এই রাস্তা দিয়েই হেঁটেছেন বিডিও। খানাকুলে। ছবি: মোহন দাস
রাস্তার কী হাল, নিজের চোখে দেখুন এই দাবি তুলে বিডিও-কে তাঁর অফিস থেকে কিলোমিটার খানেক হাঁটাল জনতা। তার পরে আর তিনি যেতে না চাওয়ায় ঘেরাও করে রাখা হল ঘণ্টা তিনেক।
হুগলির খানাকুল ১ ব্লক থেকে স্থানীয় কাবিলপুর প্রায় চার কিলোমিটার এই রাস্তা মেরামতের দাবি ব্লক প্রশাসনের কাছে দীর্ঘদিন ধরেই জানিয়ে আসছিলেন স্থানীয় বাসিন্দারা। সোমবার সকালে সেই ক্ষোভই বড়সড় চেহারা নেয়। স্থানীয় পাঁচ-ছ’টি গ্রামের মানুষ ব্লক অফিসের মূল ফটক বাঁশ দিয়ে ঘিরে দেন। ব্লক অফিসের কোনও কর্মী ঢুকতে তো পারেনইনি, বিডিও-কে একপ্রকার জোর করেই ভাঙা রাস্তায় হাঁটতে নিয়ে যাওয়া হয়। নিষ্কৃতি পাওয়ার আগে বিডিওকে প্রতিশ্রুতি দিতে হয়, সাত দিনের মধ্যে গর্ত ভরাটের কাজ হবে এবং দ্রুত আমূল সংস্কারের চেষ্টাও চালাবেন।
পরে বিডিও গোবিন্দ হালদার বলেন, “ওঁদের দাবি ন্যায্য, কিন্তু আন্দোলনের এই পন্থা ঠিক নয়। রাস্তা সংস্কারের জন্য কী-কী ব্যবস্থা নিয়েছি, তা বিস্তারিত জানানোর পরেও হাঁটতে বাধ্য করা হয়েছে আমাকে। পুলিশও ঠিক সময়ে আসেনি।” বিডিও-র দাবি, বেলা ১০টা ৫০ নাগাদ গোলমালের শুরুতেই তিনি থানায় ফোন করেছিলেন। কিন্তু কয়েক জন সিভিক পুলিশ পাঠানো হয়। এসডিপিও (আরামবাগ) শিবপ্রসাদ পাত্র অবশ্য পুলিশের গাফিলতির কথা মানতে চাননি। সাড়ে তিন ঘণ্টা পরে আরামবাগ মহকুমাশাসকের নির্দেশে এক ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট গিয়ে তাঁকে উদ্ধার করেন। সঙ্গে পুলিশের বড় বাহিনীও ছিল।
এ দিন সকাল থেকেই ব্লক অফিসের সামনে জড়ো হয়েছিলেন হাজার পাঁচেক মানুষ। তাঁদের তরফে ব্যোমকেশ ওরফে রান্টে মাজি অভিযোগ করেন, “রাস্তাটি গুরুত্বপূর্ণ হওয়া সত্ত্বেও বছরের পর বছর সংস্কার হয় না। রাস্তা খারাপ হওয়ায় বছর তিনেক ধরে ট্রেকার চলাচল বন্ধ। এখন তো সাইকেলে বা হেঁটে চলাও দুষ্কর। এর আগে বার ছয়েক বিডিও-র কাছে স্মারকলিপি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু পরিস্থিতি বদলায়নি। আমরা কী ভাবে চলাচল করছি, তা বোঝাতেই বিডিও-কে ওই রাস্তায় হাঁটানো হয়।” ব্লকের নানা দফতরের কর্মী এবং পঞ্চায়েত সমিতির কর্মাধ্যক্ষদের দুপুর ৩টে পর্যন্ত অফিসের বাইরেই অপেক্ষা করতে হয়েছে। ব্লক অফিসে কাজে এসে হয়রান হয়েছেন বহু মানুষ।
বিডিও-র বক্তব্য, খানকুল ১ ব্লক বন্যাপ্রবণ হওয়া সত্ত্বেও বিপর্যয় মোকাবিলা তহবিল (এসডিআরএফ) থেকে টাকা পাওয়া যায়নি। কাবিলপুর পর্যন্ত ওই চার কিলোমিটার রাস্তার জন্য গত বছর অগস্টে প্রায় ৭৬ লক্ষ টাকার প্রস্তাব পাঠানো হয়েছিল। তাতে জুড়ে দেওয়া হয়েছিল বছরে ১০০ দিন কাজের প্রকল্পও। কিন্তু সেই প্রস্তাব অনুমোদন পায়নি। প্রশাসন সূত্রের খবর, বছরখানেক আগে পঞ্চায়েত সমিতির সীমিত তহবিল থেকে বোল্ডার ও মোরাম ফেলে রাস্তা সারানোর চেষ্টা শুরু হয়েছিল। কিন্তু স্থানীয় বাসিন্দারা কংক্রিটের রাস্তার দাবি তুলে বাধা দেন। কংক্রিটের রাস্তা তৈরির ১ কোটি ৫৪ লক্ষ টাকার প্রকল্প জেলাস্তরে পাঠানো হয়েছে। তারও কিছু হয়নি।
মহকুমাশাসক প্রতুলকুমার বসু দাবি করেন, “নানা পরিষেবার দাবিতে জনগণের ক্ষোভ বিক্ষোভ থাকেই, কিন্তু অসুবিধা দূর করতে আমরা আন্তরিক ভাবে চেষ্টা করছি। কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা যাতে না ঘটে, সে ব্যপারে সকলকেই সচেতন হতে হবে।” তাঁরই নির্দেশে ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট শান্তিনাথ গড়াই গিয়ে বিডিওকে উদ্ধার করেন। বিডিও বলেন, “আপাতত চলার যোগ্য করে তুলতে রাস্তায় তাপ্পি মারা শুরু হবে।”