এসএসকেএম থেকে বেরিয়ে আসছেন ছত্রধর মাহাতো। শনিবার। নিজস্ব চিত্র
শনিবার বিকেল সাড়ে ৪টে। ক্লিন শেভ্ন। রং করা গোঁফ, চুল। ঝকঝকে চেহারা। পরনে গোলাপি পাঞ্জাবি, সাদা পাজামা। হুইলচেয়ারে বসে ছত্রধর মাহাতো। এসএসকেএমের উডবার্ন ওয়ার্ড থেকে বেরিয়ে গেলেন নীরবে।
দীর্ঘদিন প্রেসিডেন্সি জেলে কাটানো ছত্রধরের ঠিকানা গত এক বছর ধরে ছিল এসএসকেএম। রাজ্যে পালাবদলের দু’-তিন বছর আগে থেকেই আলোচনার কেন্দ্রে তিনি। বাম জমানায় লালগড়ে মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের গাড়িতে বিস্ফোরণের চেষ্টা করে মাওবাদীরা। তাতে জড়ায় ছত্রধরের নাম। পশ্চিমবঙ্গ ও ঝাড়খণ্ড মিলিয়ে ২৩টি মামলায় অভিযুক্ত হন, বেআইনি কার্যকলাপ প্রতিরোধ আইনে (ইউএপিএ) যাবজ্জীবন হয়। লালগড়ে ‘সন্ত্রাস বিরোধী জনসাধারণের কমিটি’-র আহ্বায়ক ছত্রধর পরে তৃণমূলে যোগ দেন।
কলকাতা হাইকোর্ট, ঝাড়গ্রাম আদালত, ঘাটশিলা আদালত, রাঁচী হাইকোর্টে ছত্রধরের মুক্তির জন্য লড়াই করেছেন কৌঁসুলিরা। তাঁদের অন্যতম প্রসেনজিৎ নাগকে নিয়ে হাসপাতাল থেকে বাইরে আসেন ছত্রধর। পরে প্রসেনজিৎ বলেন, ‘‘২৩টি মামলাতেই উনি জামিন পেয়েছেন। আপাতত ওঁর লালগড়ে ফিরে যাওয়ায় বাধা নেই।’’
স্ত্রী নিয়তি মাহাতো, আইনজীবী ও পরিচিতদের সঙ্গে নিয়ে এসএসকেএম থেকে বেরিয়ে আসেন ছত্রধর। কয়েক জন তাঁর সঙ্গে নিজস্বী তোলার অনুরোধ জানান। কত বছর পরে মুক্তি পেলেন? হাসিমুখে ছত্রধর বলেন, ‘‘১১ বছর পরে।’’ আজ, রবিবার লালগড়ে যাবেন বলে জানান তিনি। জানান, তাঁর সঙ্গেই গ্রেফতার জঙ্গলমহলের বহু নেতা এখনও জেলে। ছত্রধর বলেন, ‘‘আশা করছি, তাঁরাও মুক্তি পাবেন।’’
এ বার কী করবেন? রাজনীতিতে থাকবেন? ছত্রধরের জবাব, ‘‘নিশ্চয়। মানুষের জন্যই এত বছর ধরে কাজ করেছি।’’ তিনি যে তৃণমূলের সঙ্গেই আছেন, তা স্পষ্ট করেন তিনি। অনেকে বলছেন, জঙ্গলমহলে বিজেপির প্রভাব কমাতে ছত্রধরের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছে তৃণমূল! এ নিয়ে মন্তব্য এড়িয়ে গেলেও তিনি ইঙ্গিত দেন, বিজেপির বিরুদ্ধেই লড়াই করবেন। তাঁর কথায়, ‘‘জেলে থাকার সময়েই খবরের কাগজে পড়েছি, রাজ্যে এমন একটি শক্তি মাথাচাড়া দিচ্ছে। আমি তাদের মতবাদের বিরোধী।’’