আগামী ৩ ডিসেম্বর কাঁথিতে সভা রয়েছে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।
বিধানসভায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর আচম্বিত ‘সৌজন্য সাক্ষাৎ’ নিয়ে চর্চা তুঙ্গে। ২৪ ঘণ্টাও কাটেনি। এ বার শোনা যাচ্ছে শিশির-শুভেন্দুর বাড়িতে ‘চায়ে পে চর্চা’ করতে আসতে পারেন খোদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়! তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদককে কাঁথির ‘শান্তিকুঞ্জ’-এ চায়ের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন তৃণমূল সাংসদ দিব্যেন্দু অধিকারী।
আগামী ৩ ডিসেম্বর কাঁথিতে জনসভা রয়েছে অভিষেকের। বস্তুত শুভেন্দু অধিকারী বিজেপিতে যোগ দেওয়া ইস্তক কাঁথিতে এ নিয়ে তৃতীয় বার সভা করবেন অভিষেক। এ বার যেখানে সভা হবে, সেই কাঁথি প্রভাত কুমার কলেজ ময়দান থেকে রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর বাড়ি ‘শান্তিকুঞ্জ’ মাত্র ২০০ মিটার দূরে। গত দু’বারই অধিকারী পাড়ায় দাঁড়িয়ে শুভেন্দুকে তীব্র আক্রমণ করেছেন অভিষেক। তার প্রত্যুত্তরে ঝাঁঝালো জবাব এসেছে নন্দীগ্রামের বিধায়কের তরফেও। এ বার সেই অধিকারী বাড়িতেই চায়ের নিমন্ত্রণে যাবেন অভিষেক? দিব্যেন্দু বলছেন তেমনটাই। তাঁর কথায়, ‘‘আমার বাড়ির দোরগোড়ার সভায় আছে (অভিষেকের)। এলে আমি চা খেতে আসতে বলব। উনি এলে খুশিই হব।’’
সূত্রের খবর, ডায়মন্ড হারবারের সাংসদকে তাঁর বাড়িতে চায়ের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন তমলুকের সাংসদ। অভিষেক এবং শুভেন্দুর ভাই দিব্যেন্দু একই দলের প্রতিনিধি। শুভেন্দুর বাবা শিশির খাতায়-কলমে এখনও তৃণমূল সাংসদ। সে ক্ষেত্রে এক সাংসদ অন্য জনকে আমন্ত্রণ জানাতেই পারেন। কিন্তু ২০২০ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০২২ সালের নভেম্বর— প্রায় দু’বছর ধরে কলকাতার ‘শান্তিনিকেতন’ বনাম কাঁথির ‘শান্তিকুঞ্জ’-এর সম্পর্ক বইছে অন্য খাতে। সে ক্ষেত্রে পঞ্চায়েত ভোটের আগে শুভেন্দুর এলাকায় সভা করতে গিয়ে তাঁর বাড়িতে অভিষেক চা খেতে যাবেন, এটা কল্পনাতেও আনেননি কেউ। তবে মঙ্গলবার বিধানসভায় মমতা ও শুভেন্দুর সাক্ষাৎপর্ব দিয়ে বন্দ্যোপাধ্যায় এবং অধিকারীদের সম্পর্কের বরফ হয়তো গলছে। অন্তত দিব্যেন্দুর মন্তব্যে সেই ইঙ্গিত মিলছে।
শুভেন্দুর সঙ্গে মমতার বিধানসভায় সাক্ষাৎ প্রসঙ্গে দিব্যেন্দুর মন্তব্য, ‘‘বিরোধী দলনেতা মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতেই পারেন। ওঁরা নমস্কার বিনিময় করেছেন। নিঃসন্দেহে এটা ভাল দিক। একটি সুস্থ আলোচনায় শাসকরা তাদের কথা বলবে, বিরোধীরা নিজেদের কথা বলবে, এটাই তো অভিপ্রেত। সব সময় তো বিধানসভা বা লোকসভা অচল করে, হট্টগোল করে কাজ হয় না। এতে সময় নষ্ট হয়। মানুষ আমাদের নির্বাচিত করেছেন বলার জন্য। সেই বলার সুযোগ যদি আমরা না পাই...’’
যদিও মমতা ও শুভেন্দুর কী কথা হয়েছে, তিনিও জানেন না বলে জানিয়েছেন দিব্যেন্দু। তাঁর কথায়, ‘‘আলোচনা কী হয়েছে সেটা ওঁরাই বলতে পারবেন। আমি আমার কথা বলব। তবে এটুকু শুনলাম, তিনি (পড়ুন মমতা) আমার বাবার খোঁজ নিয়েছেন। তার জন্য কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।’’
আবার কাঁথিতে ঘাসফুলের সভা হলেই অধিকারী পরিবারের উদ্দেশে অনেক কুকথা উড়ে আসে বলেও অভিযোগ করেন দিব্যেন্দু। তাঁর কথায়, ‘‘যাঁরা আমার বাড়ির ৫০০ মিটারের মধ্যে দাঁড়িয়ে পিতৃশ্রাদ্ধ করে গিয়েছেন, সে বিষয়েও নিশ্চয়ই উনি (মমতা) কিছু বলবেন।’’ এর পরই কাঁথিতে অভিষেকের সভা প্রসঙ্গে দিব্যেন্দুর প্রতিক্রিয়া, ‘‘বাড়িতে চা খেতে আসতে বলব। এলে খুশি হব।’’
বৃহস্পতিবার মমতা বিধানসভায় তাঁর ঘরে শুভেন্দুকে চা খেতে বলেছিলেন। কয়েক মিনিটের সাক্ষাৎপর্বে শেষ পর্যন্ত চা খাওয়া হয়নি বিরোধী দলনেতার। এখন দিব্যেন্দুর আমন্ত্রণে শুভেন্দু-শিশিরদের বাড়িতে আগামী শনিবার অভিষেককে চায়ের পেয়ালা হাতে দেখা যাবে কি না, সেটাই দেখার।