প্রয়াত ডিওয়াইএফআই নেতা মইদুল ইসলাম মিদ্যা নিজস্ব চিত্র
সুদীপ্ত গুপ্তের মৃত্যুর পরে অভিযোগ পেয়ে তদন্তে এগিয়ে এসেছিল রাজ্য মানবাধিকার কমিশন। জানা যায়, যে বাসচালক স্টিয়ারিং হাতে ওই আন্দোলনকারীদের আলিপুর জেলে নিয়ে যাচ্ছিলেন তাঁর লাইসেন্স ছিল না। কমিশনের রিপোর্টে প্রকাশ, ফুটবোর্ডে দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় সে-দিন ল্যাম্পপোস্টে মাথা ঠুকে গিয়েছিল এসএফআই কর্মী ওই তরুণের। লাইসেন্সবিহীন চালকের উপরেও সেই মৃত্যুর দায় বর্তায় বলে মনে করেন রাজ্য মানবাধিকার কমিশনের তৎকালীন চেয়ারম্যান, বিচারপতি অশোক গঙ্গোপাধ্যায়। সুদীপ্ত গুপ্তের পরিবারকে ১০ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণের সুপারিশ করেন তিনি। রাজ্য সরকারের টাকা দেওয়ার কথা থাকলেও তা কার্যকর হয়নি।
সেটা ২০১৩ সালের কথা। এই ২০২১-এ পুলিশের লাঠির ঘায়ে জখম ডিওয়াইএফ কর্মী মইদুল ইসলাম মিদ্যার মৃত্যুর পরে এখনও পর্যন্ত মানবাধিকার কমিশনের তাপ-উত্তাপের চিহ্ন নেই। এ বিষয়ে কমিশনের সদস্য রাজ্য পুলিশের প্রাক্তন ডিজি নপরাজিত মুখোপাধ্যায়কে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, “এই নিয়ে কিছু বলতে পারব না।” কমিশনের সভাপতি বিচারপতি গিরিশচন্দ্র গুপ্ত ফোন ধরেননি। ‘এসএমএস’ করে তাঁর সঙ্গে কথা বলতে চাওয়া হলেও সাড়া মেলেনি।
তবে প্রাক্তন মানবাধিকার কমিশন সভাপতি অশোকবাবুর মতে, “চাইলে মানবাধিকার কমিশন নিজেও মইদুলের মৃত্যুর বিষয়টির তদন্ত করতে পারে। যেমন, অম্বিকেশ মহাপাত্রের সময়ে আমরা করেছিলাম।” মুখ্যমন্ত্রীকে নিয়ে ব্যঙ্গাত্মক ছবি নেটে শেয়ার করে অধ্যাপক অম্বিকেশ মহাপাত্র পুলিশ-হাজতে হেনস্থা হওয়ার সময়ে তাঁর পাশে ছিল রাজ্য মানবাধিকার কমিশনই। তবে রাজ্য সরকার কমিশনের সুপারিশ মানেনি।
পুলিশ-প্রশাসনের বিরুদ্ধে দেশের লোকের নানা অভিযোগের তদন্ত করে দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য মানবাধিকার কমিশনের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন কমিশনের আর এক প্রাক্তন সভাপতি, বিচারপতি চিত্ততোষ মুখোপাধ্যায়ও। তবে এখন কমিশনের কাজ নিয়ে তিনি তেমন ওয়াকিহাল নয় বলেই জানাচ্ছেন। সরকারি সূত্রের খবর, চেয়ারম্যান বিচারপতি গিরিশচন্দ্র গুপ্ত ও সদস্য, প্রাক্তন ডিজি নপরাজিত মুখোপাধ্যায় ছাড়া অনেক পদই খালি রয়েছে। যেমন, আইজি, এসপি স্তরের পুলিশকর্তা কেউ নেই। কোনও অভিযোগে তদন্তের কাজ যাঁরা করেন, ডিএসপি, ইনস্পেক্টর স্তরের কয়েকটি পদও খালি। মানবাধিকার কমিশনের বার্ষিক রিপোর্টও অনিয়মিত।
জ্যোতিবাবুর আমলের শেষ দিকে কমিশনের সভাপতি চিত্ততোষবাবুর কথায়, “সুপারিশ রাজ্য সরকার না-ও মানতে পারে। তখন বিষয়টি উচ্চ আদালতে যায়।” তিনি বলছেন, “কিছু সুপারিশ তখন সরকার মেনেছে। কিছু মানেনি।” যেমন যাদবপুর থানায় জেরার সময়ে এক জনকে পিটিয়ে মারার অভিযোগ ওঠে পুলিশের বিরুদ্ধে। হাসপাতালের রিপোর্টেও কারচুপি হয়। চিত্ততোষবাবুর আমলে বিষয়টি তুলে ধরে কমিশন। তবে তিনি বলছেন, "সরকার আমাদের সুপারিশ মানেনি। সুপ্রিম কোর্ট পরে পুলিশকে বিভাগীয় তদন্ত করতে বলে। শেষ পর্যন্ত কী হয়েছে, বলতে পারব না।”