ফিরহাদ কন্যার ফেসবুক পোস্টে চাঞ্চল্য।
এনআরএস-কাণ্ডে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অস্বস্তি অপ্রত্যাশিত ভাবে বাড়িয়ে দিলেন ফিরহাদ হাকিমের মেয়ে। পেশায় চিকিৎসক শাবা হাকিম একটি সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টে তীব্র নিন্দা করলেন ডাক্তারদের উপরে হামলার। কিন্তু তাতেই থামলেন না। ফেসবুক পোস্টটির শেষ লাইনে লিখলেন যে, ‘‘একজন তৃণমূল সমর্থক হিসেবে আমাদের নেতার নিষ্ক্রিয়তা এবং নীরবতায় আমি গভীর ভাবে লজ্জিত।’’ বিষয়টি নিয়ে এখনও সংবাদমাধ্যমের সামনে মুখ খোলেননি শাবা। কিন্তু নিজেকে তৃণমূল সমর্থক বলে উল্লেখ করা শাবা ‘আমাদের নেতা’ বলতে কার কথা বলতে চেয়েছেন, তা নিয়ে রাজনৈতিক শিবিরে সংশয় কমই।
বুধবার রাত ১১টা ২৮ মিনিটে ফেসবুক পোস্টটি করেছেন শাবা হাকিম। প্রথমেই তিনি লিখেছেন— এই পোস্ট তাঁদের জন্য, যাঁরা জানেন না যে সরকারি হাসপাতালগুলোতে এবং বেশির ভাগ বেসরকারি হাসপাতালে ডাক্তাররা বহির্বিভাগ বয়কট করলেও জরুরি বিভাগে কাজ করছেন। শাবা লিখেছেন, ‘‘অন্যান্য পেশার মতো আমরা কাজ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েই খালাস হতে পারি না কারণ দিনের শেষে আমাদের মানবিকতা রয়েছে। যদি একটা বাস বা ট্যাক্সি ধর্মঘট হত, তা পরিস্থিতি যত কারাপই হোক, এক জন ট্যাক্সিচালক বা বাসচালকও আপনাকে পরিষেবা দিতেন না।’’
আরও পড়ুন: নিঃশর্ত ক্ষমা চান মুখ্যমন্ত্রী, না হলে আন্দোলন চলবে, এনআরএস-এর জুনিয়র ডাক্তারদের ঘোষণা
রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী তথা কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিমের মেয়ে শাবা হাকিম কলকাতারই একটি বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজে কর্মরত। বুধবার রাতের লম্বা ফেসবুক পোস্টে তিনি লিখেছেন, ‘‘যাঁরা প্রশ্ন তুলছেন, অন্য রোগীদের কী দোষ, তাঁরা দয়া করে সরকারকে প্রশ্ন করুন, সরকারি হাসপাতালে মোয়াতেন থাকা পুলিশ অফিসাররা ডাক্তারদের রক্ষা করার জন্য কিছুই করেন না কেন? দয়া করে তাঁদের প্রশ্ন করুন যে, যখন দুটো ট্রাকে বোঝাই হয়ে গুন্ডারা এল, তখন অবিলম্বে আরও বাহিনী পাঠানো হল না কেন?’’
তবে সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ ফিরহাদ-কন্যার ফেসবুক পোস্টের শেষ লাইনটা। ‘বিশেষ দ্রষ্টব্য’ হিসেবে ওই লাইনটিকে উল্লেখ করেছেন শাবা। তার পর লিখেছেন, ‘‘আমাদের নেতার নিষ্ক্রিয়তা এবং নীরবতায় একজন তৃণমূল সমর্থক হিসেবে আমি গভীর ভাবে লজ্জিত।’’
আরও পড়ুন: ৪ ঘণ্টার মধ্যে কাজে যোগ না দিলে কঠোর ব্যবস্থা, এসএসকেএম-এ গিয়ে ডাক্তারদের হুঁশিয়ারি মুখ্যমন্ত্রীর
মেয়ের এই বক্তব্যে বা অবস্থানে কি ফিরহাদ হাকিমের অনুমোদন রয়েছে? বিষয়টি স্পষ্ট নয়। কারণ ফিরহাদ বা শাবা, কেউই বিষয়টি নিয়ে সংবাদমাধ্যমে মুখ খোলেননি এখনও। কিন্তু কলকাতার কোনও সরকারি হাসপাতালে সঙ্কট তৈরি হলে তার নিরসন প্রক্রিয়ায় আগে যে ভাবে মুখ্যমন্ত্রীর পাশে সারা ক্ষণ দেখা যেত পূর্বতন মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়কে, এ বারের সঙ্কটে কিন্তু বর্তমান মেয়র ফিরহাদ হাকিমকে এখনও সে ভাবে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা যায়নি। মুখ্যমন্ত্রী বৃহস্পতিবার সকালে এসএসকেএম হাসপাতালে গিয়েছিলেন। কিন্তু ফিরহাদ সঙ্গে ছিলেন না।
শাবা হাকিমের ফেসবুক পোস্টেই কিন্তু শেষ হচ্ছে না তৃণমূলের অস্বস্তি। তৃণমূল সাংসদ তথা চিকিৎসক শান্তনু সেনের স্ত্রী কাকলি সেনও ফেসবুকে বিস্ফোরক বিবৃতি দিয়েছেন। তাঁর পোস্ট শাবা হাকিমের পোস্টের চেয়েও দীর্ঘ। শেষ অংশে খোলাখুলি আন্দোলনরত ডাক্তারদের পাশে দাঁড়িয়েছেন কাকলি। তিনি লিখেছেন, ‘‘আমরা অভিযুক্তদের অবিলম্বে গ্রেফতার ও কঠিন শাস্তি দাবি করছি। চিকিৎসা পরিষেবার সঙ্গে যুক্তদের আমরা অনুরোধ করছি এই নৃশংসতার বিরুদ্ধে এক হতে। কোনও সংবাদ মাধ্যম, সরকার অথবা সেলিব্রিটি ডাক্তারদের গণপ্রহারের বিরুদ্ধে দাঁড়ান না। ডাক্তাররা সংখ্যায় কম, কেউ আপনাদের প্রকি সহানুভূতিশীল হবেন না। যদি এখনও আপনারা ঐক্যবদ্ধ না হন তা হলে একে একে আপনারা সকলে গণপ্রহারের শিকার হবেন।’’ প্রয়োজন হলে সব হাসপাতাল এবং স্বাস্থ্যকেন্দ্র বন্ধ করে দেওয়া হবে— এমন হুঁশিয়ারিও নিজের ফেসবুক পোস্টে দিয়েছেন তৃণমূল সাংসদের স্ত্রী।