স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়কে ‘বিড়ম্বনা’য় ফেললেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়
কোনও ফাইল তাঁর কাছে আটকে নেই। স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়কে ‘বিড়ম্বনা’য় ফেলে এমনটাই দাবি করলেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়। মঙ্গলবার বিধানসভায় বিআর আম্বেডকরের মূর্তিতে মাল্যদান করতে এসেছিলেন তিনি। তার পরেই ওই মন্তব্য করেন রাজ্যপাল। যার প্রেক্ষিতে বিধানসভার স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাবি, রাজ্যপাল কোন বিল ছেড়েছেন বলছেন বা কোন বিল রাষ্ট্রপতি বাতিল করে দিয়েছেন তা বিধানসভাকে জানাননি রাজ্যপাল।
২০১৯ সালের মাঝামাঝি এ রাজ্যের রাজ্যপাল হিসাবে দায়িত্ব নেন ধনখড়। তার পর থেকেই নানা ইস্যুতে তাঁর সঙ্গে সঙ্ঘাত বেধেছে রাজ্য সরকারের সঙ্গে। রাজ্যপাল বিধানসভার কাজে হস্তক্ষেপ করছেন, এমন অভিযোগও করেছিলেন স্পিকার বিমান। সর্বভারতীয় স্পিকারদের সম্মেলনেও অভিযোগ করেছিলেন তিনি। গত ডিসেম্বর মাসে রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কাছেও চিঠি লিখে অভিযোগ করেছিলেন স্পিকার। পাশাপাশি, একাধিক বার বিভিন্ন বিল আটকে রাখার অভিযোগ করেন বিমান। মঙ্গলবার বিধানসভায় দাঁড়িয়ে রাজ্যপাল বলেন, ‘‘বলা হচ্ছে আমি বিভিন্ন বিল আটকে রেখেছি। আমি স্পষ্ট জানাতে চাই, আমার কাছে কোনও বিল আটকে নেই। আমার কাছে কোনও বিল পাঠানো হলে তা ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু এখানে একের পর এক অভিযোগ আমার এবং আমার অফিসের বিরুদ্ধে করা হচ্ছে। যা গণতন্ত্রের জন্য ভাল উদাহরণ নয়।’’ রাজ্যপাল আরও বলেন, ‘‘স্পিকার সরাসরি আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ করছেন। রাষ্ট্রপতি যে বিলে সম্মতি দেননি সেই বিলও আটকে রাখার অভিযোগ তোলা হচ্ছে আমার বিরুদ্ধে। আমি কোনও তথ্য চাইলে সঠিক ভাবে তা আমার কাছে পাঠানো হয় না।’’
শুধু বিধানসভার তথ্যই নয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান নিয়োগ সংক্রান্ত তথ্য, কমিশনার নিয়োগ, লোকায়ুক্ত নিয়োগ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন রাজ্যপাল। তিনি বলেন, ‘‘বিধানসভার তথ্য তো আমার কাছে পাঠানো হয় না। বরং লোকায়ুক্ত নিয়োগ তথ্য কমিশনার নিয়োগ ও মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান নিয়োগ নিয়ে রাজভবন যে তথ্য চেয়ে পাঠিয়েছিল তা-ও দেওয়া হয়নি। এর পর বলা হবে, আমি রাজ্য সরকারের সঙ্গে অসহযোগিতা করে চলেছি।’’ এখানে তাঁর জরুরি অবস্থার কথা মনে পড়ে যাচ্ছে বলেও মন্তব্য করেন রাজ্যপাল। তিনি বলেন, ‘‘যেখানে সবার কণ্ঠরোধ করে দেওয়া হচ্ছে। জরুরি অবস্থার মতোই একজন রাজ্যপালের বাজেট ভাষণ সম্প্রচার করতে দেওয়া হল না। কেন এমনটা করা হল স্পিকারের কাছে তার কোনও জবাব নেই।’’
রাজ্যপালের এই মন্তব্যের জবাব দিয়েছেন বিমান। তিনি বলেন, ‘‘রাজ্যপাল এসেছিলেন আম্বেডকরের মূর্তিতে মালা দিতে। কিন্তু এখানে এসে তিনি মূর্তিতে মালা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বিধানসভা সংক্রান্ত অনেক সমালোচনামূলক কথাবার্তা বলে গিয়েছেন। এটা অত্যন্ত অসৌজন্যমূলক আচরণ বলেই আমি মনে করি।’’ বিমান আরও বলেন, ‘‘যে বিলের কথা উনি বলছেন, হাওড়া পুরসবা বিল, সেটা পাশ করা হয়নি। গণপিটুনি বিল উনি বলছেন রাষ্ট্রপতি বাতিল করে দিয়েছেন। আমাদের কাছে কোনও তথ্য নেই। অন্যান্য বিল সম্পর্কেও কোনও তথ্য নেই আমাদের কাছে। বিধানসভা এমন একটা জায়গা, যেখানে সব তথ্য আসা দরকার। কোনও তথ্য না আসা সত্ত্বেও উনি কী ভাবে এ সব কথা বললেন, আমি জানি না।’’
স্পিকার কি আবার বিষয়টি নিয়ে সর্বভারতীয় স্পিকারদের সংগঠনের কাছে জানাবেন কি না তা নিয়ে প্রশ্ন করা হলে কোনও উত্তর দিতে চাননি বিমান। রাজ্য রাজনীতিতে স্পিকারের সঙ্গে রাজ্যপালের সঙ্ঘাত নতুন নয়। গত বছর ডিসেম্বর মাসেই রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কাছে চিঠি লিখে রাজ্যপালের বিরুদ্ধে নালিশ জানিয়েছিলেন স্পিকার। তার আগে বিধানসভায় তাঁর বক্তৃতা সম্প্রচার করতে দেওয়া নিয়ে সঙ্ঘাত হয়েছিল রাজ্যপাল-স্পিকারের। রাজ্যপালের বাজেট বক্তৃতা সম্প্রচার করতে চেয়ে স্পিকারকে চিঠি দিয়েছিল রাজভবন। নিজের ক্ষমতা কাজে লাগিয়ে রাজভবনের সেই প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছিলেন স্পিকার। আবার পর পর দু’বার সর্বভারতীয় স্পিকারদের সম্মেলনে রাজ্যপালের বিরুদ্ধে লোকসভার স্পিকারের কাছে নালিশ করেছিলেন তিনি। বেশ কয়েক বার পত্রযুদ্ধও চলেছিল দু’জনের। আবার স্পিকার হিসেবে মুখ্যমন্ত্রীকে বিধায়ক হিসেবে শপথবাক্য পাঠ করাতে দেননি রাজ্যপাল। এমন সব ঘটনার মধ্যেই মঙ্গলবার যুক্ত হল এক নতুন অধ্যায়।