পুলিশের ছিনতাই ধামাচাপা দেওয়ার দায়ে ক্লোজ আইসি

কোচবিহারের এক স্বর্ণ ব্যবসায়ীর কর্মচারীকে ভয় দেখিয়ে ১৬ লক্ষ টাকা ছিনিয়ে নেওয়ার অভিযোগে তিন দিন আগে গ্রেফতার হয়েছিলেন শিয়ালদহ রেল পুলিশ থানার এক সাব ইনস্পেক্টর ও এক কনস্টেবল। সেই অভিযোগকে গুরুত্ব না দিয়ে ঘটনাটি ধামাচাপা দেওয়ার অভিযোগে শুক্রবার ক্লোজ করে দেওয়া হল ওই থানার আইসি চন্দন ঘোষকে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ০৩:২৭
Share:

কোচবিহারের এক স্বর্ণ ব্যবসায়ীর কর্মচারীকে ভয় দেখিয়ে ১৬ লক্ষ টাকা ছিনিয়ে নেওয়ার অভিযোগে তিন দিন আগে গ্রেফতার হয়েছিলেন শিয়ালদহ রেল পুলিশ থানার এক সাব ইনস্পেক্টর ও এক কনস্টেবল। সেই অভিযোগকে গুরুত্ব না দিয়ে ঘটনাটি ধামাচাপা দেওয়ার অভিযোগে শুক্রবার ক্লোজ করে দেওয়া হল ওই থানার আইসি চন্দন ঘোষকে।

Advertisement

ঘটনাটি ৭ সেপ্টেম্বরের। বিমল সূত্রধর নামে এক ব্যক্তি তাঁর আরও দু’জন সঙ্গীর সঙ্গে ওই দিন সন্ধ্যায় বিধাননগর স্টেশনের ওভারব্রিজে দাঁড়িয়ে ছিলেন। উত্তরবঙ্গ এক্সপ্রেস ধরে তাঁদের কোচবিহার যাওয়ার কথা ছিল। সেই সময় শিয়ালদহ
জিআরপি থানার কনস্টেবল চিত্তরঞ্জন সরকার বিমলবাবুর ব্যাগ তল্লাশি করতে চান।

রেল পুলিশের প্রাথমিক তদন্তে জানা যায়— বিমলবাবুকে ওই কনস্টেবল বলেন, তাঁর ব্যাগে কালো টাকা রয়েছে। তাই তল্লাশি চালানো জরুরি। বিমলবাবু সে কথা মানতে অস্বীকার করায় চিত্তরঞ্জনবাবু তাঁকে মারধর করে ব্যাগ কেড়ে নেন। সে সব দেখে বিমলবাবুর সঙ্গীরা
পালিয়ে যান।

Advertisement

পুলিশকর্তারা তদন্তে জানতে পারেন ওই ঘটনার পরে বিমলবাবু কোনও অভিযোগ দায়ের না করে উত্তরবঙ্গ এক্সপ্রেস ধরে কোচবিহার ফিরে যান এবং মালিক দীপক দে নামে ওই স্বর্ণ ব্যবসায়ীকে বিস্তারিত জানান। তিনি দীপকবাবুকে বলেন, একটি ব্যাগে তিনটি প্যাকেটে
২০ লক্ষ টাকা নিয়ে তিনি ওভারব্রিজে দাঁড়িয়ে ছিলেন। রেল পুলিশ পরিচয় দিয়ে এক জন দু’টি প্যাকেট ছিনিয়ে নেয়। তাতে ১৬ লক্ষ টাকা ছিল। দীপকবাবু বলেন, ‘‘ট্রেনে টাকা আনার সময় রেল পুলিশেরই তা পাহারা দেওয়ার কথা। দেখছি,
রক্ষকই ভক্ষক।’’

পরের দিন ৮ সেপ্টেম্বর বিমলের পরিচিত কয়েক জন বিধাননগরে রেল পুলিশের ফাঁড়িতে ছিনতাইয়ের অভিযোগ জানাতে গেলে তাঁদের বলা হয়, শিয়ালদহ জিআরপি থানায় যোগাযোগ করতে। সেই মতো তাঁরা শিয়ালদহে গেলে রেল পুলিশ তাঁদের বলে, যাঁর কাছ থেকে টাকা ছিনতাই হয়েছে, তাঁকে নিয়ে আসতে হবে। দীপকবাবু এর পরে নিজেই কলকাতায় এসে রেল পুলিশের এক পদস্থ কর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করেন। ওই পুলিশকর্তা এক জন ইনস্পেক্টরকে তদন্তের দায়িত্ব দেন। তদন্তে জানা যায়, অভিযোগের সত্যতা রয়েছে। এর পরে শিয়ালদহ জিআরপি থানায় অভিযোগ জানান বিমলবাবু। পুলিশ জানিয়েছে, চিত্তরঞ্জনবাবু বিধাননগর রেল পুলিশের ব্যারাকে থাকতেন। সেই ঘরেরই একটি ট্রাঙ্ক থেকে ছিনতাইয়ের ছ’লক্ষ টাকা উদ্ধার করে পুলিশ। এর পরেই তাঁকে গ্রেফতার করা হয়।

রেল পুলিশের এক কর্তার দাবি, চিত্তরঞ্জনবাবুকে পুলিশি হেফাজতে নিয়ে জেরার সময় তিনি জানান, গোটা ঘটনাটি বিধাননগর পুলিশ ফাঁড়ির ওসি শাহনওয়াজ ও শিয়ালদহ জিআরপি থানার ইনস্পেক্টর চন্দন ঘোষ জানেন। তার ভিত্তিতেই ২৪ সেপ্টেম্বর গ্রেফতার করা হয় শাহনওয়াজকে। আদালত ওই ইনস্পেক্টরকে ১০ দিনের পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেয়।

কিন্তু এই ঘটনায় শিয়ালদহ জিআরপি থানার আইসি-র ভূমিকা কী ছিল? রেল পুলিশের একটি সূত্র জানাচ্ছে, বিষয়টি রেল পুলিশ মহলে জানাজানির পরে চিত্তরঞ্জনবাবুকে ওই টাকা থানার খাতায় বেওয়ারিশ হিসেবে নথিভুক্ত করে আলমারিতে রেখে দিতে বলেন শাহনওয়াজ। কিন্তু এর পরেও আইসি বিষয়টিকে গুরুত্ব দেননি। শুধুই গুরুত্ব দেননি, না বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার উদ্দেশ্য ছিল, তা খতিয়ে দেখছেন পুলিশ কর্তারা। ফাঁড়ির ওসি-র দায়িত্বে থাকা শাহনওয়াজ-ই বা কেন আরও সক্রিয় হলেন না, তা-ও দেখা হচ্ছে।

শাহনওয়াজের ভাই শাহ মনিরুজ্জামান শনিবার দাবি করেন, তাঁর দাদা ওই ঘটনার একটি জেনারেল ডায়েরি করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু চন্দনবাবু নিষেধ করেন। মনিরুজ্জমানের অভিযোগ, ‘‘আইসি-ই আমার দাদাকে ফাঁসিয়েছেন।’’ এ নিয়ে অবশ্য কোনও মন্তব্য করতে
চাননি চন্দনবাবু।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement