রত্না চট্টোপাধ্যায়। ফাইল চিত্র।
সম্পর্কে যতই দ্বন্দ্ব থাক, প্রকাশ্যে তার আঁচটুকু কখনই তেমন ভাবে টের পেতে দেননি রত্না চট্টোপাধ্যায়। বরং স্বামী শোভন চট্টোপাধ্যায় যে যে অভিযোগ করেছেন তাঁর নামে, সেগুলিরই তিনি জবাব দিয়ে এসেছেন এত দিন।
কিন্তু, বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিয়ে প্রকাশ্যে মঙ্গলবার শোভন মুখ খোলার পর কার্যত যেন তাঁর ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে গিয়েছে। শোভন এ দিন পুরসভায় সাংবাদিকদের সামনে বৈশাখীকে ‘পারিবারিক বন্ধু’র স্বীকৃতি দেওয়ার পর পরই রত্না এ দিন সাফ জানিয়ে দেন, ‘‘বৈশাখী কোনও দিনই আমাদের পারিবারিক বন্ধু ছিলেন না। ভবিষ্যতে কোনওদিন ওর নাম শুনতে চাই না।’’
বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায় প্রসঙ্গে এ দিন শোভনকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “বিবাহ বিচ্ছেদের মামলা করার পর থেকে বৈশাখী যে ভাবে পাশে দাঁড়িয়েছেন, তা আমার স্ত্রী রত্নাও জানেন। আমি সে সব কখনওই ভুলব না। বৈবাহিক জীবনে রত্না এবং আমি যে ভাবে বৈশাখী ও তাঁর পরিবারের কাছ থেকে প্রতিনিয়ত সাহায্য পেয়েছি, তা বাইরে থেকে কেউ উপলব্ধি করতে পারবেন না।” কিন্তু, সেই ‘বন্ধুত্ব’ আর ‘সহযোগিতা’ নিয়ে এ দিন বিরূপ মন্তব্য শোনা যায় রত্নার গলায়। তাঁর কথায়, ‘‘আমি কোনও দিনই ওঁর কাছে সাহায্য চাইনি। ওঁর কাছে সাহায্য চাওয়ার আগে আমার মরে যাওয়া ভাল।’’
আরও পড়ুন: ‘বিপদে পাশে দাঁড়িয়েছে বৈশাখী’
বেহালার পৈতৃক বাড়ি ছেড়ে শোভন বেশ কয়েক মাস ধরে গড়িয়াহাটের কাছে একটি ফ্ল্যাটে থাকেন। দুষ্কৃতী দিয়ে সেখান থেকে তাঁকে উৎখাত করতে পারেন স্ত্রী, এই আশঙ্কায় পুলিশের কাছে নিরাপত্তা চেয়ে সোমবার রবীন্দ্র সরোবর থানায় আবেদন করেন শোভন। রত্না পরে জানান, ওই ফ্ল্যাটটি তাঁর ভাইয়ের। তাঁর অনুমতি নিয়েই শোভন ওখানে থাকেন। ফলে, তুলে দেওয়ার প্রশ্ন নেই। সোমবারই রত্না বলেন, ‘‘আমাদের ২২ বছরের সম্পর্ক। আমি শোভনের উপর হামলা করতে পারি, এমন কথা কেউ বিশ্বাস করবেন না। আমি এ ধরণের মানুষ নই।’’
আরও পড়ুন: দ্বন্দ্ব মেটাল দল-শোভন
তবে, এ দিন তাঁদের সম্পর্কের এই টানাপড়েন নিয়ে আক্ষেপও শোনা গিয়েছে রত্নায় গলায়। আবার, ‘কাজের মানুষ’ হিসেবে শোভনের প্রশংসাও করেছেন। রত্নার কথায়, ‘‘উনি কাজের মানুষ। অনেকগুলো ধাপ পেরিয়ে আজ মেয়র হয়েছেন।’’ আগামী দিনে সেই ‘ভাল’ কাজের মধ্যেই তাঁর ফিরে যাওয়া উচিত— মন্তব্য রত্নার।
একই সঙ্গে তাঁদের সম্পর্ক যাতে আবার সেই পুরনো স্রোতে ফিরে আসে, সে জন্য তিনি যে সব সময় সচেষ্ট— সে কথাও মনে করিয়ে দিয়েছেন। আর তাই শোভনের প্রতি স্ত্রী রত্নার ‘উপদেশ’— মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ‘মা’ বলে ডাকেন শোভন। সেই মায়ের কথা শুনে কাজ করা উচিত তাঁর।