শিলিগুড়ি-জলপাইগুড়ি ডেভেলপমেন্ট অথরিটি (এসজেডিএ)-এর বহু কোটি টাকার দুর্নীতির মামলায় ফের গ্রেফতার হলেন আইএএস অফিসার গোদালা কিরণ কুমার। তিনি রাজ্যের কৃষি দফতরের যুগ্ম সচিব পদে নবান্নে কর্মরত ছিলেন। সরকারি সূত্রের খবর, বুধবার সন্ধ্যায় শিলিগুড়ির পিনটেল ভিলেজে তাঁকে গ্রেফতার করে সিআইডি। আজ, বৃহস্পতিবার দুপুরে তাঁকে শিলিগুড়ি আদালতে হাজির করানোর কথা।
রাজ্য পুলিশের এক শীর্ষ কর্তা জানান, ময়নাগুড়িতে শ্মশানে বৈদ্যুতিক চুল্লি না বসিয়ে এক ঠিকাদারকে প্রায় ১৭ কোটি টাকা দেওয়ার অভিযোগে মামলা করেছেন এসজেডিএ কর্তৃপক্ষ। এ বার সেই মামলায় এসজেডিএ-এর প্রাক্তন মুখ্য কার্যনির্বাহী আধিকারিক গোদালা কিরণ কুমারকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে সিআইডি সূত্রের দাবি।
২০১৩-র ৩০ নভেম্বর মালদহের প্রাক্তন জেলাশাসক কিরণ কুমারকে এসজেডিএ-র দুর্নীতির মামলায় গ্রেফতারের কয়েক ঘণ্টার মাথায় বদলি করে দেওয়া হয় শিলিগুড়ির তৎকালীন পুলিশ কমিশনার কে জয়রামনকে। ফলে, তদন্ত করে দোষীদের শাস্তি দেওয়ার ব্যাপারে রাজ্য সরকারের সদিচ্ছা কতটা তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন সিপিএম-সহ বিরোধী দলের নেতারা। এ দিনও বাম নেতা তথা শিলিগুড়ির মেয়র অশোক ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘ওই অফিসার গ্রেফতার হওয়ায় সবচেয়ে বেশি মুখ পুড়ল মুখ্যমন্ত্রীর। সে সময় জয়রামনকে সরানো যে ঠিক হয়নি, তা এখন বোঝা যাচ্ছে।’’ তাঁর সংযোজন: ‘‘আমাদের দাবি, জয়রামনকে শিলিগুড়ির কমিশনার পদে ফেরত আনা হোক। আর এসজেডিএ-র যে সব বোর্ড সদস্য ওই দুর্নীতিতে যুক্ত তাঁদের ধরা হোক। না হলে বড় মাপের আন্দোলন হবে।’’
পক্ষান্তরে, এসজেডিএ-র বর্তমান চেয়ারম্যান, মন্ত্রী গৌতম দেব বলেন, ‘‘এটা বিচারাধীন বিষয়। সে জন্য জনসমক্ষে মন্তব্য করতে পারব না।’’
গোদালার এক আইনজীবী অবশ্য দাবি করেছেন, ভিত্তিহীন অভিযোগে তাঁদের মক্কেলকে ধরা হয়েছে। ২০১৩ সালে এসজেডিএ-র বিভিন্ন প্রকল্পে ১০০ কোটি টাকা দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। প্রাথমিক তদন্তের পরে তৎকালীন চেয়ারম্যান তথা শিলিগুড়ির তৃণমূল বিধায়ক রুদ্রনাথ ভট্টাচার্যকে পদ থেকে সরিয়ে দেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দায়িত্ব পান গৌতমবাবু। এর পরে গোদালা কিরণ কুমারকে বদলি করা হয়। তিনি মালদহের জেলাশাসক হন। কিছু দিন পরে এসজেডিএ-র মহানন্দা সংস্কার, বাগডোগরা, মালবাজার এবং ময়নাগুড়ি শ্মশানে বৈদ্যুতিক চুল্লি বসানোর প্রকল্পে অন্তত ৬০ কোটি টাকা দুর্নীতির অভিযোগে মামলা দায়ের হয়। গৌতমবাবুর দাবি, মামলা করা হয়েছিল মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে।
পরে জোড়াপানি নদী-খাত সংস্কারে মাটি কাটা এবং বাঁধ নির্মাণ, শিলিগুড়ি শহরের নিরাপত্তার স্বার্থে ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরা বসানোর মতো বেশ কিছু প্রকল্পের কাজে ফের দুর্নীতির অভিযোগ দায়ের করা হয়। ই-টেন্ডার প্রক্রিয়া ব্যবহার করে জাল নথি তৈরি করে কাজের বরাত দেওয়া নিয়েও অভিযোগ করা হয়। মোট ন’টি মামলা দায়ের হয়।