সাফল্য আইআইটি-র
করোনা নমুনা পরীক্ষার জন্য গবেষণাগারের পরিকাঠামোর প্রয়োজন নেই। কিন্তু আরটি-পিসিআরের সমকক্ষ ফলই মিলবে। কম খরচে এবং অল্প সময়ে আরএনএ-ভাইরাস রোগ নির্ণয়ে সক্ষম একটি যন্ত্র উদ্ভাবন করেছে আইআইটি-খড়গপুর। শনিবার ভার্চুয়াল সাংবাদিক বৈঠকে সে কথা জানিয়ে আইআইটি খড়গপুরের মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক সুমন চক্রবর্তী বলেন, ‘‘কোভিড শুধু নয়, যে কোনও আরএনএ-ভাইরাস জনিত রোগ নির্ণয় করতে পারে আমাদের যন্ত্র। পাঁচশোটি নমুনার ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে পজ়িটিভ বা নেগেটিভ নির্ণয়ে আরটি-পিসিআরের পরীক্ষার ফলের সঙ্গে আমাদের যন্ত্রের রিপোর্টের একশো শতাংশ মিল রয়েছে।’’ যন্ত্রটির দাম আনুমানিক দু’হাজার টাকা। প্রতি নমুনা পরীক্ষায় ৪০০ টাকা খরচ পড়বে বলে গবেষকেরা জানিয়েছেন।
রাজ্যে এখন গড়ে প্রতি দিন ১৫ হাজার নমুনা পরীক্ষা হচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, ১৫ অগস্টের মধ্যে প্রতি দিন ২৫ হাজার নমুনা পরীক্ষার লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে এগোচ্ছে রাজ্য। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, এখন বঙ্গে সংক্রমণ যে ভাবে ঊর্ধ্বমুখী গতিতে দৌড়চ্ছে তাতে শুধু আরটি-পিসিআরে ভরসা রাখলে চলবে না। যার প্রেক্ষিতে কম সময়ে অধিক নমুনা পরীক্ষার জন্য র্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্টের সংখ্যাবৃদ্ধিতে জোর দিচ্ছে স্বাস্থ্য দফতর। কিন্তু র্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্টে নমুনা পরীক্ষার রিপোর্ট পজ়িটিভ এলে সমস্যা নেই। কিন্তু রিপোর্ট নেগেটিভ হলে তা ফের আরটি-পিসিআরে পরীক্ষা করা বাধ্যতামূলক। সেই নিরিখে আইআইটি-খড়গপুরের মাইক্রোফ্লুইডস ল্যাবে তৈরি যন্ত্রটি মুশকিল আসান হয়ে উঠতে পারে, জানান গবেষকেরা।
সুমনবাবুর বক্তব্য, করোনা পরীক্ষার ক্ষেত্রে আরটি-পিসিআর হল খাঁটি সোনা (গোল্ড স্ট্যান্ডার্ড)। কিন্তু তার জন্য গবেষণাগারের যে পরিকাঠামো প্রয়োজন, তা প্রত্যন্ত এলাকায় গড়ে তোলা সম্ভব নয়। কিন্তু তাঁদের যন্ত্রটি একটি টেবিলে রেখে মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে এক ঘণ্টার মধ্যে পরীক্ষার ফল জানিয়ে দেওয়া যাবে। তার জন্য খুব বেশি প্রশিক্ষণ বা দক্ষতার প্রয়োজন নেই। ন্যূনতম প্রশিক্ষণে গ্রামীণ স্বাস্থ্যকর্মীরা যাতে সহজে ব্যবহার করতে পারেন, যন্ত্রটি সে ভাবে তৈরি হয়েছে। সুমনবাবুর কথায়, ‘‘নমুনা পরীক্ষা শেষে রঙের মাধ্যমে সংকেত দেবে যন্ত্রটি। সেই সঙ্কেত পড়ে নমুনা পরীক্ষার রিপোর্ট পজ়িটিভ নাকি নেগেটিভ তা যন্ত্রের সঙ্গে যুক্ত মোবাইলের অ্যাপ জানিয়ে দেবে।’’ গবেষকেরা জানান, যন্ত্রটি চালাতে খুব বেশি বিদ্যুতেরও প্রয়োজন হয় না। এখন একসঙ্গে তিনটি নমুনা পরীক্ষা করতে সক্ষম যন্ত্রটি। কিন্তু তা বাড়িয়ে প্রতি ঘণ্টায় একসঙ্গে দশটি নমুনা পরীক্ষা করা যেতে পারে।’’
আরও পড়ুন: একদিনে ৩ মৃত্যু শহরে
তবে সংক্রমিত ব্যক্তির নমুনা সংগ্রহ করে যন্ত্রটি সমান কার্যকর ফল দিচ্ছে কি না, তা গবেষকেরা দেখেননি। গবেষণার সঙ্গে যুক্ত স্কুল অব বায়ো সায়েন্সের প্রফেসর তথা ভাইরোলজিস্ট অরিন্দম মণ্ডল বলেন, ‘‘সংক্রমিত ব্যক্তির নমুনা পরীক্ষার সুযোগ গবেষণাগারে ছিল না। তার জন্য ভাইরাল আরএনএ’র অনুরূপ সিন্থেটিক আরএনএ তৈরি করে গবেষণা করা হয়েছে।’’
আইআইটি-খড়গপুরের অধিকর্তা বীরেন্দ্র কুমার তিওয়ারি বলেন, ‘‘মানবদেহের নমুনা পরীক্ষার ক্ষেত্রে এই যন্ত্র কেমন কাজ করছে তার জন্য সরকারের সাহায্য প্রয়োজন। কেন্দ্র-রাজ্য সরকার যদি সংক্রমিত ব্যক্তির নমুনায় যন্ত্রের কার্যকারিতা প্রমাণে এগিয়ে এলে প্রত্যন্ত এলাকাতেও করোনা পরীক্ষা সহজ হয়ে যাবে।’’