বামেরা কি জাগছে, প্রশ্ন তুলল ভিড়ের বহর

মহাজাতি সদন থেকে রবীন্দ্র সদন সাম্প্রতিক অতীতে লাল ঝান্ডা নিয়ে এত বড় মিছিল দেখেনি কলকাতা। বাবরি মসজিদ ধ্বংসের ২২ বছর পরে ১৭টি বাম দলের ডাকা পদযাত্রা বামেদের পুনরুত্থান নিয়ে জল্পনা উস্কে দিল। গত মঙ্গলবার সারদা কেলেঙ্কারি নিয়ে কলকাতার রাজপথে নেমে ভালই সাড়া পেয়েছিলেন বামেরা। আর এ দিন তাঁদের লক্ষ্য ছিল কেন্দ্রের শাসক দল।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৭ ডিসেম্বর ২০১৪ ০২:২২
Share:

মহাজাতি সদন থেকে রবীন্দ্র সদন পর্যন্ত সতেরোটি বামপন্থী দলের আহ্বানে মিছিল। শনিবার বিশ্বনাথ বণিকের তোলা ছবি।

মহাজাতি সদন থেকে রবীন্দ্র সদন সাম্প্রতিক অতীতে লাল ঝান্ডা নিয়ে এত বড় মিছিল দেখেনি কলকাতা। বাবরি মসজিদ ধ্বংসের ২২ বছর পরে ১৭টি বাম দলের ডাকা পদযাত্রা বামেদের পুনরুত্থান নিয়ে জল্পনা উস্কে দিল।

Advertisement

গত মঙ্গলবার সারদা কেলেঙ্কারি নিয়ে কলকাতার রাজপথে নেমে ভালই সাড়া পেয়েছিলেন বামেরা। আর এ দিন তাঁদের লক্ষ্য ছিল কেন্দ্রের শাসক দল। মিছিল শেষে অ্যাকাডেমির সামনে দাঁড়িয়ে বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু বললেন, “প্রথমে ভেবেছিলাম, ২০ হাজার লোক হবে। কিন্তু দু’দিন আগে বুঝলাম সে হিসেব ছাড়িয়ে যাবে। চল্লিশ হাজার পেরিয়ে যাবে।” শেষ পর্যন্ত এ দিন অন্তত আধ লাখ মানুষ চার কিলোমিটার রাস্তা হেঁটেছেন বলে দাবি বাম নেতাদের। যদিও পুলিশের মতে লোক ছিল ১০ হাজার।

মিছিলের মানুষ মাপার যন্ত্র নেই। কিন্তু আড়ে-বহরে মিছিলের চেহারা দেখে বাম নেতারা যে উজ্জীবিত, সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না। এই ঘটনা তাঁদের পায়ের তলার মাটির ক্রমিক ক্ষয় রোধের লক্ষণ কি না, সেটা প্রশ্ন। পাশাপাশি, এ বার বিজেপির উত্থানে রাশ টেনে আদতে তৃণমূলের সুবিধে হয়ে যাবে কি না, প্রশ্ন সেটাও।

Advertisement

বাম নেতাদের দাবি, ২০১১ সালে যাঁরা তাঁদের থেকে মুখ ঘুরিয়েছিলেন, তাঁরা রাজ্যে সাড়ে তিন বছরের তৃণমূল শাসন দেখেছেন। কেন্দ্রেও ছ’মাসের বিজেপি শাসন দেখলেন। দুই দলের প্রতিই বীতশ্রদ্ধ হয়ে তাঁরা আবার বামেদের দিকে ফিরতে শুরু করেছেন। পর পর দু’দিন মিছিলে মানুষের ঢল তারই ইঙ্গিতবাহী। বিশেষ করে দুই মিছিলেই যখন যুবদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো।

এই দাবির সঙ্গে অবশ্য সহমত নন অনেকেই। তাঁরা মনে করাচ্ছেন, মাত্র ক’দিন আগে হওয়া দুই বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচন বাম ভোটব্যাঙ্কের আরও ক্ষয়ই চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে। ২০১১-তেও ধরে রাখা বসিরহাট দক্ষিণ আসন হারিয়েছে সিপিএম। শুধু তা-ই নয়, তাদের ভোটও চলে গিয়েছে তলানিতে। বস্তুত, রাজ্যের অধিকাংশ জায়গায় বামেদের লড়াই এখন কংগ্রেসের সঙ্গে তিন-চার নম্বর জায়গা নিয়ে।

বামেদের পুনরুজ্জীবন যাঁদের পক্ষে আশার কারণ হতে পারে, সেই তৃণমূল নেতারা এ দিনের মিছিল নিয়ে প্রকাশ্যে কোনও মন্তব্য করতে চাননি। তবে একান্ত আলোচনায় দলের এক প্রবীণ নেতার বক্তব্য, “আসলে বিজেপি উত্থানে ধর্মনিরপেক্ষ মানুষেরা প্রমাদ গুণছেন। তাঁদের একাংশ আমাদের দিকে এসেছেন। বাকিরা বামেদের দিকে ভিড়েছেন।”

রাজ্যে বিরোধী ভোট ভাগ করার লক্ষ্যে বামেদের নবান্নে ফিশ ফ্রাই-কফিতে আপ্যায়ন করে ঘুরে দাঁড়ানোর পরামর্শ দিয়েছিলেন মমতা। দিল্লিতে সীতারাম ইয়েচুরিকেও প্রশ্ন করেছিলেন, কেন বামেদের ঘর ভেঙে দল ভারী হচ্ছে বিজেপির! ফলে বামেদের এই পথে নামা এবং তাতে সাড়া পাওয়া বিজেপির বাড়বাড়ন্ত রুখে আখেরে তাঁদেরই ফায়দা দেবে বলে মনে করছেন তৃণমূল নেতাদের একাংশ। কিন্তু এ রাজ্যে তৃণমূলই যে বামেদের বড় শত্রু, সেটা তো এই সে দিনই স্পষ্ট করে দিয়েছেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। ফলে তৃণমূল সমর্থকরাই যে বাম শিবিরে নাম লেখাচ্ছেন না, তারই বা নিশ্চয়তা কী? তৃণমূল নেতাদের অবশ্য দাবি, তাঁদের ঘর অটুটই রয়েছে।

উল্টো দিকে বিজেপির দাবি, সারদা থেকে খাগড়াগড় একের পর এক কেলেঙ্কারিতে তৃণমূলের জনপ্রিয়তা হুড়মুড় করে কমছে। তাই ভিড় বাড়ছে বিরোধী শিবিরে। সেই ভিড়ের সিংহভাগই আসছে বিজেপিতে। ৩০ নভেম্বর ধর্মতলায় অমিত শাহের সভাই তার প্রমাণ। যা শুনে তৃণমূলের এক নেতার আবার মন্তব্য, “লোকসভা ভোটের আগে ব্রিগেডে বিপুল সভা দেখে অনেক বাম নেতাই আশায় বুক বেঁধেছিলেন। কিন্তু বাস্তবে ফল কী হয়েছে, তা তো দেখাই গিয়েছে।”

ভোট রাজনীতির জল শেষ পর্যন্ত কোন দিকে গড়াবে তা বলার সময় এখনও আসেনি। আগামী বছরের পুর নির্বাচনে তার প্রথম পরীক্ষা। তার পর ফাইনাল ২০১৬-র বিধানসভা ভোটে। আপাতত জোড়া মিছিলের সাফল্যে উৎসাহিত বামেরা রাজ্য রাজনীতিতে হারানো জমি পুনরুদ্ধারে মনোনিবেশ করতে চাইছেন। ধারাবাহিক কর্মসূচি নিয়ে মাঠে থাকতে আজ, রবিবার ১৭ বাম দলকে বৈঠকে ডেকেছেন বিমান বসু।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement