Aadhar Card

ঘুমের আড়ালে ‘বাংলাদেশ’ গিলতে আসছে তাঁকে

ঘুমের আড়ালেও ভিন্ দেশি হয়ে যাওয়ার দুঃস্বপ্ন তাড়া করছে তাঁকে। না করে উপায়ই বা কী!

Advertisement

সুজাউদ্দিন বিশ্বাস

ডোমকল শেষ আপডেট: ১৪ জানুয়ারি ২০২০ ০২:৩৩
Share:

ভোটার কার্ডে বাবা মালেক শেখের বয়স ছেলের চেয়েও কম। নিজস্ব চিত্র

ঘুমের আড়ালেও ভিন্ দেশি হয়ে যাওয়ার দুঃস্বপ্ন তাড়া করছে তাঁকে। না করে উপায়ই বা কী! মোস্তাকিনের সাকিন এখন পড়শি বাংলাদেশ। অন্তত ভোটার কার্ডে তেমনই সিলমোহর পড়ে গিয়েছে।

Advertisement

এত দিন তা নিয়ে তেমন মাথা ব্যাথা ছিল না বাবলাবোনার মোস্তাকিন শেখের। কিন্তু এনআরসি’র আঁধার মেঘে সে ভয় জাঁকিয়ে ছেয়েছে তাঁর বুকে। মোস্তাকিন বলছেন, ‘‘ঘুমের মধ্যেও মাঝে মাঝে আঁতকে উঠছি গো! সে দিন নাকি ঘুমের ঘোরে বলছিলাম, ‘আমায় নিয় চলল গো’, শুনে বৌ ভাবল ভূতে পেয়েছে!’’ ভুতে পাওয়ার মতোই জাঁদরেল ভয় ধরেছে। কাঁটা তারের বেড়া তাঁর বাড়ি থেকে তেমন দূরে নয়। তা বলে একেবারে সেই অচেনা দেশে ঠেলে দেবে? মোস্তাকিনের ঘুম এখন আঁধারে উড়েছে।

ভোটার থেকে আধার কার্ড— নাম, ঠিকানা, বয়স ভুলের গেরোয় এখন এমনই ছটফট করছে একের পর এক গ্রাম। ভুল-নাম-ঠিকানার পরিচয় নিয়ে জেরবার মানুষ রাত জেগে হত্যে দিয়ে আছেন সংশোধনের লাইনে। কোথাও পুরুষ নামের পাশে মহিলার ঘোমটা টানা ছবি। কোথাও বা মহিলার নামের উপরে পোক্ত গোঁফের অচেনা পুরুষ। ডোমকলের নাজমুল ইসলাম বলছেন, ‘‘ভোটার, আধার বা রেশন কার্ডে ভুল হামেশাই থাকে। এত দিন সে সব নিয়ে মাথা ঘামাতাম না। সবাই চেনে। তাই তা নিয়ে কেউ প্রশ্নও তোলেননি। কিন্তু এখন তো আর সে উপায় নেই, আর একটু যত্ন নিয়ে যদি কাজটা করত।’’

Advertisement

একটা আধার কার্ড যেমন অন্ধকার ডেকে এনেছে ডোমকলের কুপিলা গ্রামের মালেক শেখের জীবনে। বছরখানেক আগে কার্ড হাতে পেয়েই প্রায় সংজ্ঞা হারানোর জোগাড় হয়েছিল তাঁর। ৩৯ বছরের মালেকের বয়স দেখানো হয়েছে ১২। যা তাঁর ছেলে নবিকুলের থেকে মাত্র এক বছর কম! মালেক বলছেন, ‘‘কী আজব ব্যাপার ভাবুন তো, এক বার ভেবে দেখল না, আমার ছেলের বয়স ১৩ আর আমার কি না ১২, হয় কখনও!’’ ডোমকলের বাবলাবোনার একরামুল হকের ঠিকানা ছিল লালগোলা। হয়ে গিয়েছে অচেনা-অজানা এক গ্রাম। রসুলপুরের আনোয়ার হোসেনের নামের পাশে লেখা ‘ফিমেল’। তালিকা সুদীর্ঘ।

আনোয়ার বলছেন, ‘‘স্ত্রী-পুরুষ নিয়ে অত মাথাই ঘামাইনি। এইটুকু তো জগৎ। রেশনে চালডাল আর সীমান্তে গেলে ভোটার কার্ড দেখালেই বিএসএফের ছাড়পত্র। জওয়ানেরা অত খেয়াল করে দেখতেন না। কিন্তু খুঁটিয়ে দেখতে গিয়েই দেখছি মহাভুল হয়ে গিয়েছে।’’

ডোমকলের টগরী বিবি বলছেন, ‘‘শুনছি, কার্ডে ভুল পেলেই ক্যাম্পে ধরে নিয়ে যাবে, তা আমাদের দোষটা কী বলেন দেখি, সরকারের ভুলে আমাদের এমন নাওয়া-খাওয়া ভুলে খেসারত দিতে হবে কেন?’’

ডোমকলের মহকুমাশাসক সন্দীপ ঘোষ বলছেন, ‘‘আসলে, আধার কার্ডের ব্যাপারে আমাদের তো কোনও করণীয় কিছু নেই। সংশোধন যেখানে হচ্ছে সেখানে গিয়েই বলতে হবে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement