কাজ কই? কড়া ধমক মুখ্যমন্ত্রীর

এ দিন পঞ্চায়েতের কাজে বাড়তি নজরদারির জন্য পাঁচ জন মন্ত্রীকে নিয়ে পৃথক একটি কমিটি গড়ে দিয়েছেন মমতা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৪ অগস্ট ২০১৮ ০৩:২৪
Share:

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ফাইল চিত্র।

মাস দুয়েক আগে প্রশাসনিক পর্যালোচনা বৈঠকে সব দফতরের কাজের ভূয়সী প্রশংসা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। গোটা দেশে এমন কাজ আর কোথাও হচ্ছে না বলেও দাবি ছিল তাঁর। সেই মত বদলে গেল হঠাৎই। বৃহস্পতিবার নবান্ন সভাঘরে সামাজিক উন্নয়নের সঙ্গে যুক্ত দফতরগুলির সঙ্গে বৈঠকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বুঝিয়ে দেন, যে ভাবে কাজ হচ্ছে, তাতে তিনি খুশি নন। এমনকি, তাঁর হাতে থাকা স্বাস্থ্য দফতরের কাজ নিয়েও সংশয় প্রকাশ করেছেন তিনি। এ দিন পঞ্চায়েতের কাজে বাড়তি নজরদারির জন্য পাঁচ জন মন্ত্রীকে নিয়ে পৃথক একটি কমিটি গড়ে দিয়েছেন মমতা।

Advertisement

সূত্রের খবর, শিক্ষা দফতরের অফিসারেরা এ দিন মুখ্যমন্ত্রীর প্রশ্নের মুখে পড়েন। শিক্ষামন্ত্রীর উদ্দেশে ক্ষুব্ধ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, শিক্ষা দফতর ‘ঘুঘুর বাসা’ হয়ে যাচ্ছে। কেন শিক্ষকদের বদলির ফাইল পড়ে থাকছে, কেন অফিসারেরা মন্ত্রীর নির্দেশ উপেক্ষা করছেন— এ সব নিয়েও প্রশ্ন তুলছেন মমতা। দফতরের এক বিশেষ সচিবকে রীতিমতো ভর্ৎসনা করেছেন তিনি। মন্ত্রীর সম্মতির পরেও এক অধ্যাপকের বিশেষ ছুটির আবেদনে সংশ্লিষ্ট অফিসার সায় দিতে চাননি বলে অভিযোগ। ওই অফিসার অবশ্য তখনই গোটা পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করেন। স্কুলগুলিতে পঠনপাঠনের মান আরও বাড়ানোর নির্দেশ দিয়েছেন মমতা।

সূত্রের দাবি, স্বাস্থ্য দফতরের পরিচালন ব্যবস্থা আরও সক্রিয় করার উপর জোর দিয়েছেন মমতা। বৈঠকে তিনি জানিয়েছেন, শুধু মন্ত্রী বা সচিব সব কাজ দেখভাল করবেন এমনটা নয়। মধ্যবর্তী আধিকারিকদেরও সমান দায়িত্ব নিয়ে কাজ করতে হবে। সে ব্যাপারে এখনও ঘাটতি রয়েছে।

Advertisement

আরও পড়ুন: মুখ্যমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে জট কাটল স্টুডিওপাড়ায়, শুটিং শুরুর ঘোষণায় স্বস্তি সব মহলেই

ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের সচিবের প্রশংসা করলেও জেলা স্তরের অফিসারদের একাংশ যে সৎ ভাবে কাজ করছেন না, এ দিন সেই তথ্য নিজেই তুলে ধরেন মমতা। রাজ্য প্রশাসনের একটি অংশের ধারণা, সরকারি জমি অনৈতিক ভাবে ব্যবহার বা বেহাত হওয়ার নানা অভিযোগ নবান্নে এসেছে। তাতে রাশ টানতেই এ কথা বলেছেন মমতা। পাশাপাশি, পুকুর ভরাটের প্রসঙ্গ টেনে অফিসারদের সতর্ক করেছেন তিনি।

সূত্রের খবর, শহর এবং রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে রাস্তার হাল নিয়েও বেজায় ক্ষুব্ধ মুখ্যমন্ত্রী। এ দিনের বৈঠকে উপস্থিত কলকাতার মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়কে কার্যত এড়িয়ে গিয়েই পুর কমিশনার খলিল আহমেদকে খারাপ রাস্তার কারণ নিয়ে প্রশ্ন করেন তিনি। পূর্ত দফতরের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন মমতা।

আরও পড়ুন: মাওবাদী ও বিজেপি হাত মিলিয়েছে, দাবি পার্থর

পরিবহণ নিগমগুলিকে কেন এখনও ভর্তুকি দিতে হচ্ছে, তা জানতে চান মমতা। প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে ক্ষতিগ্রস্ত চাষিরা সকলে সময়মতো ক্ষতিপূরণ কেন পাচ্ছেন না, সে প্রশ্নও তোলেন তিনি। সেচ সফতরের অতিরিক্ত মুখ্যসচিব নবীন প্রকাশকে মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ, তিনি যেন কৃষি দফতরের কাজকর্মও দেখভাল করেন। আধিকারিকদের একটি অংশের অনুমান, বর্তমান কৃষিসচিব নন্দিনী চক্রবর্তীর ভূমিকায় সন্তুষ্ট নন বলেই এমন নির্দেশ মমতার। চালকলগুলি সরকারি বিধি না মানলে রাজ্য পুলিশের ডিজি-কে কড়া পদক্ষেপ করার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।

পঞ্চায়েতের কাজ তদারকির জন্য এ দিন পৃথক একটি কমিটি গড়ে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। কমিটিতে রয়েছেন পঞ্চায়েতমন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়, পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম, পূর্তমন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস, খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক এবং পরিবহণমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী। বৈঠক শেষে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘জলাধারগুলিতে কোন সময় কত জল থাকছে এবং সেগুলির স্বাস্থ্য কেমন তা জানাতে বলা হয়েছে। জেলাশাসক থেকে ব্লক উন্নয়ন আধিকারিক স্তর পর্যন্ত সব অফিসার ডেঙ্গি, অজানা জ্বর, মিড-ডে-মিল, আইসিডিএস প্রক্রিয়ার উপর নজর রাখবেন।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement