স্বাস্থ্য বিলের প্রস্তাবিত দাওয়াই শুধু হাসপাতালের অনিয়ম-অনাচার বন্ধ করার জন্য। এবং এই উদ্যোগে চিকিৎসকদের স্বার্থে কোনও আঘাত লাগবে না বলে নবান্নের সর্বোচ্চ স্তর থেকে বারবার আশ্বাস দেওয়া হচ্ছে ঠিকই। কিন্তু তাতে আশঙ্কা কাটছে না চিকিৎসকদের একাংশের।
চিকিৎসকদের সংগঠন ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন বা আইএমএ-র সর্বভারতীয় শাখা তাই স্বাস্থ্য বিলের কিছু অংশ সংশোধনের দাবিতে অটল। এ ব্যাপারে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে সরাসরি আলোচনা চান বলে তাঁকে চিঠি দিয়েছেন আইএমএ-র সর্বভারতীয় সভাপতি কে কে অগ্রবাল।
আইএমএ-র কেন্দ্রীয় শাখা সূত্রে বলা হয়, তাদের কর্মসিমিতির বৈঠক হবে ১ এপ্রিল। বিধানসভায় যে-স্বাস্থ্য বিল পাশ হয়েছে, তা নিয়ে পরবর্তী কর্মসূচি কী হবে, সেটা ঠিক হবে ওই বৈঠকেই। বিলের ‘চিকিৎসক-স্বার্থ বিরোধী’ অংশগুলি বাদ দেওয়ার জন্য সংগঠনের কেউ কেউ কলকাতা হাইকোর্টে মামলা করার দাবি তুলেছেন। এ-সব বিতর্ক এড়াতেই আইএমএ-র মুখ্যমন্ত্রীর সময় চেয়ে চিঠি দিয়েছেন সর্বভারতীয় সভাপতি।
আরও পড়ুন: মার্চেই গরমের দাপট, কালবৈশাখীর আশায় বাংলা
আইএমএ-র খবর, গত ১৮ মার্চ কলকাতায় থাকাকালীন মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার জন্য সময় চেয়েছিলেন অগ্রবাল। রাজ্যপালের সঙ্গে কথা হলেও মুখ্যমন্ত্রীর দেখা পাননি তিনি। আইএমএ-র কেন্দ্রীয় শাখা চায়: l সামান্য কারণে চিকিৎসকদের যেন জেলে ঢোকানো না-হয়। l কোনও ঘটনায় সংশ্লিষ্ট চিকিৎসককে যেন একাধিক বার ক্ষতিপূরণ দিতে না-হয়। l যদি কেউ ইচ্ছাকৃত ভাবে ডাক্তারের বিরুদ্ধে ভুয়ো অভিযোগ আনেন, তাঁরও যেন শাস্তি হয়। এগুলো স্বাস্থ্য বিলের সংশোধনীতে সংযোজন করা হোক।
সরকার বারবার আশ্বাস দেওয়া সত্ত্বেও আইএমএ-র কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের মনোভাবে স্বাস্থ্য ভবন খুবই বিস্মিত। এক স্বাস্থ্যকর্তা জানান, স্বাস্থ্য বিলে যে-কমিশন গঠনের কথা বলা হয়েছে, তাতে এটা স্পষ্ট যে, কমিশন চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে ওঠা কোনও অভিযোগের তদন্ত করবে না। চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে ওঠা যাবতীয় অভিযোগের তদন্ত করবে মেডিক্যাল কাউন্সিল। মুখ্যমন্ত্রীও বারবার চিকিৎসকদের অভয় দিয়েছেন। বলেছেন, বেসরকারি হাসপাতালের বিরুদ্ধে অভিযোগ এলে আগে খতিয়ে দেখা হবে। তার পরে ব্যবস্থা। কেউ মিথ্যা অভিযোগ করলে তার বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও নবান্নের সর্বোচ্চ মহল থেকে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। তবু আইএমএ-র কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব বিষয়টি নিয়ে এমন অনড় মনোভাব দেখাচ্ছেন কেন, তা বুঝতে পারছেন না স্বাস্থ্যকর্তারা।
আইএমএ-র কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের বক্তব্য, দুর্বৃত্তদের সঙ্গে চিকিৎসকদের এক করে ফেলার চেষ্টা হচ্ছে বলে মনে করছেন ডাক্তারদের একাংশ। যদি কোথাও ভুল বোঝাবুঝি হয়ে থাকে, মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেই তা মিটিয়ে নিতে চান আইএমএ-র কেন্দ্রীয় শাখার নেতারা।