতাকে রুখতে না পারি, তবে নয়া ফ্যাসিবাদ আমাদের দেশে কায়েম হবে’। গত লোকসভা ভোটে বিজেপি একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা না-পেয়ে এনডিএ শরিকদের উপরে নির্ভরশীল হওয়ায় অনেকে মনে করেছিলেন এই ধরনের কম ঘটনা কম ঘটবে কিন্তু বাস্তবে এনডিএ শরিকদের সেই নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা বা ইচ্ছা কোনওটাই নেই— তা-ও উল্লেখ করেছেন কারাট।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement