সুন্দরবনের যত্রতত্র অবৈধ নির্মাণ রুখতে রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ যথেষ্ট সক্রিয় না-হওয়ায় বারবার ক্ষোভ প্রকাশ করেছে জাতীয় পরিবেশ আদালত। এ বার তারা প্রশ্ন তুলল, বেআইনি হোটেল মন্দারমণির পরিবেশ নষ্ট করছে, অথচ ওই নিয়ন্ত্রক পর্ষদ হাত গুটিয়ে বসে আছে কেন?
আদালতের পর্যবেক্ষণ, নিয়মবিধি ভেঙে ওই সব হোটেল তো এক দিনে গড়ে ওঠেনি। নির্মাণ পর্বে পর্ষদ বাধা দেয়নি কেন? গড়ে ওঠার পরেই বা পর্ষদের চোখের সামনে মন্দারমণিতে এত দিন ধরে ছাড়পত্রহীন হোটেল চলছে কী ভাবে? প্রশ্ন তুলেই ক্ষান্ত হয়নি আদালত। পর্ষদের জ্ঞাতসারেই যে বহু বেআইনি হোটেল গড়ে তোলা হয়েছে, সেই দিকে আঙুল তুলেছে তারা। সেই সঙ্গে কলকাতার জাতীয় পরিবেশ আদালতের বিচারপতি এস পি ওয়াংদি এবং বিশেষজ্ঞ-সদস্য পি সি মিশ্রের ডিভিশন বেঞ্চের ইঙ্গিত, গাফিলতি প্রমাণ হলে পর্ষদের জরিমানা করা হতে পারে।
মন্দারমণির পরিবেশ সংক্রান্ত মামলায় ওই এলাকার হোটেলগুলির ছাড়পত্র সংক্রান্ত তথ্য জানতে চেয়েছিল ন্যাশনাল গ্রিন ট্রাইব্যুনাল বা পরিবেশ আদালত। সেই মামলায় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ আদালতে জানায়, ৭৪টি হোটেলের কোনও ছাড়পত্র তারা দেয়নি। আদালত মঙ্গলবার প্রশ্ন তোলে, ছাড়পত্র ছাড়াই ওই সব হোটেল গড়ে উঠল এবং রমরমিয়ে সেগুলো চলছে কী ভাবে? পর্ষদ হস্তক্ষেপ করেনি কেন? তার পরেই পর্ষদের তরফে গাফিলতি হয়েছে বলে ইঙ্গিত দেয় ক্ষুব্ধ ডিভিশন বেঞ্চ।
আদালতে পর্ষদের ব্যাখ্যা ছিল, অনুমতি না-নিয়েই যে-সব হোটেল কাজ চালাচ্ছে, সেগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। কিন্তু এই বক্তব্য আদালতকে সন্তুষ্ট করতে পারেনি। মন্দারমণি সংক্রান্ত মামলার আবেদনকারীর কৌঁসুলি সোমনাথ রায়চৌধুরী জানান, ছাড়পত্র না-নেওয়া যে-সব হোটেলের নাম পর্ষদের তালিকায় আছে, মামলায় তাদের যুক্ত করতে বলা হয়েছে।
বিধি ভাঙা হোটেল মন্দারমণির পরিবেশ নষ্ট করছে কী ভাবে? পরিবেশবিদেরা বলছেন, উপকূলের পরিবেশ রক্ষার তাগিদেই বেলাভূমি থেকে নির্দিষ্ট দূরত্বে নির্মাণকাজ চালানোর নিয়ম বেঁধে দেওয়া হয়েছে। কারণ, বিশ্ব উষ্ণায়নের জেরে আগামী দিনে সাগরে ঘূর্ণিঝ়ড়ের প্রকোপ বাড়বে। তাতে ভীষণ ভাবে বিপন্ন হয়ে পড়তে পারে মন্দারমণির মতো উপকূল এলাকা। এই পরিস্থিতিতে উপকূল এলাকার পরিবেশ রক্ষায় বিশেষ ভাবে জোর দিতে বলছে আন্তর্জাতিক পরিবেশ গবেষণা সংস্থাগুলি। কিন্তু নিয়মের তোয়াক্কা না-করে গত এক দশকে মন্দারমণিতে গাছ কেটে সমুদ্রের একেবারে ধারে যে-ভাবে হোটেল গড়ে উঠেছে, তাতে পরিবেশ পুরোপুরি বিপন্ন হয়ে পড়ছে। পরিবেশকর্মীদের অভিযোগ, বালিয়াড়ি ও গাছপালা সামুদ্রিক ঝড় বা জলোচ্ছ্বাস থেকে ওই এলাকাকে অনেকটাই রক্ষা করত। কিন্তু বিধি ভেঙে দেদার হোটেল তৈরি করতে গিয়ে সেই সব বালিয়াড়ি ও গাছপালা ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে।