এখনও চলছে ‘রেল রোকো’ অভিযান। —নিজস্ব চিত্র।
কুড়মি আন্দোলন পা দিল পঞ্চম দিনে। সাধারণ মানুষের ভোগান্তির পাঁচ দিন পরেও কিন্তু এখনই জট কাটছে না। কর্মসূচি প্রত্যাহারের নামগন্ধ নেই। এ নিয়ে কুড়মি সমাজের মূল নেতা অজিতপ্রসাদ মাহাতো বলেন, ‘‘সিআরআইয়ের রিপোর্টে ত্রুটি রয়েছে। যে চিঠি আমাদের দেওয়া হয়েছে সেটি পুরনো চিঠি। কেন এটা মানব?’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘অনগ্রসর কল্যাণ দফতরের সঙ্গে একটি বৈঠক রয়েছে পুরুলিয়া জেলাশাসকের দফতরে। দেখি কী হয়। আমাদের দাবি কত দিনের মধ্যে পূরণ করা সম্ভব, সেটি স্পষ্ট করে জানাতে হবে সরকারকে। তবেই আমরা অবরোধ তোলার কথা ভাবব।’’ এই অবরোধ আর কত দিন ধরে চলবে, এই বিষয়ে প্রতিক্রিয়া নিতে পুরুলিয়ার জেলাশাসক রজত নন্দাকে ফোন করা হলে তিনি ফোন ধরেননি।
অন্য দিকে, কুড়মি আন্দোলনের জেরে সমস্যায় পড়েছেন বিভিন্ন পণ্যবাহী গাড়ির চালক ও খালাসিরা। ৬ নম্বর জাতীয় সড়কে খেমাশুলির কাছে সড়কপথ অবরুদ্ধ। খেমাশুলি স্টেশনেও ‘রেল রোকো’ কর্মসূচি চলছে সেই মঙ্গলবার থেকে। সে দিন সকাল ৬টা থেকেই স্তব্ধ খড়্গপুরের দিক থেকে যাওয়া মুম্বইগামী এবং ঝাড়গ্রামে উদ্দেশে যাওয়া খড়্গপুরগামী পণ্যবাহী গাড়ি।
আন্দোলনের জেরে বাতিল একগুচ্ছ ট্রেন। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
পেট্রোপণ্য, ফল-সহ বিভিন্ন সামগ্রী নিয়ে সমস্যায় পড়েছেন লরিচালকরা। খড়্গপুরের দিক থেকে একের পর গাড়ি দাঁড়াতে দাঁড়াতে লাইন পৌঁছে গিয়েছে ডেবরা টোল প্লাজা পর্যন্ত। অন্য দিকে, ঝাড়গ্রামের দিকেও কয়েক কিলোমিটার রাস্তায় আটকে রয়েছে গাড়ি। যে সব এলাকায় খাবারের দোকান, ধাবা ইত্যাদি রয়েছে, সেখানেও আটকে পড়া গাড়িচালক এবং খালাসিরা পড়েছেন সমস্যায়। পানীয় জলের সন্ধানে তিন থেকে পাঁচ কিলোমিটার রাস্তা অতিক্রম করে বালতিতে করে নিয়ে আসছেন সেই জল। কাছেপিঠে খাবারের দোকান না থাকায় সমস্যায় পড়েছেন তাঁরা। অতিরিক্ত খরচ করে দূর থেকে খাবার আনতে হচ্ছে তাদের। কেউ কেউ আবার লরি দাঁড় করিয়ে পাশেই রান্নার জোগাড় শুরু করেছেন। উত্তরপ্রদেশের বাসিন্দা নভবিত কুমার, পাপ্পু যাদব, অশ্বিন কুমারের মতো লরি চালক ও খালাসিরা জানাচ্ছেন, এ ভাবে টানা চার দিন আটকে থাকতে হবে ভাবেননি। শৌচকর্ম থেকে পানীয় জলের সমস্যা রয়েছে। খাবার কিনতে হচ্ছে অতিরিক্ত টাকা দিয়ে।
অন্য দিকে, কুড়মি সমাজের রাজ্য সম্পাদক রাজেশ মাহাতো বলেন, ‘‘দাঁড়িয়ে থাকা পণ্যবাহী গাড়ির চালক ও খালাসিদের কাছে ক্ষমাপ্রার্থী। সরকার সদর্থক ভূমিকা পালন করলে আন্দোলন প্রত্যাহার করে নেওয়া হবে।’’
কুড়মি জাতিকে তফসিলি জনজাতি সম্প্রদায়ভুক্ত করা এবং কুড়মালি ভাষাকে সংবিধানের অষ্টম তফসিলের অন্তর্ভুক্তির দাবিতে গত চার দিন ধরে রাজ্যের নানা প্রান্তে বিক্ষোভ শুরু হয়েছে। যার জেরে কার্যত অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছে পশ্চিম মেদিনীপুর এবং ঝাড়গ্রাম জেলার মাঝে খেমাশুলি এলাকা।