চম্পই সোরেন। — ফাইল চিত্র।
ঝাড়খণ্ডের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী চম্পই সোরেনের বিজেপিতে যোগদান এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা। বিজেপি শিবির সূত্রে খবর, আগামী ৩০ অগস্ট রাঁচিতে ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চা ছেড়ে বিজেপিতে যোগদান করবেন এই প্রবীণ আদিবাসী নেতা। এমন একজন গুরুত্বপূর্ণ আদিবাসী নেতার দলবদলের প্রভাব পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে পড়তে পারে বলে মনে করছেন রাজ্য বিজেপি নেতাদের একাংশ। কারণ, ঝাড়খণ্ডের রাজনীতি তো বটেই পশ্চিমবঙ্গের আদিবাসী সমাজের কাছেও নেতা হিসেবে চম্পইয়ের গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। ঝাড়খণ্ডের আদিবাসী অধ্যুষিত জেলা দেওঘর, জামতাড়া, পাকুড়, গোড্ডা সাহেবগঞ্জ এবং দুমকাতে চম্পইয়ের প্রভাব চোখে পড়ার মতো। সেই সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলিতে বসবাসকারী আদিবাসীদের মধ্যেও গ্রহণযোগ্য নেতা তিনি। ঝাড়গ্রাম, পশ্চিম মেদিনীপুর, বাঁকুড়া এবং পুরুলিয়া জেলায় আদিবাসীদের বাস। চম্পই দলে এলে এই সব জেলায় বিজেপি আবারও নিজেদের হারানো রাজনৈতিক জমি পুনরুদ্ধার করতে পারে বলেই মনে করছেন রাজ্য বিজেপির নেতাদের একাংশ।
চম্পইকে বিজেপিতে যোগদান করাতে মূলত তিন জন বিজেপি নেতার বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। প্রথম জন কেন্দ্রীয় পঞ্চায়েত মন্ত্রী শিবরাজ সিংহ চৌহান, দ্বিতীয় জন অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা এবং তৃতীয় জন পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চা ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে চম্পই কলকাতা এসে শুভেন্দুর সঙ্গে বৈঠক করে গিয়েছেন। তার পর দিল্লি গিয়ে শিবরাজের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে বিজেপিতে যোগদানের পথ প্রশস্ত করে এসেছেন। যে হেতু শুভেন্দুকে বিজেপি এই ‘অপারেশন লোটাস’-এ বড় ভূমিকা নিতে নির্দেশ দিয়েছে, তাই চম্পইকে বাংলার আদিবাসী অধ্যুষিত জেলাগুলিতে কাজে লাগানোর ভাবনাটি ইন্ধন পেয়েছে বলেই মনে করছেন রাজ্য বিজেপির নেতাদের একাংশ ।
বাংলার এক বিজেপি নেতার কথায়, ‘‘২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের সময় ঝাড়খণ্ডে বিজেপির সরকার ছিল। ফলস্বরূপ জঙ্গলমহলের ছয়টি লোকসভা আসনের মধ্যে পাঁচটিতে জয় পেয়েছিল বিজেপি। কিন্তু ওই বছর অক্টোবর মাসে ঝাড়খণ্ডে সরকার বদল হয়। ক্ষমতায় আসে ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চার অধীনে হেমন্ত সোরেন সরকার। ফলস্বরূপ ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচন এবং ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির ফল খারাপ হয়েছে। এ বারের লোকসভা নির্বাচনে তো ওই এলাকার মাত্র দু’টি আসনে জয় পেয়েছে বিজেপি। তাই আমরা মনে করছি, ঝাড়খণ্ডের আগামী বিধানসভা নির্বাচনে যদি বিজেপি সরকার গঠন করতে পারে, তা হলে ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে জঙ্গলমহলের রাজনৈতিক জমি ফিরে পেতে আমাদের সুবিধা হবে।’’ এ ক্ষেত্রে চম্পইয়ের মতো প্রবীণ আদিবাসী নেতা যদি বিজেপির সঙ্গে থাকেন তা হলে ২০২৬ পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনে পদ্মশিবিরের আদিবাসীদের সমর্থন ফিরে পাওয়ার সুযোগ তৈরি হবে। চম্পইয়ের বিজেপিতে যোগদান নিয়ে তাঁর ভূমিকা রয়েছে বলে স্বীকার করতে চাননি শুভেন্দু। কিন্তু চম্পইয়ের দলবদলে যে জঙ্গলমহলের রাজনীতির সমীকরণে বদল আসবে, সে বিষয়ে নিশ্চিত নন্দীগ্রামের বিধায়ক।
ঝাড়খণ্ডের আদিবাসী সমাজে চম্পইয়ের পরিচিতি ‘টাইগার’ নামে। ২০১৯ সালের বিধানসভা নির্বাচনে চম্পইয়ের প্রভাবে থাকা ১৪টি আসনেই পরাজিত হয়েছিল বিজেপি। যে কারণে বিজেপি সরকারের পতন হয়েছিল। একটি আসনে নির্দল প্রার্থী জয়ী হলেও, ১৩টি আসনে বিজেপিকে পরাস্ত করে ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চাকে জয়ী করতে বড় ভূমিকা নিয়েছিলেন চম্পই। তাই বাংলার বিজেপি নেতৃত্ব মনে করছেন, ঝাড়খণ্ডের আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে চম্পই যেমন সরকার গঠনে বিজেপির ‘ট্রাম্প কার্ড’ হয়ে উঠতে পারেন, তেমনিই পশ্চিমবঙ্গের জঙ্গলমহলে বিধানসভা নির্বাচনে একাধিক পদ্মফুল ফোটাতে ভূমিকা নিতে পারেন। আপাতত বঙ্গ বিজেপির অপেক্ষা চম্পইয়ের বিজেপিতে যোগদানের মুহূর্তের জন্য।