লাঠি উঁচিয়ে এক বিক্ষোভকারীকে হটিয়ে দিচ্ছে পুলিশ। ছবি: দীপঙ্কর দে।
ছাত্র সংসদের নির্বাচনের জন্য মনোনয়ন তোলাকে কেন্দ্র করে শুক্রবার তপ্ত হল শ্রীরামপুরের দু’টি কলেজ চত্বর। এর মধ্যে শ্রীরামপুর কলেজে এসএফআই ও তৃণমূল ছাত্র পরিষদের (টিএমসিপি) মধ্যে দফায় দফায় মারামারি এবং ইট ছোড়াছুড়িতে দুই ছাত্রী-সহ আহত হলেন দু’পক্ষের কয়েক জন। লাঠি চালিয়ে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। অন্য দিকে, মনোনয়ন ঘিরে কর্তৃপক্ষের একটি সিদ্ধান্ত মানতে না পারায় শ্রীরামপুর গার্লস কলেজে অফিস-ঘরের সামনে ঘণ্টা খানেক বিক্ষোভ দেখায় টিএমসিপি। শেষ পর্যন্ত কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেন।
আগামী ২৮ জানুয়ারি মহকুমার কলেজগুলিতে ভোট। শ্রীরামপুর কলেজের ছাত্র সংসদের ৫২টি আসনের জন্য বৃহস্পতিবার থেকে শনিবার পর্যন্ত মনোনয়ন তোলা এবং জমা দেওয়ার দিন ধার্য হয়েছে। শুক্রবার সকাল থেকেই কলেজ চত্বরে উত্তেজনা ছিল। বেলা ১১টা নাগাদ দলের ছাত্র সংগঠনের ছেলেমেয়েদের পাশাপাশি সিপিএম এবং তৃণমূল দু’পক্ষের কর্মী-সমর্থকেরাই কলেজ গেটের দু’দিকে জড়ো হয়। তাদের মধ্যে দফায় দফায় গোলমাল হয়। সওয়া ১১টা নাগাদ একপ্রস্ত হাতাহাতি হয়। পুলিশ তা সামাল দেয়। স্লোগান-পাল্টা স্লোগান চলতে থাকে। ঘণ্টাখানেক বাদে কলেজে ঢোকা নিয়ে চিৎকার জুড়ে দেয় দু’পক্ষই। আচমকাই মারামারি শুরু হয়।
পুলিশ ও কলেজ সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রথম দিকে এসএফআইয়ের সঙ্গে টিএমসিপির কর্মী-সমর্থকেরা এঁটে উঠতে পারেনি। টিএমসিপি কর্মী বিএ দ্বিতীয় বর্ষের এক ছাত্রের নাকে আঘাত লাগে। জামার বোতাম ছিঁড়ে যায়। প্রাথমিক ধাক্কা কাটিয়ে অবশ্য টিএমসিপিও পাল্টা চড়াও হয় এসএফআইয়ের উপরে। দু’পক্ষই সুযোগ বুঝে প্রতিপক্ষকে কিল-চড়-ঘুষি মারতে থাকে। ছাত্রীরাও মারামারিতে জড়িয়ে পড়েন। ছেলেদের হাতে ছিল লাঠিসোটা। বেগতিক বুঝে পুলিশ লাঠি চালিয়ে এবং লাঠি উঁচিয়ে তাড়া করে মারমুখী দু’পক্ষকে ছত্রভঙ্গ করে। কিন্তু তার পরেও দু’পক্ষের মধ্যে গালিগালাজ এবং ইট ছোড়াছুড়ি চলে। বড় গোলমালের আশঙ্কায় শ্রীরামপুর থানার আইসি প্রিয়ব্রত বক্সি বিশাল বাহিনী নিয়ে ঘটনাস্থলে যান।
এসএফআই জানিয়েছে, তাঁরা ২৩টি মনোনয়নপত্র জমা দিতে পেরেছে। প্রদীপ্তা অধিকারী নামে এক প্রাক্তন ছাত্রী-সহ তাঁদের তিন জন জখম হন। প্রদীপ্তাকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। এক ছাত্রীর জামা ছিঁড়ে দেওয়া হয়। ওই সংগঠনের শ্রীরামপুর আঞ্চলিক কমিটির সম্পাদক প্রতীক চক্রবর্তীর অভিযোগ, ‘‘ওরা সশস্ত্র বহিরাগতদের এনেছিল। পুলিশের সামনেই আমাদের উপরে হামলা করে। তাতেও দমাতে পারেনি। শনিবার আমরা বাকি মনোনয়ন জমার চেষ্টা করব। গণতান্ত্রিক পরিবেশ যাতে থাকে, প্রশাসন তা দেখুক।’’ টিএমসিপি-র বিরুদ্ধে তাদেরও বাধা দেওয়ার অভিযোগ তুলে এবিভিপি জানিয়েছে, তারা ২৭টি মনোনয়নপত্র তুললেও ৪টি জমা দিতে পেরেছে। বাকিগুলি টিএমসিপির ছেলেরা ছিঁড়ে দেয় এবং সংগঠনের জেলা প্রমুখ অরবিন্দ নন্দীকে মারধর করে।
টিএমসিপি দু’টি সংগঠনেরই অভিযোগ মানেননি। এ দিনের গোলমালের জন্য এসএফআইয়ের ‘বহিরাগত’দেরই দায়ী করে তারা জানিয়েছে, পায়েল দেবনাথ নামে বিএ দ্বিতীয় বর্ষের এক ছাত্রী-সহ তাঁদের ৩ কর্মী আহত হয়েছেন। জেলা টিএমসিপি সভাপতি শুভজিৎ সাউয়ের দাবি, ‘‘ওরাই কলেজে দাপিয়েছে। আমাদের ছেলেদের বেধড়ক মারধর করেছে। আবার মিথ্যা অভিযোগও করছে।”
পুলিশ এ দিন শ্রীরামপুর কলেজে লাঠি চালানোর কথা অস্বীকার করে। জেলা পুলিশের এক কর্তা জানান, শ্রীরামপুর কলেজে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ার আগেই কড়া ভাবে দমন করা হয়েছে। আজ, শনিবার কোনও রকম অশান্তি এড়াতে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা করা হবে।
অন্য দিকে, এ দিন শ্রীরামপুর গার্লস কলেজের ১৮টি আসনের মনোনয়নপত্র তোলার দিন ছিল। কর্তৃপক্ষ গত তিন বছরের মতো এ বারও সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, পরীক্ষায় কোনও একটি বিষয়ে পাশ নম্বর না পেয়ে পরের বর্ষে উঠেছেন, এমন কোনও ছাত্রী প্রার্থী হতে পারবেন না। কিন্তু টিএমসিপির ওই ধরনের কয়েক জন প্রার্থী মনোনয়ন তুলতে গেলে কলেজ কর্তৃপক্ষ নিয়মের কথা জানিয়ে তা দিতে অস্বীকার করেন। বিষয়টি মানতে চায়নি টিএমসিপি। তারা বিক্ষোভ শুরু করে। তৃণমূলের লোকজন কলেজের গেটের বাইরে বিক্ষোভ দেখায়। পুলিশ আসে।
টিএমসিপি-র অভিযোগ, ওই সিদ্ধান্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মের পরিপন্থী। টিএমসিপি-র জেলা সভাপতি বলেন, ‘‘কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মে ভোটার তালিকায় যাঁদের নাম আছে, তাঁরা সবাই প্রার্থী হতে পারেন। কলেজ কর্তৃপক্ষ এমনটা করতে পারেন না।’’ দাবির বিষয়টি টিএমসিপি-র ছাত্রীদের তরফে ফ্যাক্স মারফত জানানো হয় কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে।
দুপুরে বৈঠকে বসেন কলেজ কর্তৃপক্ষ। তার পরেই তাঁরা সিদ্ধান্ত নেন, পরীক্ষায় কোনও বিষয়ে পাশ নম্বর না পেয়ে পরের বর্ষে উঠেছেন, এমন ছাত্রীরাও মনোনয়ন তুলতে পারবেন। আজ, শনিবার মনোনয়নপত্র তোলা এবং জমা দেওয়া যাবে। কলেজ কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, গত তিন বছর ধরে আগের নিয়মেই ভোট হচ্ছিল। এ দিন বাধ্য হয়েই তাঁরা সিদ্ধান্ত পাল্টেছেন। কলেজের টিচার ইনচার্জ অনুরাধা ঘোষ বলেন, “টিচার্স কাউন্সিলে আলোচনা করেই পুরনো নিয়মে ভোট হচ্ছিল। কিন্তু এ বার একটি ছাত্র সংগঠন নিয়মের পরিবর্তন চেয়ে কার্যত ঘেরাও করে। তাই মেনে নিতে হয়েছে।”
তবে, নতুন সিদ্ধান্তে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে টিএমসিপি-র প্রধান প্রতিপক্ষ ডিএসও। সংগঠনের জেলা সম্পাদক দীপঙ্কর মণ্ডল বলেন, ‘‘টিএমসিপি-কে সুবিধা করে দিতে নিয়ম বদলানো হল। তবে সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে কলেজ কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত আমরা মেনে নিচ্ছি।’’