অবৈধ ভাবে তোলা টাকা লগ্নি মদের ব্যবসায়

আইজি-র দাবি, কেবল রাজস্থান থেকেই ১০০ কোটি টাকা তুলেছে ওই গোষ্ঠী। ফেরত দিয়েছে মাত্র সাত কোটি টাকা। রাজস্থানে তারা বেআইনি কারবার করেছে ২০১০ থেকে ২০১৪-র মধ্যে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৫ নভেম্বর ২০১৭ ০৩:৪১
Share:

প্রতীকী ছবি।

অন্য সংস্থার বন্ধ হয়ে যাওয়া মদের কারখানাই ছিল তাদের লক্ষ্য। সে রকম কিছু কারখানা কিনে নতুন ভাবে উৎপাদন চালু করেছিল পিনকন গোষ্ঠী। এই ভাবে বিটি রোড ও মধ্যমগ্রামে বাংলা মদের কারখানা ও রাজারহাট, হাওড়া, ডানকুনিতে বিলিতি মদের কারখানা কিনে ওই সংস্থা তার অনেকগুলিতেই জোরদার উৎপাদন শুরু করে দিয়েছিল। তাক লেগে গিয়েছিল অনেকের। এত মূলধন আসছে কোথা থেকে?

Advertisement

বৃহস্পতিবার বেঙ্গালুরুতে ওই সংস্থার কর্ণধার, কলকাতার বাসিন্দা মনোরঞ্জন রায় ও আরও চার অংশীদার রাজস্থান পুলিশের হাতে গ্রেফতার হওয়ার পর সেই প্রশ্নের উত্তর খানিকটা পাওয়া যাচ্ছে বলে তদন্তকারীদের একাংশের বক্তব্য। তাঁরা জানাচ্ছেন, দেশের বিভিন্ন প্রান্তে অর্থলগ্নি সংস্থার ১০০-রও বেশি শাখা অফিস খুলে লাখ তিনেক মানুষের কাছ থেকে ১ হাজার ৬০০ কোটি টাকা বেআইনি ভাবে তোলা হয়েছে। সেই টাকারই একাংশ ঢুকেছে পশ্চিমবঙ্গে সংস্থার মদের ব্যবসায়।

তদন্তকারীরা জেনেছেন, রাজস্থান, কর্নাটক-সহ অন্য পাঁচটি রাজ্যে অর্থলগ্নি সংস্থা খুলে দু’বছরে দ্বিগুণ ফেরত দেওয়ার মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দেওয়া হতো। তবে, তদন্তকারীদের জেরার সময়ে পিনকনের কর্ণধারের দাবি, তাঁর সংস্থা দেশ থেকে ৫০০ কোটি টাকা তুলেছে।

Advertisement

এই রাজ্যে তিনটি ব্র্যান্ড-এর বাংলা মদ এবং ভদকা, হুইস্কি ও রাম উৎপাদন করে ওই সংস্থা। একই সঙ্গে উৎপাদন করা হয় সোডা ও বোতলবন্দি পানীয় জলও। একটা সময়ে গুঁড়ো মশলা, রান্নার তেলেরও ব্যবসা ছিল সংস্থাটির। সেই সময়ে, ২০০৮ সালে কলকাতা পুলিশের হাতে মনোরঞ্জন গ্রেফতার হন ব্যাঙ্কে জাল নথি দিয়ে মোটা টাকা তোলার অভিযোগে। তার চার বছর আগেও জালিয়াতির একটি মামলায় তিনি কলকাতায় গ্রেফতার হয়েছিলেন।

অজমেঢ়ের এক বাসিন্দার কাছ থেকে ৭৬ লক্ষ টাকার প্রতারণার অভিযোগ পেয়ে পিনকনের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করে রাজস্থান পুলিশের স্পেশাল অপারেশনস গ্রুপ। শুক্রবার মনোরঞ্জন-সহ ধৃত পাঁচ জনকে জয়পুরের একটি আদালতে হাজির করানো হয়। বিচারক তাঁদের ছ’দিনের জন্য পুলিশি হেফাজতে পাঠান।

শনিবার রাজস্থান পুলিশের এসওজি-র আইজি এম এন দীনেশ জানান, অজমেঢ়, জোধপুর, কোটা, ঢোলপুর, বান্দিকুই, নেবাই-সহ বিভিন্ন জায়গায় ছ’টি আর্থিক সংস্থা খুলেছিল পিনকন গোষ্ঠী। ওই আর্থিক সংস্থাগুলির ১১টি শাখা থেকে মোটা টাকা ফেরতের টোপ দিয়ে টাকা তোলা হতো। আইজি-র দাবি, কেবল রাজস্থান থেকেই ১০০ কোটি টাকা তুলেছে ওই গোষ্ঠী। ফেরত দিয়েছে মাত্র সাত কোটি টাকা। রাজস্থানে তারা বেআইনি কারবার করেছে ২০১০ থেকে ২০১৪-র মধ্যে। বছর তিনেক আগে রাজস্থানের শাখা অফিসগুলি বন্ধ করে দেয় পিনকন। সেই সময় থেকেই আমানতকারীরা টাকা ফেরত পাচ্ছেন না।

শেক্সপিয়র সরণির কাছে পিনকন-এর কয়েকটি অফিস আছে। রাজস্থান পুলিশ সেখানে তল্লাশির জন্য শহরে আসতে পারে।

রাজস্থান পুলিশ সূত্রের খবর, নোটবন্দির সময়ে পিনকন গোষ্ঠী কয়েকটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের অফিসারদের সঙ্গে যোগসাজসে কোটি কোটি টাকা অবৈধ লেনদেনও করেছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement