কলকাতা হাই কোর্টে।
নিম্ন আদালতের বিচারক কোনও অভিযোগ পেয়ে তদন্ত করার নির্দেশ দিলে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পুলিশকে এফআইআর দায়ের করতে হবে। কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি জয়মাল্য বাগচীর সাম্প্রতিক একটি পর্যবেক্ষণের ভিত্তিতে রাজ্যের সব জেলার পুলিশ সুপার, রেল পুলিশ সুপার ও পুলিশ কমিশনারদের এমনই বার্তা পাঠানো হয়েছে। ৯ জুলাই ওই বার্তা পাঠিয়েছেন হাইকোর্টের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) শাশ্বতগোপাল মুখোপাধ্যায়।
পিপি জানান, মালদহের চাঁচল থানার এক নাবালিকাকে যৌন নিগ্রহের ঘটনায় গত বছরের ১৩ জানুয়ারি সেখানকার নিম্ন আদালতের বিচারক পুলিশকে এফআইআর দায়ের করে তদন্তের নির্দেশ দেন। পুলিশ এফআইআর দায়ের করে গত সেপ্টেম্বরে। ওই ঘটনায় অভিযুক্ত আগাম জামিনের আবেদন করেন। জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহে আগাম জামিনের মামলার শুনানি ছিল বিচারপতি জয়মাল্য বাগচী ও বিচারপতি মনোজিৎ মণ্ডলের ডিভিশন বেঞ্চে। পিপি জানান, শুনানির সময় বিচারপতি বাগচী পর্যবেক্ষণ করেন, পুলিশের উচিত ছিল ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এফআইআর দায়ের করে তদন্ত শুরু করতে। ওই পর্যবেক্ষণের জেরেই পুলিশের কাছে বার্তা পাঠানো হয়েছে বলে পিপি জানান।
আইনজীবীদের একাংশ জানান, দেশের ফৌজদারি কার্যবিধির ১৫৬ (৩) ধারায় বলা রয়েছে, পুলিশ কোনও অভিযোগ নিতে অস্বীকার করলে নিম্ন আদালতের বিচারকের (ম্যাজিস্ট্রেট) কাছে সেই অভিযোগ জানানো যায়। বিচারক সেই অভিযোগ পেয়ে তাকে ধর্তব্যযোগ্য মনে করলে পুলিশকে নির্দেশ দেবেন এফআইআর দায়ের করে তদন্ত শুরু করতে। যদিও কত ক্ষণ বা কত দিনের মধ্যে এফআইআর দায়ের করতে হবে তা ফৌজদারি বিধিতে লেখা নেই বলে আইনজীবীরা জানান। আইনজীবীদের অভিযোগ, পুলিশের একাংশ আইনের ফাঁকের সুবিধা নিয়ে এফআইআর দায়ের করতে অনেক সময় দেরি করে। তার ফলে অনেক সময়েই অভিযোগকারী যার বিরুদ্ধে অভিযোগ জানিয়েছেন সেই অভিযুক্ত বাড়তি সুবিধা নেন।
কী রকম বাড়তি সুবিধা? হাইকোর্টের আইনজীবী সায়ন দে জানান, অভিযুক্ত পালাতে পারেন। তিনি প্রমাণ লোপাট করে দিতে পারেন। তিনি পুলিশকে হাত করে মামলা লঘু করে দিতে পারেন। মামলার সাক্ষীদের উপর প্রভাব খাটাতে পারেন।
বিচারকের নির্দেশে সঙ্গে সঙ্গে এফআইআর দায়ের করলে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে সাক্ষ্যপ্রমাণ জোগাড় করতে তদন্তকারীদের সুবিধা হয় বলে আইনজীবীরা জানান। চাঁচল থানার ঘটনায় এফআইআর দায়ের করতে পুলিশ দেরি করায় তদন্তের ক্ষতি হতে পারে বলে আইনজীবীরা মনে করছেন।