ক’দিন বাদেই দুর্গাপুজো। চাঁদার বিল হাতে রাস্তায় রাস্তায় দাঁড়িয়ে পড়ছেন পুজোর উদ্যোক্তারা। অভিযোগ, পুজোর নামে রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় শুরু হয়েছে চাঁদার নামে জুলুম। চাঁদা আদায়কারীদের দাবি পূরণ করতে জেরবার হচ্ছেন ট্রাক চালকরা। এই অবস্থায় চাঁদার জুলুম রুখতে খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হস্তক্ষেপ প্রার্থনা করছেন ট্রাক মালিকরা।
সম্প্রতি ফেডারেশন অব ওয়েস্ট বেঙ্গল ট্রাক অপারেটর্স অ্যাসোসিয়েশনের তরফে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে অভিযোগপত্র পাঠানো হয়। সংগঠনের যুগ্ম সম্পাদক প্রবীর চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘যা পরিস্থিতি, তাতে কালীপুজো, জগদ্ধাত্রী পুজো পর্যন্ত এমন জুলুম চলতে থাকলে আমাদের সর্বনাশ হবে, পুজোর উদ্যোক্তারা কোনও কথাই শুনতে চান না। দাবি মতো টাকা না পেলে চালক-খালাসির গায়ে হাত দিতেও দ্বিধা করেন না।’’ হুগলি জেলার ট্রাক মালিকরাও বিষয়টি নিয়ে সরব হয়েছেন।
হুগলির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর) তথাগত বসু বলেন, ‘‘চাঁদার জুলুম আটকাতে জেলার সর্বত্রই পুলিশ নজর রাখছে, এ ব্যাপারে অভিযোগ পেলে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে,’’
দিন কয়েক আগে বহরমপুরে রাস্তায় গাড়ি থেকে চাঁদা তুলছিলেন এক দল লোক। টহলদারি পুলিশকর্মীরা তাতে বাধ সাধায় পুলিশই তাদের আক্রমনের লক্ষ হয়ে যায়। অভিযোগ, পুলিশের গাড়ি ভাঙচুর করে চাঁদা আদায়কারীরা। এক পুলিশকর্মী প্রহৃত হন। সাধারণ মানুষেরও বক্তব্য, অনেক সময় চাঁদা আদায়কারীরা রাস্তায় দাঁড়িয়ে গা-জোয়ারি করেন। ট্রাকচালকদের অভিযোগ, বিভিন্ন জেলায় রাজ্য সড়ক বা জাতীয় সড়ক সর্বত্রই একই অবস্থা। বিশেষ করে ২, ৬ ও ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের কথা প্রশাসনকে দেওয়া চিঠিতে উল্লেখ করেছে ট্রাক মালিকদের ওই সংগঠন। তাদের দাবি, কলকাতাতেও ট্রাকচালকরা এমন অভিজ্ঞতার শিকার হচ্ছেন, ভিন্ রাজ্যের ট্রাক মালিকরা এ রাজ্যে গাড়ি পাঠাতে অনীহা প্রকাশ করছেন।
চিঠিতে সংগঠনের সভাপতি মোহিন্দর সিংহ গিল এবং সাধারণ সম্পাদক সুভাষচন্দ্র বসুর অভিযোগ, কলকাতা ও হলদিয়া বন্দর থেকে শুরু করে হাওড়া, হুগলি, দুই ২৪ পরগনায় যেখানে জুট মিল আছে, বনগাঁ-ঘোঁজাডাঙা সীমান্ত, রেলের সাইডিং সর্বত্রই চরম হেনস্থার মুখে পড়তে হচ্ছে ট্রাক চালকদের, বিভিন্ন জেলার রাস্তাঘাটে গাড়ি আটকানো তো আছেই।
শ্রীরামপুরের এক ট্রাক চালকের দাবি, ‘‘শ্রীরামপুর সাইডিং থেকে রিষড়ার বালিখালে যেতে ৪৬০ টাকা চাঁদা গুনতে হয়েছে। শিলিগুড়ি বা মালদায় গেলে কত টাকা দিতে হয় ভাবুন।” হুগলিরই অন্য এক ট্রাক মালিকের বক্তব্য, ‘‘এমনিতেই পুলিশকে খুশি করতে হয় বছরভর। তার উপর চাঁদার জুলুমে সমস্যা বাড়ে, ট্রাক দাঁড় করিয়ে চাঁদা তোলার রেওয়াজ নতুন নয়, কিন্তু জুলুম দিনের দিন বাড়ছে।’’
বিভিন্ন জেলার পুলিশ আধিকারিকরা জানিয়েছেন, জুলুমের অভিযোগ পেলেই উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে, ট্রাক মালিকরা অবশ্য চাইছেন, বিচ্ছিন্ন ভাবে ব্যবস্থা নেওয়া নয়, টহলদারি বাড়িয়ে জুলুম পুরোপুরি বন্ধ করুক প্রশাসন।