পঞ্চায়েতের কাজের অ্যাকশন প্ল্যান অনুমোদন করার সাধারণ সভায় সংখ্যাগরিষ্ঠের সমর্থন পেয়ে গিয়েছিল বিরোধী তৃণমূলের আনা উন্নয়ন প্রস্তাব। কিন্তু প্রস্তাবের বিরুদ্ধে পক্ষপাতের অভিযোগ এনে অর্থের স্থায়ী সমিতির বৈঠকে তা অনুমোদন করলেন না বাম পরিচালিত পঞ্চায়েতের প্রধান। ফলে, আটকে রয়েছে আইএসজিপি, তৃতীয় এবং ১৩ তম অর্থ কমিশনের দেওয়া ৫০ লক্ষ টাকার বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ। কিন্তু দু’পক্ষই নিজেদের অবস্থানে অনড়। ফলে পরবর্তী সাধারণ সভায় যদি সমঝোতা না হয় তা হলে উন্নয়নের সুফল থেকে বঞ্চিত হবেন এলাকার মানুষ। এই অবস্থায় সংখ্যাগরিষ্ঠতা সত্ত্বেও বাম বোর্ডের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনতে পারছে না তৃণমূল। কারণ, বর্তমান পঞ্চায়েতের এখনও এক বছর পূর্ণ হয়নি। ঘটনাটি উলুবেড়িয়া দক্ষিণ বিধানসভা কেন্দ্রের উলুবেড়িয়া-১ পঞ্চায়েত সমিতির বহিরা পঞ্চায়েতের।
২০১৩ সালের ১৬ অগস্ট ওই পঞ্চায়েতের প্রধান নির্বাচিত হয়। আগামী ১৫ অগস্ট পঞ্চায়েতের এক বছর পূর্ণ হবে। ফলে এখনও মাস দেড়েক বাকি। এর পরে অনাস্থা প্রস্তাব আনা, তা পাশ হওয়া থেকে নতুন প্রধান নির্বাচন, প্রধানের নামে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খোলা ইত্যাদি প্রক্রিয়া শেষ হতে আরও মাসাধিক কাল লেগে যাবে বলে জেলার পঞ্চায়েত দফতরের কর্তাদের দাবি। তার পরে প্রকল্পের টেন্ডার প্রক্রিয়া শেষ করে কাজ চালু করতে আরও দিন পনেরো সময় লাগবে। ফলে, ততদিন পর্যন্ত উন্নয়নমূলক কাজ বন্ধ থাকবে। ঢালাই রাস্তা, নলকূপ, নিকাশি প্রভৃতি কাজের সুযোগ থাকলেও আপাতত তাতে দাঁড়ি পড়েছে। বিডিও মৌলী সান্যাল বলেন, “বিষয়টি জানা নেই। খোঁজ নিয়ে দেখছি। তবে, এই পরিস্থিতি কাম্য নয়। প্রয়োজন হলে দু’পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করা হবে। উন্নয়নের কাজ আটকানো যাবে না।”
বহিরা পঞ্চায়েত সূত্রে খবর, পঞ্চায়েতে মোট আসন ১৮। এর মধ্যে তৃণমূল ৮, সিপিএম ৬ এবং ফরওয়ার্ড ব্লকের ৪টি আসন। পঞ্চায়েত সমিতির দু’জন বামেদের এবং এক জন তৃণমূলের। পঞ্চায়েতের ১০ জন সদস্য এবং দু’জন পঞ্চায়েত সমিতির সদস্যের সমর্থনে সংখ্যাগরিষ্ঠ হয়ে বোর্ড গঠন করে বামফ্রন্ট। যদিও তৃণমূলের দাবি, মে মাসে ফরওয়ার্ড ব্লকের দু’জন পঞ্চায়েত সদস্য এবং একজন পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য তাদের সমর্থন করে। ফলে, অলিখিত ভাবেই পঞ্চায়েতে সংখ্যাগরিষ্ঠ হয় যায় তৃণমূল। এ দিকে মে মাসেই পঞ্চায়েতে আইএসজিপি-র ৩৮ লক্ষ টাকা এবং তৃতীয় ও ১৩ তম অর্থ কমিশনের ৬ লক্ষ টাকা করে মোট ১২ লক্ষ টাকা আসে। সব মিলিয়ে ৫০ লক্ষ টাকার কাজের প্রকল্প পেশ করে বাম বোর্ড গত ২৭ মে সাধারণ সভায় অনুমোদনের জন্য। পাল্টা প্রকল্প পেশ করে বিরোধী তৃণমূলও।
জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর, তৃণমূলের ৮ জন এবং বামেদের ২ জন পঞ্চায়েত সদস্য তৃণমূলের পেশ করা প্রকল্প সমর্থন করেন। কিন্তু পঞ্চায়েতের বৈঠকের রেজোলিউশনে প্রধান সই না করে চলে যান। যদিও নিয়ম অনুযায়ী, ওই প্রস্তাব সংখ্যাগরিষ্ঠতার নিরিখে পাস হয়ে গিয়েছে বলে পঞ্চায়েত কর্তারা জানিয়েছেন।
এ প্রসঙ্গে বহিরা পঞ্চায়েতের প্রধান শৈলেন পুরকায়েতের অভিযোগ, ওই প্রকল্প পক্ষপাতদুষ্ট। তিনি বলেন, “তৃণমূলের পেশ করা প্রকল্পে ৫০ লক্ষ টাকায় ১৮টি বুথের বদলে এমন ১০টি বুথে কাজ করার প্রস্তাব ছিল যেখানে ওঁদের দলের সদস্য রয়েছেন। কিন্তু আমরা চাই, সব বুথেই কাজ করা হোক। তাই ওই প্রস্তাব আমি সমর্থন করিনি।” তাঁর দাবি, “যে দু’জন বাম সদস্য তৃণমূলকে সমর্থন করেছেন, তাঁরা লোভের কারণেই তা করেছেন।”
তৃণমূলের তরফে অবশ্য ১০টি বুথে কাজের প্রস্তাবের কথা স্বীকার করা হয়েছে। পঞ্চায়েতের বিরোধী দলনেতা শ্যামল করণ বলেন, “এর আগে ওরা আমাদের বঞ্চিত করে যে সব বুথে কাজ করেছিল সেগুলিতে ওদের দলের সদস্য ছিলেন। সংখ্যালঘু থাকায় তখন আমাদের আপত্তি কেউ কানে তোলেনি। এ বার সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করায় আমাদের সদস্য রয়েছে এমন বুথে বেশি কাজ করে সমতা ফিরিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। সেই অনুযায়ী ওই প্রস্তাব পেশ করেছিলাম।”
আগামীকাল ২৭ জুন অর্থ কমিটির সভা রয়েছে। সেখানে কোনও সমঝোতা হয় কি না, এখন তারই অপেক্ষা। তার উপরেই নির্ভর করছে ৫০ লক্ষ টাকার উন্নয়নমূলক কাজের ভাগ্য।