গোলাপ খেতে জল সেচ চাষির। ছবি: সুব্রত জানা।
বিদেশে রফতানির জন্য বছর তিনেক আগে বাগনানের বাঁকুড়দহ গ্রামে উন্নত মানের গোলাপ চাষের প্রসারে উদ্যোগী হয়েছিল রাজ্য কৃষি বিপণন এবং উদ্যানপালন দফতর। চাষিরা যাতে বেশি লাভের মুখ দেখেন, সেই উদ্দেশ্যও ছিল। এ জন্য ফুলচাষিদের নিখরচায় বীজও সরবরাহ করে তারা। কিন্তু সেই প্রচেষ্টা মাঠেই মারা গেল। বন্ধ হয়ে গিয়েছে চাষ। এ নিয়ে দু’পক্ষের মধ্যে চাপান-উতোরও শুরু হয়েছে।
ফুলচাষিরা দুষছেন সরকারি ওই দুই দফতরকে। তাঁদের অভিযোগ, উন্নত মানের গোলাপ চাষের জন্য প্রয়োজনীয় বীজ সরবরাহ করা হচ্ছে না। অথচ, ওই চাষের জন্য জমির পরিকাঠামো তৈরি করতে গিয়ে তাঁদের বিস্তর খরচ হয়েছে। প্রথম বছরেই তাঁদের উন্নত মানের বীজ দেওয়া হয়নি। তাঁরা ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন। তাই ওই চাষ ছেড়ে তাঁরা চিরাচরিত পদ্ধতিতে দেশীয় গোলাপ চাষের দিকেই ঝুঁকেছেন।
ওই দুই দফতর আবার পাল্টা দুষছে চাষিদেরই। তাদের দাবি, প্রথম বছর যে মানের গোলাপ উৎপাদন হয়েছিল সেটা গুণমান সম্পন্ন ছিল না। ফুলচাষিরা ‘গ্রিন হাউস’ (সরাসরি রোদ বা বৃষ্টি আটকাতে ফুলচাষের জন্য জমির উপর এবং চার পাশ সবুজ প্লাস্টিকে ঘিরে রাখা) পদ্ধতি মেনে পরিকাঠামো গড়ে তোলেননি। ফলে, আর ওই চাষের ব্যাপারে চেষ্টা করা হয়নি।
কৃষি বিপণন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ইতালি সরকার ওই বিশেষ প্রজাতির গোলাপ কিনতে আগ্রহ প্রকাশ করায় চাষের পরিকল্পনা করা হয়েছিল। মন্ত্রী অরূপ রায় অবশ্য বলেন, “উন্নত মানের গোলাপ চাষের জন্য চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু তা সফল হয়নি। এখন ওখানকার ফুলচাষিরা যদি ওই চাষে আগ্রহী থাকেন, আমার কাছে আবেদন করুন। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।”
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, দীর্ঘদিন ধরেই বাঁকুড়দহ, কাঁটাপুকুর-সহ ওই এলাকার বেশ কয়েকটি গ্রামে কয়েকশো বিঘা জমিতে গোলাপ-সহ নানা ফুল চাষ করেন চাষিরা। কিন্তু অনেকেই দাম পান না। তাই লম্বা ডাঁটিযুক্ত এবং কম কাঁটার বড় আকারের গোলাপ (প্যাশন বা ফার্স্ট রেড প্রজাতি) চাষের জন্য ওই গ্রামটিকেই বেছে নেয় কৃষি বিপণন এবং উদ্যানপালন দফতর। যাতে ওই গোলাপ উৎপাদন করে বিদেশে রফতানি করা যায় এবং চাষিরা বেশি লাভের মুখ দেখেন। উদ্যানপালন দফতরের আধিকারিকেরা ফুলচাষিদের সঙ্গে বৈঠক করেন। তাঁদের উন্নত মানের গোলাপ-বীজ দেওয়া হয়। হাতে-কলমে প্রশিক্ষণও দেওয়া হয়। চাষও করেছিলেন বেশ কয়েক জন চাষি।
তবে, প্রথম বছর ফুলের উৎপাদন আশানুরূপ হয়নি। চাষিরা জানান, মাঝারি মানের ফুল উৎপাদন হয়েছিল। বীজের মান খারাপ থাকায় উৎপাদনের জন্য তাঁদের বিস্তর দুর্ভোগ পোহাতে হয় বলে অভিযোগ। দ্বিতীয় বছর ফের উদ্যোগী হয় কৃষি বিপণন দফতর এবং ফুল চাষিরা। বেশি সংখ্যায় চাষিরা ওই গোলাপ চাষ করেন। এ জন্য পরিকাঠামোও তৈরি করেন। চাষিরা জানান, নিচু জমি মাটি ফেলে উঁচু করা হয়। পাইপলাইনে জমিতে জল দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়। দ্বিতীয় বছর তাঁরা আর দেশীয় গোলাপ চাষই করেননি। কিন্তু উন্নত গোলাপের বীজ মেলেনি।
কেন দ্বিতীয় বছর দুই সরকারি দফতর বীজ সরবরাহ করেনি, তা নিয়ে প্রশ্নের কোনও সদুত্তর মেলেনি আধিকারিকদের কাছ থেকে। তবে, চাষিরা এখনও ওই ধরনের গোলাপ চাষে আগ্রহী। তাঁদের মধ্যে অভিজিৎ খাঁড়া নামে এক ফুলচাষি বলেন, “জমি উঁচু করা, জলের ব্যবস্থা করা সব মিলিয়ে ২০ হাজার টাকা খরচ হয়। উন্নত মানের গোলাপের জন্য আমরা দেশীয় গোলাপ চাষ করিনি। ফলে, সব মিলিয়ে ৫০ হাজার টাকা ক্ষতি হয়। তাই বাধ্য হয়ে এই বছরে ওই জমিতে দেশীয় গোলাপ চাষই শুরু করেছি। উন্নত বীজ দিলে ফের ওই ধরনের গোলাপ চাষ করতে পারব।”