সৌরভ নিজে বলেন, “পুলিশ তদন্ত করছে। তাতে যেমন যা জানা যাবে, প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে সে ভাবেই পদক্ষেপ করা হবে।” অভিযুক্ত অধ্যাপককে ফোন করা হলে তিনি কথা বলতে চাননি। শুভদীপের মা বলেন, “যার জন্য ছেলেকে হারাতে হল, তার কঠিন শাস্তি চাই।”
গবেষক শুভদীপ রায়ের অপমৃত্যুর বিচার চেয়ে মিছিল-বিক্ষোভ হল হরিণঘাটায় আইসার ক্যাম্পাসে। সোমবার ল্যাবে তাঁর দেহ মেলে। মঙ্গলবার থেকে উত্তাল হয় ক্যাম্পাস। ইনসেটে, শুভদীপ। ছবি সমাজমাধ্যম থেকে সংগৃহীত।
এক গবেষকের অস্বাভাবিক মৃত্যুর বিচার চেয়ে উত্তাল হল হরিণঘাটায় আইসার কলকাতা ক্যাম্পাস। সোমবার ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউটস অব সায়েন্টিফিক এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চ (আইসার)-এর ল্যাবে গবেষক শুভদীপ রায়ের মৃতদেহ মেলে। তাঁর বন্ধু-স্বজনদের একাংশের অভিযোগ, রিসার্চ গাইডের সহযোগিতা না পেয়ে তিনি আত্মহত্যা করেছেন। ‘সুইসাই়ড নোট’-এ সে কথা লিখেও গিয়েছেন।
মঙ্গলবার রাতে ক্যাম্পাসে মোমবাতি ও মোবাইল টর্চ জ্বেলে মিছিল করা হয়। বুধবার অ্যাডমিন কমপ্লেক্স, রিসার্চ কমপ্লেক্স, লেকচার হল বন্ধ করে অবস্থান বিক্ষোভ করা হয়।
শুভদীপের বন্ধু ও জুনিয়রদের কাছ থেকে জানা যায়, রবিবার অনেক রাত পর্যন্ত ল্যাবে ছিলেন তিনি। পরদিন বেলা ১১টাতেও ল্যাবের দরজা না খোলায় ধাক্কাধাক্কি করে ঢুকে দেখা যায়, মুখে প্লাস্টিক জড়ানো অবস্থায় তিনি পড়ে আছেন। সহপাঠীদের অনুমান, হাইড্রোজেন সালফাইড গ্যাস তৈরি করে তা প্লাস্টিক প্যাকেটে ভরে তিনি শ্বাস নিয়েছেন। পরে হরিণঘাটা গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে গেলে তাঁকে ‘মৃত’ ঘোষণা করা হয়। সে দিনই মৃতদেহের অটোপসি করানো হয়। মঙ্গলবার কল্যাণী পুলিশ মর্গে মৃতদেহের ময়নাতদন্ত হয়েছে।
আইসার সূত্রে জানা যায়, ২০১৪ সালে আইসার কলকাতায় ফিজিক্যাল সায়েন্সে ইন্টিগ্রেটেড পিএইচ ডি কোর্সে ভর্তি হন শুভদীপ। ২০১৫-তে তিনি এক অধ্যাপকের তত্ত্বাবধানে গবেষণা শুরু করেন। তাঁর পরিবার ও সহপাঠীদের একাংশের অভিযোগ, ওই অধ্যাপক গবেষণার কাজে সাহায্য করতেন না। নিজেই পেপার লিখে প্রকাশ করতেন শুভদীপ। এ নিয়ে তাঁর মানসিক চাপের কথা বন্ধুবান্ধবেরাও জানতেন। শুভদীপের মা রঞ্জনা রায় মঙ্গলবার দুপুরেই হরিণঘাটা থানার মোহনপুর তদন্ত কেন্দ্রে ওই অধ্যাপকের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন। আত্মহত্যার প্ররোচনার মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ।
বুধবার রঞ্জনা বলেন, “পুলিশের কাছে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, সুইসাইড নোট পাওয়া গিয়েছে কি না। ওরা একটি ছবি দেখিয়ে জিজ্ঞাসা করে, ‘এটা আপনার ছেলের হাতের লেখা?’ আমি বলি, ‘হ্যাঁ’। সেখানে লেখা ছিল— ওই অধ্যাপকের জন্য পিএইচ ডি করতে পারল না, তাই আত্মহত্যা করল।”
বুধবার বিকালের দিকে আইসার কলকাতার অধিকর্তা সৌরভ পাল বিক্ষোভে শামিল ছাত্র-গবেষকদের সঙ্গে কথা বলেন। শুভজিতের বন্ধু দেবজিৎ গুহ বলেন, “স্যর নিশ্চিত করেছেন যাতে শুভদীপের অপমৃত্যুর বিচার হয়, কোনও হস্তক্ষেপ যাতে না হয় উনি দেখবেন।” সৌরভ নিজে বলেন, “পুলিশ তদন্ত করছে। তাতে যেমন যা জানা যাবে, প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে সে ভাবেই পদক্ষেপ করা হবে।” অভিযুক্ত অধ্যাপককে ফোন করা হলে তিনি কথা বলতে চাননি। শুভদীপের মা বলেন, “যার জন্য ছেলেকে হারাতে হল, তার কঠিন শাস্তি চাই।”