বিদ্যুৎ বিক্রি করে রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার যা আয় হওয়ার কথা, হয় তার অর্ধেক। এর অন্যতম কারণ বিদ্যুৎ বিল ঠিকমতো আদায় না-হওয়া। বিভিন্ন সরকারি দফতরও সময়মতো বিল মেটায় না বলে প্রবল আর্থিক টানাটানি চলে বণ্টন সংস্থায়।
সমস্যা মেটাতে কড়া দাওয়াইয়ের ব্যবস্থা হচ্ছে। আগে বেশি বিদ্যুৎ ব্যবহারকারী সরকারি দফতরগুলির কাছে বিল পাঠানো হত বছর শেষে। ওই সব দফতরের বাজেট বরাদ্দ হলে তবেই বিল মেটানোর প্রক্রিয়া শুরু হত। আর তা চলবে না। নবান্নের নির্দেশ, এ বার থেকে ওই সব দফতরের কাছে তিন মাস অন্তর বিল পাঠিয়ে টাকা আদায় করতে হবে।
বিদ্যুৎ ভবন সূত্রের খবর, জনস্বাস্থ্য কারিগরি, কৃষি, সেচ, জলসম্পদ অনুসন্ধান, পুর, স্বরাষ্ট্র এবং আরও দু’-একটি দফতরে সব থেকে বেশি বিদ্যুৎ খরচ হয়। ফলে ওই সব দফতরের বিলও হয় অনেক বেশি। আপাতত ওই দফতরগুলিকে তিন মাস অন্তর বিল পাঠানো শুরু হয়েছে।
বকেয়া বিদ্যুৎ বিলের ছবিটা কেমন? বিদ্যুৎ দফতর সূত্রের খবর, পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরের একারই ২৫০ কোটি টাকার বিল বাকি আছে। কৃষি এবং সেচ দফতরের বকেয়ার পরিমাণ যথাক্রমে ১৫০ এবং ১১৫ কোটি টাকা। স্বরাষ্ট্র দফতরও বিল বকেয়া রেখেছে ১৫০ কোটি টাকার। সব মিলিয়ে সরকারি দফতরগুলির কাছে বণ্টন সংস্থার পাওনা ৭০০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গিয়েছে।
বিল বকেয়া থাকলে সাধারণ গ্রাহকদের লাইন কেটে দেওয়া হয়। সরকারি দফতরের ক্ষেত্রে কী করা হয়? বিদ্যুৎকর্তাদের ব্যাখ্যা, বিল বাকি থাকলে লাইন কাটার ব্যবস্থা আইনে থাকলেও জরুরি পরিষেবার ক্ষেত্রে তা বলবৎ করা সম্ভব হয় না। অনেকটা সেই কারণে সরকারি দফতরের লাইন কাটা হয় না।
বিল আদায় বাড়াতে সম্প্রতি ছোট সরকারি অফিসগুলিতে চলতি মিটার তুলে দিয়ে প্রি-পেড মিটার লাগাতে শুরু করেছে বণ্টন সংস্থা। পাঁচ কিলোওয়াট পর্যন্ত বিদ্যুৎ ব্যবহারকারী অফিসগুলিতেই ওই ধরনের মিটার লাগানো হচ্ছে। ফলে তাদের আগাম টাকা জমা দিয়েই বিদ্যুৎ ব্যবহার করতে হবে। কিন্তু বেশি বিল হয়, এমন সরকারি দফতরগুলিতে প্রি-পেড মিটার বসানো সম্ভব নয়। তাই বছর শেষে একসঙ্গে বিল না-পাঠিয়ে তিন মাস অন্তর পাঠালে টাকার পরিমাণ কম হবে, দফতরগুলির পক্ষে সেটা দিতেও কিছুটা সুবিধা হবে বলে মনে করা হচ্ছে। বিদ্যুৎ ভবনের আশা, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে বণ্টন সংস্থার আর্থিক হাল ফেরাতে তৎপর হওয়ায় পুরনো বা নতুন বিল আদায়ের ব্যবস্থাটিও মসৃণ হবে।