বিশ্বভারতীর উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী। ছবি: সংগৃহীত।
তিনি যা করতে এসেছেন, তা করবেনই। অভিযোগ উঠলেও করবেন— বিশ্বভারতীর সাম্প্রতিক পরিস্থিতি নিয়ে শুক্রবার কর্মী-অধ্যাপকদের সঙ্গে ওয়েব-বৈঠকে কার্যত এমন সুরই শোনা গেল উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তীর গলায়।
প্রথমে কর্মী ও অধ্যাপকদের জন্য আলাদা আলাদা বৈঠক ডাকা হয়েছিল বাংলাদেশ ভবনে। তার জন্য বৃহস্পতিবার বিজ্ঞপ্তিও প্রকাশিত হয় বিশ্বভারতীর ওয়েবসাইটে। পরে বৃহস্পতিবার গভীর রাতে পরিবর্তিত বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয় সভা হবে ওয়েবের মাধ্যমে, কর্মী-অধ্যাপক সকলকে নিয়ে।
এ দিনের বৈঠকে আগাগোড়া আক্রমণাত্মক মেজাজে ছিলেন উপাচার্য। সূত্রের খবর, তিনি বলেন, ‘‘আমার বাড়ির সামনে রাস্তায় লিখে দিয়েছে আমি নাকি সঙ্ঘী ভিসি। ওই লেখা আমি মুছতে দিইনি। প্রমাণ করুক আমি সঙ্ঘী ভিসি, তা হলে বিশ্বভারতী ছেড়ে চলে যাব!’’ অনেক অধ্যাপক তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ জানিয়ে বিশ্বভারতীর আচার্য তথা প্রধানমন্ত্রী এবং পরিদর্শক তথা রাষ্ট্রপতিকে চিঠি লিখেছেন জানিয়ে উপাচার্যের বক্তব্য, ‘‘ওঁরা ভাবছেন প্রধানমন্ত্রী-রাষ্ট্রপতি বিদ্যুৎকে গিলোটিন করে দেবেন, তা কিন্তু হবে না। আমি যেটা করতে এসেছি সেটা করবই।’’
জাতীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের (এনআইআরএফ) মূল্যায়ন ক্রমতালিকায় সম্প্রতি বিশ্বভারতী ৩৭ থেকে ৫০-এ নেমেছে। অভিযোগ, বর্তমান কর্তৃপক্ষ রাজনীতিতে যতটা আগ্রহী, পড়াশোনার মানোন্নয়নে নন। উপাচার্য এ দিন বলেন, ‘‘এ ভাবে যদি মানের অবনমন ঘটতে থাকে, তা হলে কেন্দ্রের বরাদ্দও কমতে থাকে। এমন ভাবে চললে মাইনেও বন্ধ হয়ে যেতে পারে।’’
আরও পড়ুন: কেন্দ্রের সাহায্যে পৌষমেলা করতে চায় বিশ্বভারতী
স্বপন দাশগুপ্তকে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) নিয়ে বক্তৃতা দিতে ডাকার প্রসঙ্গে উপাচার্য বলেন, ‘‘স্বপনবাবু রাজ্যসভার সদস্য এবং সিএএ-র পক্ষে, তাই তাঁকে বলতে ডাকা হয়েছিল।’’ বিদ্যুতের দাবি, বিরুদ্ধ মতের বক্তাদেরও আনার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তাঁর ‘বাম’ সহকর্মীরা সেই আবেদনে সাড়া দেননি।
সূত্রের খবর, বিশ্বভারতীতে বক্তৃতা দিয়ে যাওয়া কয়েক জন বিশিষ্ট ব্যক্তির নাম করে উপাচার্য এ দিন বলেছেন, ‘‘এঁরা কি আমাদের দলের লোক?’’ প্রশ্ন উঠেছে, উপাচার্যেরও তা হলে দল আছে! বিশ্বভারতীতে রাজনীতি প্রসঙ্গে এ দিন তিনি বলেছেন, রবীন্দ্রনাথও রাজনীতি করতেন। রাজনীতি না-করলে তিনি ক্ষমতা-কাঠামোর বিরুদ্ধে বলতে পারতেন না। যা শুনে অনেকেরই প্রশ্ন, দলীয় রাজনীতি এবং বৃহত্তর রাজনীতির পার্থক্যটা কি উপাচার্য বোঝেন?
পাশাপাশি, পৌষমেলার মাঠ যে পাঁচিল দিয়ে ঘেরা হবেই— সে কথা ফের স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হয়েছে বিশ্বভারতীর প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে।