তৃণমূল ছেড়ে আসা মুকুল রায়কে নিয়ে বিজেপি-র রাজ্য নেতৃত্বের অস্বস্তি এখনও কাটছে না! খোদ মুকুলকে পাশে বসিয়ে শিলিগুড়িতে বিজেপি-র কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক কৈলাস বিজয়বর্গীয় ও রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেছিলেন, পঞ্চায়েত ভোটের কৌশল তৈরিতে ‘গাইডে’র ভূমিকায় থাকবেন তৃণমূলের প্রাক্তন ‘নাম্বার টু’। কয়েক দিনের মধ্যেই আবার ভোল বদলে গেল দিলীপবাবুর! বসিরহাটে গিয়ে বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি এ বার বললেন, ‘‘ভারতীয় জনতা পার্টি পশ্চিমবঙ্গে আমি চালাই।এখানে আমার কথাই শেষ কথা!’’
আসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচনে মুকুলকে দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব কী দায়িত্ব দিতে চাইছেন, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতেই উত্তেজিত স্বরে দিলীপবাবু এ দিন বলেছেন, ‘‘এ রাজ্যে যখন আমিই দলটা চালাই, তখন আর কারও গাইডে নয়, আমিই ঠিক করব পঞ্চায়েত নির্বাচনের কৌশল!’’ বসিরহাটের মৈত্রবাগান এলাকায় একটি বাড়িতে দলের নেতাদের নিয়ে বৈঠক করতে গিয়েছিলেন দিলীপবাবু। সেখানে প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথাও স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে, সারদা বা নারদ কেলেঙ্কারির তদন্তে কেউ দোষী প্রমাণিত হলে দল তার ‘দায়’ নেবে না। দিলীপবাবুর এই মন্তব্যের ইঙ্গিতও মুকুলের দিকেই।
কলকাতায় মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের দফতরের অদূরে এ দিনই বিজেপি-র তরফে অবস্থানে হাজির ছিলেন মুকুল ও মহিলা মোর্চার রাজ্য সভানেত্রী লকেট চট্টোপাধ্যায়। দিলীপবাবুর মন্তব্য প্রসঙ্গে মুকুল অবশ্য বলেন, ‘‘কেলেঙ্কারির দায় দল নেবে না, এটা তো ঠিক কথাই। আমিও তো বার বার এই কথা বলেছি!’’ সবংয়ে শাসক তৃণমূলের বাধায় বিরোধীরা প্রচার করতে পারছে না, নীরবে সন্ত্রাস চলছে— এই অভিযোগে কমিশনের সামনে ধর্না ছিল বিজেপি-র। মুকুল সেখানে বলেন, ‘‘এই জায়গাতেই ২০১১ সালে সিপিএমের সন্ত্রাসের বন্ধ করে অবাধ নির্বাচনের দাবি জানাতে এসেছিলাম। তখন আমি তৃণমূলে। ইতিহাসের এমন নির্মম পরিহাস, সেই তৃণমূলের সন্ত্রাসের প্রতিবাদ জানাতেই এখন কমিশনে আসতে হচ্ছে!’’
মুকুলেরা যখন তৃণমূলের সন্ত্রাসের প্রতিবাদ জানাচ্ছেন, বসিরহাটে দিলীপবাবু তখন দাবি করেছেন, ‘‘ডিসেম্বরের পরে তৃণমূলের ঘর ভাঙবে বুঝতে পেরে মুখ্যমন্ত্রী খাওয়া-ঘুম বন্ধ করে ছুটছেন! মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পুলিশ দিয়ে দল চালাচ্ছেন। পুলিশ পাঠিয়ে ডেকে এনে পোস্ট দিচ্ছেন, ঘর-পয়সা দিচ্ছেন, পঞ্চায়েতে ভাতা বাড়াচ্ছেন।’’ এ ভাবে ঘুষ দিয়ে বেশি দিন সরকার চলে না বলেও মন্তব্য করেন বিজেপি সভাপতি। তাঁর দাবি, নতুন বছরে বিজেপি-কে নতুন ভাবে দেখা যাবে। তখন তৃণমূল নেত্রী দল সামলাতে এতটাই ব্যস্ত হয়ে পড়বেন যে, সরকার চালানোটাই তাঁর পক্ষে মুশকিল হয়ে পড়বে!