গ্রাফিক: আনন্দবাজার অনলাইন।
শিলিগুড়ি করিডর বা ‘চিকেন’স নেক’-এর বিকল্প হিসেবে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে বছর দুয়েক আগে আর একটি করিডর তৈরির পরিকল্পনা হয়। তাতে রেলপথের সঙ্গে সড়কপথে যোগাযোগের কথাও ভাবা হয়। শুরু হয়েছিল আলোচনাও। কিন্তু সীমান্তপারের সাম্প্রতিক পরিস্থিতির জেরে এই প্রস্তাবিত বিকল্প করিডরের পরিকল্পনা আপাতত বিশ বাঁও জলে। সূত্রের খবর, একই সঙ্গে ‘চিকেন’স নেক’-এ একাধিক আধা সামরিক বাহিনীকে বাড়তি নজরদারির নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। এই অঞ্চলে সেনা, বায়ুসেনাও নজর রাখে।
গত অগস্ট মাসের আগেও সরকারি স্তরে কেন্দ্রীয় ‘জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ’ প্রস্তাবিত প্রকল্প নিয়ে এগিয়েছিল। কিন্তু অগস্ট থেকে বাংলাদেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা শুরু হয়। সূত্রের দাবি, এই পরিস্থিতিতে সীমান্ত এবং ‘চিকেন’স নেক’ নিয়ে নতুন করে ভাবছে কেন্দ্রীয় সরকার। বাংলাদেশ, নেপাল এবং ভুটান সীমান্তে নজরদারি বাড়ানোই শুধু নয়, ওই তিন দেশকে ভিত্তি করে চিনের আগ্রাসী মনোভাবও ভাবাচ্ছে কেন্দ্রকে। সেই মতো ‘চিকেন’স নেক’-কে
আরও সুরক্ষিত রাখতে
চলছে প্রস্তুতি।
রাজ্য গোয়েন্দা দফতরের এক শীর্ষ কর্তার দাবি, ‘‘চিকেন’স নেককে সুরক্ষিত রাখতে কেন্দ্র ও রাজ্য সব সময় তৎপর। সেই কাজ যৌথ ভাবে চলছে।’’ তিনি জানান, বাংলাদেশের শেখ হাসিনা সরকারের সঙ্গে আলোচনায় কেন্দ্রীয় সরকার নতুন রাস্তা বা রেলপথের কথা ভেবেছিল। তাতে বৈদেশিক বাণিজ্য, পর্যটনের সঙ্গে ‘চিকেন’স নেক’-কে সুরক্ষিত রাখতে সমান্তরাল আর একটি ‘করিডর’-এর কথা ভাবা হয়। সে কাজ এগিয়েও থমকে গিয়েছে।
সরকারি সূত্রের খবর, উত্তর-পূর্বাঞ্চলের মেঘালয়ের মহেন্দ্রগঞ্জ থেকে দক্ষিণ দিনাজপুরের হিলি পর্যন্ত নতুন ‘করিডর’ নিয়ে দু’দেশের আলোচনায় ঠিক হয়, সেই ‘করিডর’ বাংলাদেশের গোরাঘাট, পলাশবাড়ি ও গাইবান্ধা দিয়ে আসবে। ‘করিডর’-এ প্রথমে ‘এলিভেটেড রোড’ বা উঁচু করে রাস্তা বানানো ও পরে রেলপথ তৈরির কথা বিবেচিত হয়েছিল।
ভাবনা ছিল, প্রায় ২০০ কিমি লম্বা এবং ২২-৬০ কিমি চওড়া ‘শিলিগুড়ি করিডর’ বা ‘চিকেন’স নেক’ কোনও ভাবে ‘অস্থির’ বা বন্ধ হলে দ্বিতীয় ‘করিডর’ দিয়ে উত্তর-পূর্বের সঙ্গে ভারতের বাকি প্রান্ত যুক্ত থাকবে। শেখ হাসিনা সরকার নিজের দেশের অর্থনীতির উন্নতি, পর্যটনের বিকাশ, নিরাপত্তা এবং ভারতের সহযোগিতার কথা মাথায় রেখে তাতে প্রাথমিক ভাবে সায়ও দেয় বলে সূত্রের খবর।
কেন্দ্রীয় ভাবে উত্তরবঙ্গের ‘চিকেন’স নেক’ নজরদারির দায়িত্বে সেনাবাহিনী ও বায়ুসেনা রয়েছে। রাজ্যের তরফে সীমান্তের অভ্যন্তরে ‘চিকেন’স নেক’-এর এলাকাগুলিতে নজরদারি চলে। সূত্রের খবর, সম্প্রতি বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়মিত বদল হতে থাকায়, সীমান্তের দুই পারেই উত্তেজনা অব্যাহত রয়েছে।
বিএসএফ-এর দাবি, বাংলাদেশের পঞ্চগড়, দিনাজপুর এবং ঠাকুরগাঁও দিয়ে সংখ্যালঘুরা এ-পারে আসতে চাইছেন। পাল্টা সক্রিয় হয়েছে এ-পারের মৌলবাদী সংগঠনগুলি। কেন্দ্র ও রাজ্যের কাছে খবর, এর প্রভাব কোচবিহার থেকে হিলি পর্যন্ত পড়তে পারে। বিহারেও কয়েকটি সংগঠন সক্রিয় এখন। তাতে ‘চিকেন’স নেক’ যাতে অস্থির না-হয়, সেই লক্ষ্যে আধা-সামরিক বাহিনীগুলিকে বাড়তি দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। শিলিগুড়িতে থাকা বিএসএফ, এসএসবি এবং আইটিবিপি-র মতো আধা-সামরিক বাহিনীকে ‘চিকেন’স নেক’-এর উপরে বাড়তি নজরদারির জন্য কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক থেকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।