জজ্ঞালে বুজে গিয়েছে শহরের নিকাশি নালা।
রাস্তাঘাটের বেশিরভাগই কংক্রিটের। দ্রুত বাড়ছে জনবসতি। রয়েছে একাধিক সংস্কৃতি ও সাহিত্য নির্ভর সংস্থা। একটা আধুনিক শহর গড়ে ওঠার জন্য দরকারি যাবতীয় পরিকাঠামো ও মনন মজুত রয়েছে। কপালে এখনও পুরসভার মর্যাদা জোটেনি। ফলে শহর বিস্তারের সঙ্গে সঙ্গে যে সব সমস্যা মাথা চাড়া দিচ্ছে তার সুষ্ঠু সমাধান অধরাই থেকে গিয়েছে।
চার বছর আগেই ২০১১ সালের গোড়ায় তত্কালীন বামফ্রন্ট সরকারের আমলে রাজ্য পুর ও নগরোন্নয়ন দফতর থেকে বাগনানে পুরসভা গঠনের খোঁজ-খবর নেওয়া হয়। বাগনান ১ ব্লকের বাগনান ১ এবং ২ ও খালোড় গ্রাম পঞ্চায়েতে চিঠি লিখে পুরসভা হওয়ার জন্য যে যে তথ্য দরকার তা জানতে চাওয়া হয়। তৃণমূল কংগ্রেস রাজ্যে ক্ষমতায় আসার পরেও হাওড়া জেলায় পাঁচটি যে নতুন পুরসভা গঠনের কথা ঘোষণা হয় তার মধ্যেও ছিল বাগনান। কিন্তু ওই টুকুই। ফলে বাগনানের অলিতে-গলিতে এখন একটাই সুর, ‘তোমার দেখা নাই’!
বাগনানে পুরসভা গঠনের দাবি অনেক পুরনো। উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে এই শহরের জনবসতি বেড়েছে দ্রুতলয়ে। বাগনান এক সময়ে সীমাবদ্ধ ছিল কাছারিপাড়া এলাকার মধ্যে। ক্রমে তার দ্রুত বিস্তার ঘটেছে কাছারিপাড়ার আরও দক্ষিণে রথতলা, বেড়াবেড়িয়া, মুরালিবাড়, হেতমপুর, দুর্লভপুর, নজরপুর, খালোড়, শীতলপুর, মহাদেবপুর, গোবর্ধনপুর, পূর্বে খাদিনান, চন্দ্রপুর, গোপালপুর পর্যন্ত।
এই শহরে যেমন রয়েছেন আদি বাসিন্দা, তেমনই হাওড়া ও হুগলির বিভিন্ন এলাকা থেকে মানুষজন এই শহরে এসে জমি কিনে গড়ে তুলেছেন নয়া বসত। এন ডি ব্লক তেমনই একটি। শুধু জমি কিনে বাড়ি তৈরি নয়, গত দশ বছরে বাগনান বহুতল সংস্কৃতি-জ্বরে আক্রান্ত। আক্ষরিক অর্থেই এখানে গড়ে উঠেছে বিভিন্ন এলাকার মানুষের সমন্বয়ে ‘কসমোপলিটন’ সংস্কৃতি। দু’হাত ছাড়া চায়ের দোকান, আর অফুরন্ত আড্ডা শহরের প্রাণ। প্রতি মাসে শহরে বসে ভিন্ন ভিন্ন লিটল ম্যাগাজিনের উদ্যোগে সাহিত্যসভা। রয়েছে সঙ্গীত শিক্ষার একাধিক প্রতিষ্ঠান। শীতভর শহরের আনাচে-কানাচ ভরে যায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে। কিন্তু এটাই সব নয়। আরও একটু বেশি চায় বাগনান। চান বাগনানের মানুষ।
বাগনান থানা নাগরিক সমিতির পক্ষে প্রসূন রায়, প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক বিভাস সামন্ত, বাগনান ১ পঞ্চায়েত সমিতির প্রাক্তন সভাপতি প্রশান্ত ভট্টাচার্যের মতো ব্যক্তিরা সাফ বলেন, “বাগনানকে পুরসভায় পরিণত করা অবশ্য দরকার। না-হলে অনেক সমস্যার সমাধান হবে না।”
শহরের জলকষ্টের পরিচিত ছবি।
শহরের বিভিন্ন রাস্তা হয় পাকা নয় কংক্রিটের। কিন্তু নেই জল নিকাশি ব্যবস্থা। হরেকৃষ্ণ কোঙার মার্কেটের উত্তর দিক দিয়ে যে নিকাশি নালা বয়ে গিয়েছে তা নিয়মিত সাফ হয় না। ফলে বর্ষাকালে এনডি ব্লক, বেড়াবেড়িয়া প্রভৃতি এলাকা জলে ডুবে যায়। নেই শহরের জঞ্জাল ফেলার নির্দিষ্ট জায়গা। যত্রতত্র ময়লা ফেলায় দূষণ এ শহরের ‘অলঙ্কার’। বাড়ির জঞ্জাল, বাজারের বর্জ্য সবই পড়ে রাস্তার ধারে। বাড়ি বাড়ি জল সরবরাহের সমস্যা অত্যন্ত প্রকট। খালোড় গ্রাম পঞ্চায়েতের কিছু এলাকায় জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতর বাড়ি বাড়ি জল সরবরাহ করলেও বাকি এলাকা তার নাগাল পায় না।
বাগনান ১ পঞ্চায়েত সমিতির কর্তার অবশ্য দাবি, নিকাশি নালাগুলি নিয়মিত সাফ হয়। এতে শহরে জল জমে যাওয়ার সমস্যা অনেকটাই কমেছে বলে দাবি পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি নয়ন হালদারের। পর্যায়ক্রমে শহরের অন্য জায়গাতেও বাড়ি বাড়ি জল প্রকল্প চালু হবে বলে নয়নবাবু জানান। তিনি বলেন, “শহরের বিভিন্ন এলাকায় যাতে আলো জ্বলে তার ব্যবস্থাও করছি।” জঞ্জাল ফেলার জায়গা ঠিক করা হচ্ছে বলে বাগনান ১ ব্লক প্রশাসন সূত্রে জানানো হয়েছে।
কিন্তু শহর যে ভাবে বাড়ছে তাতে পঞ্চায়েত এই সব সমস্যার সমাধান কতটা করতে পারবে সে বিষয়ে ঘোর সংশয়ে বাসিন্দারা। প্রশান্তবাবু বলেন, “পঞ্চায়েতের মাধ্যমে উন্নয়নের প্রধান বাধা টাকার অভাব। একমাত্র পুরসভায় পরিণত হলেই অনেক টাকা অনুমোদন করে পুর ও নগরোন্নয়ন বিভাগ।”
প্রসূনবাবু ও বিভাসবাবু বলেন, “বয়স্ক মানুষেরা পার্কের অভাবে প্ল্যাটফর্মে বসে সময় কাটান। ভাল একটা পার্ক গড়া দরকার। একটা উন্নত সংস্কৃতিকেন্দ্র নেই। পুরসভা হলে এইসব খাতে বেশি টাকা আসবে। অন্য চেহারা পাবে এই শহর।”
কী বলছে জেলা প্রশাসন?
হাওড়া জেলা প্রশাসনের এক কর্তার কথায়, “বাগনান-সহ জেলায় যে পাঁচটি পুরসভা গঠনের কথা বলা হয়েছে, তার প্রাথমিক প্রস্তুতি চলছে। বিভিন্ন গ্রাম পঞ্চায়েত থেকে তাঁরা যে পুরসভায় পরিণত হতে চান সেই সংক্রান্ত নথি জমা নেওয়া হয়েছে। পরবর্তী প্রক্রিয়া এখনও শুরু হয়নি।”
দুধের স্বাদ ঘোলে মেটাতে আপাতত এটাই সান্ত্বনা বাগনানের।
(শেষ)
ছবি: সুব্রত জানা।
কেমন লাগছে আমার শহর? নিজের শহর নিয়ে আরও কিছু বলার থাকলে আমাদের জানান।
ই-মেল পাঠান district@abp.in-এ। subject-এ লিখুন ‘আমার শহর বাগনান’।
ফেসবুকে প্রতিক্রিয়া জানান: www.facebook.com/anandabazar.abp
অথবা চিঠি পাঠান ‘আমার শহর’, হাওড়া ও হুগলি বিভাগ, জেলা দফতর,
আনন্দবাজার পত্রিকা, ৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা ৭০০০০১ ঠিকানায়।