তারকেশ্বর

পদপিষ্ট হয়ে মৃত্যু পুণ্যার্থীর

তারকেশ্বরের পথে পুলিশের নির্দেশ মানলেন না মন্দির অভিমুখী পুণ্যার্থীদের একাংশ। বিশৃঙ্খলার জেরে পদপিষ্ট হয়ে প্রাণ গেল এক মাঝবয়সী মহিলার। আহত হলেন আরও ৩৫ জন। শনিবার গভীর রাতে কামারকুণ্ডু লেভেলক্রসিং ওই দুর্ঘটনায় মৃত মহিলার পরিচয় সোমবার রাত পর্যন্ত জানা যায়নি। এ ধরনের দুর্ঘটনা এড়াতে এ বার থেকে পুণ্যার্থী-সুরক্ষায় নতুন কিছু বিধি চালু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পুলিশ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কামারকুণ্ডু শেষ আপডেট: ০৫ অগস্ট ২০১৪ ০২:৩৫
Share:

ধাক্কাধাক্কি। তারকেশ্বরে যাওয়ার পথে বৈদ্যবাটিতে। ছবি: প্রদীপ আদক

তারকেশ্বরের পথে পুলিশের নির্দেশ মানলেন না মন্দির অভিমুখী পুণ্যার্থীদের একাংশ। বিশৃঙ্খলার জেরে পদপিষ্ট হয়ে প্রাণ গেল এক মাঝবয়সী মহিলার। আহত হলেন আরও ৩৫ জন। শনিবার গভীর রাতে কামারকুণ্ডু লেভেলক্রসিং ওই দুর্ঘটনায় মৃত মহিলার পরিচয় সোমবার রাত পর্যন্ত জানা যায়নি। এ ধরনের দুর্ঘটনা এড়াতে এ বার থেকে পুণ্যার্থী-সুরক্ষায় নতুন কিছু বিধি চালু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পুলিশ। রাজ্য পুলিশের এক কর্তার দাবি, পুণ্যার্থীদের ভিড়ে মিশে থাকা উচ্ছৃঙ্খলদের নিয়ন্ত্রণ করতেই এ কথা ভাবা হয়েছে।

Advertisement

শ্রাবণ মাসে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে লক্ষ লক্ষ মানুষ তারকেশ্বর মন্দিরে শিবের মাথায় জল ঢালতে যান। শনি, রবি এবং সোমবার সব থেকে বেশি ভক্ত সমাগম হয়।

পুলিশ জানায়, সোমবার ভোরে তারকেশ্বর মন্দিরে পৌঁছতে তাড়াহুড়ো করছিলেন ভক্তদের একাংশ। তাঁরা কামারকুণ্ডু লেভেলক্রসিংয়ে পৌঁছন রাত ১টা নাগাদ। তখন বেশ জোরে বৃষ্টি পড়ছে। পর পর দূরপাল্লার ট্রেন থাকায় প্রায় আধ ঘণ্টা বন্ধ ছিল গেট। ফলে, ভিড় বাড়ছিল। ইতিমধ্যে ওই লেভেলক্রসিং লাগোয়া রাস্তার ধারের একটি ট্রান্সফর্মার থেকে আগুনের ফুলকি ছড়াতে থাকে। তাতে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন পুণ্যার্থীরা। ঘটনাস্থলে হাজির পুলিশ ভরসা জোগালেও, তা কানে তোলেনি জনতা। ঠেলাঠেলি ক্রমশ চেহারা নেয় হুড়োহুড়ির। তাতেই পড়ে যান অনেকে।

Advertisement

এক প্রত্যক্ষদর্শী উত্তর ২৪ পরগনার শিবানী মণ্ডল বয়স্ক মা-কে নিয়ে তারকেশ্বরে যাচ্ছিলেন। তাঁর অভিজ্ঞতা, “পুলিশের কথা কেউ শোনেনি। চোখের সামনে আমার মা এবং ওই মহিলা পড়ে যান। মাকে তুলতে ব্যস্ত হয়ে পড়ি। ভদ্রমহিলাকে আর তুলতে পারিনি।”

ঘটনার প্রাথমিক তদন্তের পরে জেলা পুলিশের ধারণা, শৃঙ্খলা মানতে না চাওয়া কয়েক জনের জন্য দুর্ভোগ হয়েছে অন্যদের। রাজ্য পুলিশের এক কর্তার কথায়, “ধর্মীয় আবেগ নিয়ে প্রশ্ন নয়। প্রশ্নটা হল সেই আবেগকে সামনে রেখে যে ভাবে অনেকে শৃঙ্খলা ভাঙার চেষ্টা করেন, তা নিয়ে।” পুলিশের অভিজ্ঞতা, শৃঙ্খলার ধার না ধারা এই ‘বাঁকওয়ালা’দের অনেকেই প্রকাশ্যে নেশা করা, মহিলাদের বিরক্ত করা, সাধারণ যাত্রীদের বিপাকে ফেলার মতো ঝামেলা খাড়া করেন। পুণ্যার্থীদের মধ্যে মিশে থাকা এই অংশকে নজরে রাখতেই শেওড়াফুলির নিমাইতীর্থ ঘাটে ‘ক্লোজড সার্কিট টিভি’ও বসাতে হয়েছে প্রশাসনকে।

তারকেশ্বরের পুণ্যার্থীদের নিরাপত্তার বিষয়টি খতিয়ে দেখতে এ দিন দুপুরে কামারকুণ্ডুুতে এসআরপি (হাওড়া) মেহেমুদ আখতার, ডিআইজি(রেল) রবীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়-সহ রেল পুলিশ এবং হুগলির পুলিশ সুপার সুনীল চৌধুরী-সহ রাজ্য পুলিশের কর্তারা বৈঠকে বসেন। হুগলির পুলিশ সুপার সুনীল চৌধুরী বলেন, “সপ্তাহের যে তিনটে দিন মন্দিরের পথে ভিড় বেশি থাকে, সে দিন জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে টহলদার পুলিশের সংখ্যা বাড়ানো হবে। ভিড় নিয়ন্ত্রণের জন্য মাইকে নিয়মিত প্রচারও করা হবে।”

রাজ্যের কৃষি প্রতিমন্ত্রী তথা হরিপালের বিধায়ক বেচারাম মান্না বলেন, “কামারকুণ্ডুর ওই লেভেলক্রসিংয়ের উপরে উড়ালপুল করার জন্য আমরা রেল কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করেছি। রেল ওখানে মাটি পরীক্ষার কাজ শুরু করেছে। পাশাপাশি, রেল পুলিশ এবং রাজ্য পুলিশও দুর্ঘটনা এড়াতে নানা ব্যবস্থা করছে।” তবে তাঁর সংযোজন, “মানুষের আবেগ নিয়ে কিছু বলার নেই। কিন্তু কিছু ক্ষেত্রে শৃঙ্খলা বজায় রাখার দরকার আছে।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement